স্বচ্ছ বিজেপি

কথায় বলে, যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ৷ লঙ্কায় গেলেই রাবণ হয় কি না, সে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে৷ রামায়ণের রামচন্দ্র লঙ্কায় গিয়েও রাবণ হননি৷ এমনকী হনুমানও রাবণ হননি৷ সে যাই হোক, পশ্চিমবঙ্গে–র বিজেপি নেতারা কিন্তু লঙ্কায় যাওয়ার আগেই রাবণ হয়ে বসে আছেন৷

মুর্শিদাবাদে রান্নার গ্যাসের বরাত পাইয়ে দেওয়ার জন্য নিজেদের দলেরই বেশ কিছু লোকের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে সংঘ–পরিবারের বড় বড় নেতারা৷ এর আগে সরকারি ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকাও অবাধে লুঠ করার স্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে৷ বিজেপির সংশ্লিষ্ট লোকেরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ গ্যাস–দুর্নীতি কাণ্ডে দলের সভাপতিও যুক্ত৷গ্যাসের বরাত কাদের দেওয়া হবে সে বিষয়ে তাঁর সুপারিশ ছিল৷ বিজেপির সভাপতি বলেছেন, তাঁর কোনও দোষ নেই৷ তাঁদের দল এসব কাজ করে না৷

সভাপতি মশাইয়ের এই কথা খবরের কাগজে পড়ে ট্রেনের এক ডেইলি প্যাসেঞ্জার ফিক করে হেসে ফেললেন৷ সম্ভবত, ওঁনার মনে পড়ে যাচ্ছিল বিজেপির গুণধর সব নেতা–মন্ত্রী–এমএলএ– কথা৷ নীরব মোদি, মেহুল চোক্সি, বিজয় মাল্য, জয় সাহ– এই সব জাত–খেলুড়েদের কি চেনেন না দিলীপবাবু? ইয়েদুরাপ্পাকে চেনেন কি? ইয়েদুরাপ্পা মশাই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির সভাপতি হিসাবে বেআইনি খনি মাফিয়া–সহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন৷ শিল্প বা আবাসনের জন্য নিজের আত্মীয়দের জমি পাইয়ে দিয়েছেন অন্যায় ভাবে৷ ২০১২ সালে প্রয়াত বঙ্গারু লক্ষ্মণ বিজেপির সভাপতি থাকাকালীন ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন গোপন ক্যামেরায়৷ আরেক নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গত বছর তাঁর মেয়ের স্বর্ণ ভারত ট্রাস্টকে দু’কোটি টাকার ট্যাক্স মকুব করিয়ে দিয়েছেন আইন ফাঁকি দিতে৷

২০১৪ সালের নভেম্বরে ইনকাম ট্যাক্স কর্তারা সাহারা গ্রুপের দপ্তর থেকে যে ঘুষের তালিকা পেয়েছেন তাতে মোদিজির নামে কত টাকা লেখা ছিল? চল্লিশ কোটি৷ মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নামে লেখা ছিল দশ কোটি৷ এ–রকমই তালিকা উদ্ধার হয়েছে বিড়লার দপ্তরে, পানামা পেপার্সের দপ্তরে৷ জনগণ তো জানতে পারে দু–একটাই৷ ভেতরের লোক দিলীপবাবু নিশ্চয়ই আরও বহু খবর দিতে পারবেন!

আরএসএস–বিজেপির ভান্ডারে এরকম রত্নসম্ভারের কোনও অভাব হবে না৷ তার ওপর অন্যান্য বিভিন্ন ভোটবাজ দলের আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা, যাঁরাই ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে না পেরে আইনি বেকায়দায় পড়ছেন, তাঁরা সব এসে ভিড়ছেন বিজেপিতে৷ নারদ স্টিং অপারেশনের জালে পড়া মুকুল রায়কে তো লোকে জানেই৷ তৃণমূলের এই হেভিওয়েট নেতা শাস্তি এড়াতে গত বছর নভেম্বরে বিজেপিতে গিয়েছেন৷ তার আগের মাসে নিজের ছেলে অনিল শর্মাকে বিজেপিতে ঢুকিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী এবং টেলিকম কেলেঙ্কারির মূল হোতা সুখ রাম৷ সকলেরই মনে আছে, অনিল শর্মা কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী ছিলেন৷ গৌহাটি জল কেলেঙ্কারিতে প্রধান অভিযুক্ত আসামের কংগ্রেস নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা ২০১৫ সালের আগস্টে বিজেপিতে ভিড়েছেন৷ অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু নানা দুর্নীতি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পেতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সদলবলে বিজেপিতে আস্তানা গেড়েছেন৷ মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে জমি দুর্নীতির দায় থেকে গা বাঁচাতে সোজা ঢুকেছেন বিজেপিতে৷ বিজেপিই এখন যত দুর্নীতিবাজদের সুইট হোম৷ রতনরা রতনকে চিনছে সহজেই৷   

যদিও, চুরি ডাকাতি জালিয়াতি চালিয়াতি করে পাবলিকের টাকা লুটে খাওয়াই শুধু নয়, আরএসএস–বিজেপির গুণধরদের আরও অসংখ্য কুকীর্তি প্রতিদিনই রচিত হয়ে চলেছে৷ দিলীপবাবুর নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১২ সালে বিধানসভার মধ্যেই সিসিটিভিতে পরপর ধরা পড়েছিলেন কর্ণাটক ও গুজরাতের বিধায়করা৷ অধিবেশন চলাকালীন তাঁরা দিব্যি চেয়ারে হেলান দিয়ে অশ্লীল ভিডিও দেখছিলেন৷ এইসব নেতারাই তো আজ দেশময় ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইত্যাদি নিয়ে ভাষণ দিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ ধর্ম শেখাচ্ছেন৷ ধর্মের নামে মানুষকে কীভাবে জানোয়ার বানানো যায় তার ট্রেনিং দিচ্ছেন৷ স্বচ্ছ প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ দলই বটে!

(৭০ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ২৯ জুন, ২০১৮)