সিঙ্গুর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য কর্পোরেট পুঁজিপতিদের তোয়াজ করার উদ্দেশ্যে

ফাইল চিত্র। সিঙ্গুরের কৃষক প্রতিরোধ সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে

সিঙ্গুর আন্দোলন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘টাটাকে আমি তাড়াইনি, সিপি(এম)-ই তাড়িয়েছে…”। এই পরিপ্রেক্ষিতে এস ইউ সি আই (সি)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ২০ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন,

ইতিহাসের পরিহাস হল, বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জয় অর্জিত হলেও তাকে ভুলিয়ে দিতে ইতিহাসের সিলেবাসে স্থান না দিয়ে কোর্টের রায়ে সিঙ্গুরে চাষিদের জমি ফিরে পাওয়াকে নিজের কৃতিত্ব বলে জাহির করতে অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস সিলেবাসে তা অন্তর্ভুক্ত করে ছাত্র-ছাত্রীদের যা শেখাতে চেয়েছেন, তা আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়কে নিজেকেই অস্বীকার করতে হচ্ছে। এই সুযোগে সিপিএম তাদের অতীতের টাটা সহ পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষার জনবিরোধী পদক্ষেপ– যার বিরুদ্ধে বাংলা জুড়ে তীব্র গণবিক্ষোভ গড়ে উঠেছিল, তাকে আড়াল করতে চাইছে এবং তাদের অত্যাচারী ভূমিকা যেন সঠিকই ছিল, তা বোঝাতে চাইছে।

এ রাজ্যের সচেতন মানুষ জানেন যে, সিঙ্গুরের আন্দোলন কখনওই শিল্পবিরোধী ছিল না। তিন থেকে পাঁচফসলি জমির অধিকারী ১৫ হাজার চাষির সর্বনাশ করে মাত্র এক হাজার মানুষের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাস্তবে ২০০৬ সালে সিপিএম সরকার সিঙ্গুরের অত্যন্ত উর্বর এক হাজার একর কৃষিজমি টাটাদের উপঢৌকন দিতে চেয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের কৃষকরা ‘সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’ গঠন করে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই কমিটি কোনও দলীয় কমিটি ছিল না। সেদিন সিপিএম সরকার রাজকুমার ভুলকে হত্যা করা, তাপসী মালিককে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারা সহ পুলিশ এবং গুন্ডাবাহিনী দিয়ে অত্যাচার চালিয়ে সিঙ্গুরের জমির দখল নেয়।

একই প্রক্রিয়ায় সিপিএম নন্দীগ্রামের জমিও দখল করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি মাটি কামড়ে পড়ে থেকে বীরত্বপূর্ণপ্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলে, বহু রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে আন্দোলনকে সফল করেছিল। ইতিমধ্যে টাটা কোম্পানি এই রাজ্যের সিপিএম সরকারের কাছ থেকে যা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার চাইতে বেশি সুযোগ-সুবিধা এবং বেশি জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তাদের নিজেদের স্বার্থে সিঙ্গুরের জমি নিজেদের দখলে রেখেই গুজরাটে চলে যায়। যদিও ন্যানো গাড়ির কারখানা সেখানেও বাজার না পাওয়ায় টাটাকে তা শেষ পর্যন্ত বন্ধ করতে হয়।

এই সত্য কাহিনী বলতে আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভীত। কারণ, ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গত ১১ বছর ধরে অবাধে অপশাসন, ঘুষ, দুর্নীতি, খুনোখুনি, কাটমানির কারবার চলার ফলে জনগণের কাছে তিনি ও তাঁর সরকার ধিক্কৃত। তাই আজ কর্পোরেট মালিকদের সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ক্ষমতায় থাকার তিনি আর কোনও পথ দেখতে পাচ্ছেন না। আদানি, টাটা সহ সমস্ত কর্পোরেট মালিকরাই আজ তাঁর অত্যন্ত আপনজন। তাই শিলিগুড়িতে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের না তাড়ানোর দাবি আসলে তাঁর সরকারের জনগণকে লুণ্ঠনকারী টাটা সহ কর্পোরেট পুঁজিপতিদের তোয়াজ করার মানসিকতারই প্রকাশ।