কমরেড মানিক মুখার্জীর জীবনাবসান

১৬ অক্টোবর রাতে জীবনাবসান ঘটল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা কমরেড মানিক মুখার্জীর।

ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি দলের টালা সেন্টারে অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের চিকিৎসক কর্মীরা দ্রুত পৌঁছে চিকিৎসা শুরু করেন এবং তাঁকে ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর প্রাণ রক্ষা করা যায়নি। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়া মাত্রই দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দলের নেতা, কর্মী, সমর্থক, দরদিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সমাজমাধ্যমে তাঁরা গভীর শোক প্রকাশ করেন। বহু বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মীও শোক  জ্ঞাপন করেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যের নেতা কর্মীরা যাতে তাঁর শেষযাত্রায় উপস্থিত হতে পারেন সেজন্য তাঁর দেহ হাসপাতালের মর্চুয়ারিতে রাখা হয়।

১৮ অক্টোবর কমরেড মানিক মুখার্জীর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল কলকাতায় ৪৮ লেনিন সরণিতে দলের কেন্দ্রীয় অফিসে রক্তপতাকায় মোড়া তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয়। শত শত মানুষ সমবেত হন প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে।

প্রথমেই মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রয়াত কমরেড মানিক মুখার্জীর দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা কমরেড প্রভাস ঘোষ। একে একে পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য ও উপস্থিত পলিটবুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা মাল্যদান করেন। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের পার্টি নেতৃবৃন্দও মাল্যদান করেন। বিভিন্ন ফ্রন্ট, ফোরামের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃবৃন্দ, ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষক সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা জানান। সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতারাও শ্রদ্ধা জানান। শত শত মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণে সঙ্গীত ও আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিবেশন করে দলের সঙ্গীত গোষ্ঠী। সমবেত কমরেডদের ‘লাল সেলাম’ ধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রয়াত নেতার শেষযাত্রা।

তাঁর বিপ্লবী জীবনের ৮৯ বছরের প্রতীক হিসাবে রক্তপতাকা হাতে ৮৯ স্বেচ্ছাসেবক সারিবদ্ধভাবে মরদেহবাহী গাড়ির পাশে দাঁড়ান। নেতৃবৃন্দের সারির পিছনে কমরেডরা গভীর আবেগে আন্তর্জাতিক গানে গলা মিলিয়ে শেষযাত্রায় অংশ নেন। কেওড়াতলা শ্মশানে প্রয়াত নেতার মরদেহের সামনে লাল সেলাম জানান কমরেড প্রভাস ঘোষ, অসিত ভট্টাচার্য সহ নেতৃবৃন্দ ও কয়েকশো কর্মী সমর্থক। গভীর আবেগে কমরেডদের লাল সেলাম ধ্বনির মধ্য দিয়ে সকলে বিদায় জানান প্রয়াত নেতাকে।

২৬ অক্টোবর কলকাতার মহাজাতি সদনে কমরেড মানিক মুখার্জীর স্মরণসভায় হলের সামনে রাখা প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান অসংখ্য মানুষ। হল উপচে যাওয়ায় শত শত মানুষ বাইরে লাগানো মাইকে বক্তব্য শোনেন। মঞ্চে রাখা প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন কমরেড প্রভাস ঘোষ, কমরেড অসিত ভট্টাচার্য সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। কমসোমল বাহিনীর গার্ড অফ অনার এবং কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণ সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার পর সভার সভাপতি কমরেড অসিত ভট্টাচার্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রদ্ধার্ঘ্য। বিভিন্ন দেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শোকবার্তা পাঠ করা হয়।

এরপর কমরেড মানিক মুখার্জীর দীর্ঘ বিপ্লবী জীবনের বিষয়ে আলোচনা করেন কমরেড প্রভাস ঘোষ। সভাপতির সংক্ষিপ্ত ভাষণের পর আন্তর্জাতিক সঙ্গীতে গলা মেলান হলের সকলে।