ঋত্বিক ঘটক র চোখে রাশিয়ার সমাজতন্ত্র

মানুষ সম্পর্কে উদাসীনতা সমাজতন্ত্র বরদাস্ত করে না

      ঋত্বিক ঘটক                                       

আমি শিল্পের ভাষা শিখেছি আইজেনস্টাইনের থেকে৷ আমি সম্পূর্ণভাবে আইজেনস্টাইনের বই পড়ে ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে ছবিতে আসি৷ ১৯৫২ তে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যে নিয়ো–রিয়েলিস্টিক ছবিগুলি দেখানো হয়েছিল সেগুলো আমাদের ডেফিনিটলি খুব মোহিত করেছিল৷

আইজেনস্টাইনের প্রথম ছবি ‘স্ট্রাইক’৷ এ দেশে কেউ দেখেছে কি না জানি না৷ তারপর এল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি৷ বলব সেটা? ‘ব্যাটলশিপ পোটেমকিন’৷ তার উপরে ছবি আজ পর্যন্ত হয়নি৷ তাতে ওডেসা স্টেপস সিকোয়েন্স–তার উপরে ছবি কেউ কোনও দিন করতে পারবে না৷ আজও পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ফর্ম বলে গণ্য হয়ে থাকে, এবং সেটা সত্যিই তাই৷ ওর উপরের স্তরের কাজ আজ পর্যন্ত কেউ কোথাও করতে পারেনি৷ পুদভকিনের ‘মাদার’ (গোর্কি) তার পাশেই এই দুই শিল্পীর ওই সৃষ্টিগুলি এবং পরবর্তী কর্মকাণ্ড পৃথিবীর সব চিত্রনির্মাতাদের মুখে ভাষা দিয়েছে৷ এই দু’জন না থাকলে ছবি ‘ছবিই’ হত না৷

তখন ছিল ঠিক বিপ্লব পরবর্তী যুগ৷ জিনিসপত্তর কিছু পাওয়া যেত না৷ মস্কোর পথে পথে বরফ উত্তরণ করে এঁদের স্টুডিয়োতে যেতে হত৷ কী যে কষ্টে এঁরা জিনিসপত্র সংগ্রহ করতেন, সে আমরা ভাবতেও পারি না৷ তবু তাঁরাই ছবির জগতের ভিত্তি স্থাপন করে গেলেন৷ …

১৯২৫ সালে আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবি দিয়ে, পরে ‘ব্যাটলশিপ পোটেমকিন’ দিয়ে সোভিয়েত বাস্তবতার সূত্রপাত৷ সোভিয়েত বাস্তবতার জাত হল বিপ্লবী৷ ছবিটাই শুধু ওঁদের মাথা ঘামাবার ব্যাপার নয়৷ মানুষ সম্পর্কে উদাসীনতা ওরা বরদাস্ত করে না৷ সেটা শুধু চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেই সত্য নয়৷ যদি তা শিল্পে হয়ে ওঠে, ভাল মানুষকে জাগাও৷ স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে লড়তে শেখাও সর্বত্র৷ এটাই হল সোভিয়েত বাস্তবতার মোদ্দা ব্যাপার৷ …গোর্কি এই বিষয়ে যা বলেছেন, তাই বোধহয় শেষ কথা৷ মানুষের সঙ্গে যোগ, মানুষকে ভালবাসা, মানুষের মধ্যে অনন্তকে প্রত্যক্ষ করা– এই হচ্ছে শিল্পীর সারাজীবনের কাম্য এবং সাধনা৷