মূর্তি ভাঙা আরএসএস–বিজেপির হীন রাজনীতিরই নিদর্শন

কোল্লাম, কেরালা

ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তাদের অপ্রত্যাশিত জয় আরএসএস–বিজেপির অসহিষ্ণুতার মাত্রাটিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মূর্তিভাঙার উন্মত্ততায়৷ ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি বুলডোজারের আঘাতে ভেঙে ফেলা হল৷ ‘লেনিন একজন জঙ্গি ছিলেন’ – এরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করে বিজেপি নেতারা এহেন দুষ্কর্মে ইন্ধন জোগালেন৷ যার ফলে উন্মত্ত অসহিষ্ণুতার আগুন ছড়িয়ে পড়ল অন্যান্য রাজ্যেও৷ উত্তরপ্রদেশের মেরঠে ভাঙা হল আম্বেদকরের মূর্তি৷ তামিলনাড়ুতে আক্রান্ত হল পেরিয়ারের মূর্তি৷ ‘জার্মানরাই একমাত্র সভ্য জাতি, বাকি সবাই বর্বর’ – হিটলারের এই নীতি অনুসরণে এদেশেও হিন্দুত্ববাদের জিগির তুলে বিজেপি–আরএসএস দলিত এবং অহিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বারবার আক্রমণ চালাচ্ছে৷ মোদি শাসনে যার মাত্রা বহুগুণ বেড়েছে৷

নোট বন্দি ও জিএসটি চালুর বছর গড়াতে না গড়াতেই দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে বিদেশি পুঁজির অবাধ অনুপ্রবেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ৷ নীরব মোদি–ললিত মোদি–বিজয় মালিয়া সহ বিজেপি ঘনিষ্ঠ একদল ধনকুবের ব্যাঙ্কের আমানত লুঠ করে বিদেশে পালালো, দেশজুড়ে কৃষক আত্মহত্যা, কালো টাকা উদ্ধারের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির স্বরূপ প্রকাশ এবং এর ফলে একের পর এক রাজ্যে উপনির্বাচনে এবং পুরভোটে বিজেপির পরাজয়–এমন হতাশাজনক পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দিতে ত্রিপুরার সাফল্যকে বিরাট করে তুলে ধরার সাথে সাথেই উগ্র অসহিষ্ণুতা দিয়ে তারা সমস্ত সুস্থ চিন্তা, ভিন্ন মতকে মুছে দেওয়ার ফ্যাসিবাদী রাস্তা নিল৷ কিন্তু তারা ভাবতে পারেনি এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে এমন করে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে৷ ঝড়ের মুখে বেসামাল হলেন বিজেপি নেতারা, বাধ্য হলেন পিছু হটতে৷ ত্রিপুরায় দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও সিপিএম সেখানকার মানুষের বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, অনুন্নয়ন সহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে যে বিকল্প পথ দেখাতে পারেননি এখন তাদের দলীয় বিশ্লেষণে তারা তা স্বীকারও করছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের মতো সেখানেও দীর্ঘদিনের অপশাসন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল৷ সিপিএমের এই জনবিরোধী রাজনীতিকে দেখিয়ে বিজেপি–আরএসএস জনমনে মার্কসবাদ–লেনিনবাদ বিরোধী মানসিকতা সৃষ্টি করার অসৎ উদ্দেশ্যেই মহান লেনিনের মূর্তি ভাঙার অভিযান চালায়৷

সালেম, তামিলনাড়ু

কিন্তু অত্যন্ত আশার কথা, আরএসএস–বিজেপির অন্যান্য ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের মতোই মূর্তিভাঙার এই অসহিষ্ণুতার রাজনীতিকেও এদেশের চিন্তাশীল বিবেকবান মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এর আগেও দলিতদের উপর নৃশংস আক্রমণ, মানুষের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের উপর সরকারি ফরমান জারি, ইতিহাসের বিকৃতি ও অবৈজ্ঞানিক ব্যাখার বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি উগ্র হিন্দুত্ববাদকেই জাতীয়তাবাদ হিসাবে তুলে ধরার অনৈতিহাসিক অন্ধ উগ্র মানসিকতার জন্ম দেওয়ার বিরুদ্ধে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ এর জন্য কালবুর্গী, দাভোলকার, পানেসর এবং গৌরী লঙ্কেশের মতো সাহসী সাংবাদিক ও যুক্তিবাদী মানুষদের প্রাণ দিতে হয়েছে৷ এই ধরনের অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি খেতাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি৷

ভোটসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলি যে পেশির জোর, টাকার থলির দাপটের ভরসাতেই চলে তা আসলে এই দলগুলির রাজনীতিতে আদর্শহীনতা  তথা দেউলিয়াপনার প্রতিফলন৷ লেনিন দরিদ্র মানুষের শোষণমুক্তির দিশারি৷ তাঁর মূর্তি ভাঙার দ্বারা মার্কসবাদ–লেনিনবাদের মতো মহান বৈজ্ঞানিক আদর্শকে বিশ্বের শোষিত মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা যায় না, অতীতেও যায়নি৷ এই আদর্শের অমোঘ অস্ত্রই সমগ্র বিশ্বে শোষণমুক্তি ঘটাবে৷