রেল এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেসরকারিকরণ রুখতে আন্দোলনে নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ

‘নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ’ দাবি তুলল রেল সহ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলিকে বেসরকারি মালিকদের হাতে বেচে দেওয়া চলবে না। দাবি উঠল জনবিরোধী কৃষি আইন, শ্রম সংস্কার আইন বাতিল করতে হবে, খাদ্য এবং অত্যাবশকীয় পণ্যের যথেচ্ছ মজুতদারির ছাড়পত্র দেওয়া চলবে না। ১২-১৫ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ। এই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিটি জেলাতেই সাধারণ নাগরিকদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। চারদিন ধরে জেলা, মহকুমা স্তরে প্রশাসনের কাছে ডেপুটেশন, বিক্ষোভ, অবরোধ, মিছিল নানা কর্মসূচি পালিত হয়।

১৫ অক্টোবর কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিলে নেতৃত্ব দেন নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চের আহ্বায়ক প্রাক্তন সাংসদ ডাক্তার তরুণ মণ্ডল। তাঁর নেতৃত্বে চারজনের প্রতিনিধি দল শিয়ালদহের ডিআরএমের সঙ্গে দেখা করে রেল বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। রেল যাত্রীদের নানা দাবি সহ, হকার, ভেন্ডর, পরিচারিকা, নির্মাণ কর্মীদের কম খরচের মান্থলি ইত্যাদি অধিকার চালু রাখার দাবি জানায় প্রতিনিধি দল। স্মারকলিপির বেশ কিছু বিষয়ের সাথে ডিআরএম সহমত পোষণ করেন। স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার সময় রেল কর্মীরাও প্রতিনিধি দলকে সমর্থন করেন। শিয়ালদহ কোলে মার্কেটের সামনে প্রতিবাদ সভায় ডাক্তার তরুণ মণ্ডল সহ বিভিন্ন বক্তা কেন্দ্রীয় সরকারের এই আক্রমণের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। রাজ্যের নানা স্থান থেকে আসা সবজি বিক্রেতা, হকার, দোকানদার, গাড়ি চালক, ভ্যান চালক সহ নানা স্তরের মানুষ এগিয়ে এসে মঞ্চের সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কারণ, রেল বেসরকারি হাতে গেলে ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়বে, হকারদের উপর নানারকম চার্জ ও শর্ত চাপবে। উঠে যাবে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ছাড়, প্রতিবন্ধী ছাড়। বন্ধ হয়ে যাবে জনস্বার্থে ভরতুকি দিয়ে টিকিটের দাম কমানোর বিষয়টি। বিলুপ্ত হবে বহু পদ। কমে যাবে নিয়োগ। ফলে এ এক সর্বনাশা আক্রমণ।

রেলের বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে ডিআরএম-কে স্মারকলিপি

 

রেলের বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে ১৫ অক্টোবর শিয়ালদহে পূর্ব রেলের ডিআরএম-কে নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চের পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। চারজনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মঞ্চের আহ্বায়ক ডাঃ তরুণ মণ্ডল। ডিআরএম মঞ্চের বক্তব্য রেলমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

ওই দিন কলকাতার লেক মার্কেট থেকে বালিগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত মিছিল হয়। বালিগঞ্জে স্টেশন মাস্টারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। জনবিরোধী বিলের কপিতে অগ্নিসংযোগ করেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও মঞ্চের রাজ্য কমিটির সদস্য শান্তি ঘোষ। প্রতিবাদ সভায় বহু মানুষ অংশ নেন। কলকাতায় আর একটি মিছিল হয় জিঞ্জিরা বাজার থেকে ব্রেস ব্রিজ স্টেশন পর্যন্ত। ব্রেস ব্রিজের স্টেশন মাস্টারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্টেশনে প্রতিবাদ সভায় স্থানীয় বস্তিবাসী শ্রমজীবী মহিলারা খুবই উৎসাহের সাথে যোগ দেন।

প্রতিবাদ মিছিল এবং বিক্ষোভ হয় কোচবিহার, কৃষ্ণনগর, শিলিগুড়ি সহ বিভিন্ন জেলা শহরে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানা স্টেশন সহ বহু জায়গায় বিক্ষোভ হয়।

নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ দলমত নির্বিশেষে সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষের কাছে ডাক দিয়েছে ব্যাপক জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার। এই কাজে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ এবং গণকমিটি গঠন শুরু হয়েছে।

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ৯ সংখ্যা_১৭ অক্টোবর, ২০২০)