এন আই ও এইচ : নাগরিক আন্দোলনের জয়

আরও একটি আন্দোলন জয়যুক্ত হল। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও গবেষণার উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ লোকোমোটর ডিসাঅ্যাবিলিটি (এনআইএলডি)-র প্রধান কার্যালয় কলকাতা থেকে কটকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থেকে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হল কেন্দ্রীয় সরকার। কলকাতার এনআইএলডি (আগের নাম এনআইওএইচ) ছাড়াও অস্থি প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাকেন্দ্র আছে দিল্লি ও ওড়িশায়। গত ১৬ আগস্ট এক নির্দেশিকায় কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক এই তিনটির সংযুক্তিকরণ এবং কটকের সংস্থাকে প্রধান আর কলকাতার সংস্থার গুরুত্ব কমিয়ে দিয়ে তার শাখা করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে। সংবাদটি জানামাত্রই প্রতিবাদে এগিয়ে আসে নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার, ব্লাইন্ড পারসনস অ্যাসোসিয়েশন, পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবন্ধী ঐক্যমঞ্চ এবং যে এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত সেই বরানগরের বিশিষ্ট মানুষজন সহ সাধারণ মানুষ।

১৩ সেপ্টেম্বর নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চের আহ্বায়ক প্রাক্তন সাংসদ ডাক্তার তরুণ মণ্ডলের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজ এবং চিকিৎসক চিকিৎসাকর্মীদের এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত হয়। ৪ অক্টোবর বরানগর সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় নাগরিক কনভেনশন। গড়ে ওঠে ‘এনআইওএইচ বাঁচাও নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ’। মঞ্চের নেতৃত্বে চলে ধারাবাহিক আন্দোলন, প্রচার-মিছিল-মিটিং-বিক্ষোভ। ১৫ নভেম্বর প্রবল বর্ষণকে উপেক্ষা করে তিন শতাধিক প্রতিবন্ধী ভাইবোন ও নাগরিকদের উপস্থিতিতে চলে অবস্থান ও রাজ্যপালকে ডেপুটেশনের কর্মসূচি। সংস্থার ডিরেক্টর সহ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।

ধারাবাহিক আন্দোলনের চাপে সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক সম্প্রতি ঘোষণা করেছে অর্থ মন্ত্রকের সুপারিশে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে এক করার সিদ্ধান্ত নিলেও সব প্রতিষ্ঠানে ফাংশানাল অটোনমি বা স্বায়ত্তশাসন বজায় থাকবে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার প্রসার ঘটানো, নতুন নতুন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা তো দূর অস্ত এনআইএলডি-র বাজেট কমিয়ে, প্রতিবন্ধীদের সহায়ক সরঞ্জাম সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলি অনিয়মিত করে, সর্বোপরি স্থায়ী কর্মচারীর পরিবর্তে অস্থায়ী কর্মচারী ও ডাক্তার নিয়োগ করে প্রতিষ্ঠান পরিষেবার মানকে ধীরে ধীরে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবন্ধী আইনের পরিবর্তন করেছে। এই অবস্থায় সারা দেশে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার সর্বোৎকৃষ্ট এই সংস্থাটিকে শাখা সংস্থায় পরিণত করে গুরুত্ব কমিয়ে দিলে শুধু পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ প্রতিবন্ধী মানুষের অসুবিধা হত তাই নয়, পূর্ব ভারত এমনকি বাংলাদেশ ভুটান নেপাল থেকে আসা প্রতিবন্ধীরাও প্রবল অসুবিধার সম্মুখীন হতেন।

আন্দোলনের এই জয়ে বরানগরের নাগরিক সমাজ সহ যাঁরা প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের সকলকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ডাক্তার অমিত ধবল বলেন, অবিলম্বে সরকারকে ১৬ আগস্টের নির্দেশিকা বাতিলের নোটিশ জারি করতে হবে। যত দিন না এই নির্দেশিকা জারি হচ্ছে তত দিন আন্দোলন চলবে। ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে সরকারি নির্দেশিকা জারির দাবি জানিয়ে মঞ্চের নেতৃত্বে তিন শতাধিক নাগরিকের এক বিশাল পদযাত্রা সিঁথি মোড় থেকে প্রতিবন্ধী হাসপাতাল ক্যাম্পাস পর্যন্ত যায়।