শুধুই বন্ধু নয়, কমরেড

আমার এক কলেজবেলার বন্ধু কখনও সরাসরি রাজনীতি না করলেও পারিবারিক সূত্রে ছিল বাম সরকারের সমর্থক৷ ওই সরকারের সমালোচক হিসাবে আমার সঙ্গে ওর নানা সময়ে বহু তর্ক–বিতর্ক হয়েছে৷ এমনকী সিঙ্গুর–নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিয়েও প্রথম দিকে ওর বিস্তর প্রশ্ন ছিল৷ ধারাবাহিক আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সে সব প্রশ্নের মীমাংসা হয়েছে৷ তখন থেকেই ও সংগ্রামীবামপন্থী দল হিসাবে এসইউসিআই (সি)–কে নানা ভাবে সাহায্য–সমর্থন করে আসছে৷

এবারের লোকসভা নির্বাচনের তহবিলে চাঁদা দেওয়ার কথা ফোনে জানালাম ওকে৷ ও বলল, ‘সময় করে একদিন বাড়িতে বা অফিসে চলে আয়৷’ পরদিন আমি গেলাম ক্যানিং স্ট্রিটের কাছে ওর বিমা কোম্পানির ব্রাঞ্চ অফিসে৷ ওর থেকে চাঁদা নিয়ে চলে আসব, এই ছিল পরিকল্পনা৷ কিন্তু অফিসে ঘটল অন্য ঘটনা৷

যাওয়ার পর দু–চারটে সাধারণ কথাবার্তার পর বন্ধুটি এক হাজার টাকা চাঁদা দিল৷ তারপর একে একে ওর প্রত্যেক সহকর্মীকে বলতে শুরু করল, ‘এই, আমাদের ইলেকশন ফান্ডে কিছু চাঁদা দিন তো৷’ প্রথম যাঁকে বলল সে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল, ‘ইলেকশন ফান্ড আপনি পার্টি করেন নাকি কোন পার্টি?’ বন্ধুটি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলল, ‘একটা পার্টিই তো মানুষের জন্য লড়ে৷ এসইউসিআই৷ দিন, একটু বেশি করে চাঁদা দিন৷ রাজ্যে সব কটা সিটে আমরা লড়ছি৷’ সহকর্মীটি একশো টাকা দিলেন৷ এভাবে আরও চার জন পঞ্চাশ–একশো করে দিলেন৷ তার পর এলেন ব্রাঞ্চের ম্যানেজার৷ বামপন্থীদের আন্দোলন নিয়ে নিজের কিছু অনুভূতির কথা বললেন এবং দুশো টাকা চাঁদা দিলেন৷

ফেরার পথে ভাবছিলাম, নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দলের কত সমর্থক, কত দরদি৷ কিন্তু এরকম সংগঠকও যে রয়েছে, সে ধারণা আমার ছিল না৷

সুব্রত দাস

কলকাতা–৭৭

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪০ সংখ্যা)