স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, ছাঁটাই বন্ধ, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সিকিমে ধারাবাহিক আন্দোলন

স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন সহ জনজীবনের নানা সমস্যা সমাধানের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে সিকিম প্রোগ্রেসিভ ইউথ ফোরাম৷ পশ্চিম সিকিম জেলার সদর গেজিং হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির দাবিতে বিগত একবছর ধরে ফোরামের নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে৷ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, ব্যাপক প্রচার, মিছিল, হাসপাতাল সুপারের দপ্তরে বিক্ষোভ ইত্যাদি হয়৷ এরপর গ্যাংটকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তর ঘেরাও করার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী তিন মাসের মধ্যে সমস্ত দাবি পূরণ করার লিখিত আশ্বাস দেন৷ কিন্তু এক বছরে বেশিরভাগ দাবিই কর্তৃপক্ষ পূরণ করেনি৷ এই অবস্থায় গত ২০ জানুয়ারি এস ইউ সি আই (সি) সিকিম রাজ্য প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড ভানুভক্ত শর্মা, কমরেড প্রকাশ পরাজুলি, কমরেড রুপেন কার্কী প্রমুখের নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্র–যুব গেজিং থেকে গ্যাংটক পদযাত্রা শুরু করে৷ তিন দিন ধরে এই পদযাত্রা দীর্ঘ পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে গ্যাংটক পৌঁছায়৷ রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন এবং তাঁদের অভিনন্দন জানান৷ ২৩ জানুয়ারি মিছিল গ্যাংটক পৌঁছালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরের পাশে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়৷ প্রবল ঠান্ডা এবং বৃষ্টির মধ্যে খোলা জায়গায় অবস্থান টানা চারদিন চললেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখা পর্যন্ত করেননি৷ অবস্থান চলাকালীন আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে বার্তা পাঠান লোকসভার প্রাক্তন সদস্য ডাঃ তরুণ মন্ডল৷ মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক ডাঃ বিজ্ঞান বেরা ফোনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন৷ এরপর গ্যাংটকে পথ অবরোধ করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখা করেন৷ তিনি দাবি পূরণের  প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়৷ পরে কর্তৃপক্ষ কয়েকটি দাবি পূরণ করেন৷

সিকিমে এ ধরনের গণআন্দোলনের প্রায় কোনও ঐতিহ্যই ছিল না, যার ফলে এই আন্দোলন রাজ্যে একটা নতুন ধরনের গণআন্দোলনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে৷ এস পি ওয়াই এফের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজ্যের বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের আন্দোলন শুরু হয়ে যায়৷

তিনটি ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানির অস্থায়ী শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে ফেটে পড়েন৷ অস্থায়ী স্কুলশিক্ষকরা তাঁদের মাইনে বাড়ানো এবং চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন৷ ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁরা গ্যাংটকে আইন অমান্য করেন৷ ফলে রাজ্য সরকার অস্থায়ী শিক্ষকদের মাইনে বাড়ানো এবং নিয়োগ স্থায়ী করার দাবি আংশিকভাবে মেনে নিতে করতে বাধ্য হয়৷ আন্দোলনের এই জয় মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ এই আন্দোলন দুর্বল করতে ১৯ ফেব্রুয়ারি সিকিম পুলিশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং অস্থায়ী শিক্ষক কমরেড প্রকাশ পরাজুলি সহ আরও চারজন আন্দোলনকারী শিক্ষককে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করে৷ পরের দিন কয়েকশো অস্থায়ী শিক্ষক থানায় এবং কোর্টে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালে তাদের জামিন দিতে বাধ্য হয়৷ বাধা যাই আসুক সংগঠকরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৩১ সংখ্যা)