মন্ত্রীর মুখে কেন ‘ডু ইট নাউ’

মন্ত্রীমশাই হুঙ্কার ছাড়লেন, ‘ডু ইট নাউ’৷ বকেয়া সব কাজ এখনই করে ফেলুন৷ জমে থাকা সব ফাইল দ্রুত ছেড়ে দিন৷ শুনে তো দেশের মানুষ থ৷ এ কেমন কথা এমন কথা কোনও মন্ত্রীর মুখে শুনেছেন বলে তো মনে করতে পারছেন না কেউ৷ একটা রেশন কার্ড করতে গেলে ঘুরে ঘুরে জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে যায়৷ ঘুষ না দিলে সরকারি দপ্তরে কাজ বের করতে বছর কাবার৷ তবে কি যুগ পাল্টে গেল

সম্প্রতি রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল রেলবোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তরে গিয়ে এই হুঙ্কার দিয়েছেন৷ তিনি কি দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে রেললাইন পাতার যে ফাইল আটকে আছে সেগুলি ক্লিয়ার করতে বললেন, প্রহরীবিহীন যে হাজার হাজার রেলগেট রয়েছে, যেগুলিতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে শত শত মানুষের মৃত্যু হয় সেগুলিতে প্রহরী নিয়োগের আটকে থাকা ফাইল ক্লিয়ার করতে বললেন, নাকি সিঙ্গল লাইনে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ডবল লাইন করার ফাইল এখনই ছাড়তে বললেন? চেয়ারম্যান জানাচ্ছেন, না, এমন কোনও ফাইলের জন্য রেলমন্ত্রী তাড়া দিচ্ছেন না৷ তিনি তাড়া দিচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট এক শিল্পপতির অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবসার ফাইল ছাড়ার জন্য৷ ইন্টারনেট যোগাযোগের প্রয়োজনে মাটির নিচে এই ফাইবার পোঁতা হয়৷

ও, তাই বলুন৷ দেশের মানুষ ভাবছে কী না কী তা না হলে দেশের আমজনতার জন্য মন্ত্রীর এত তাড়া তাই আবার হয় নাকি কিন্তু চেয়ারম্যান সেই শিল্পপতির ফাইল আটকে রেখেছেন কেন? তিনি জানাচ্ছেন, ফাইলে রয়েছে অনেক অসঙ্গতি– তার প্রযুক্তিগত ছাড়পত্রই নেই৷ সে সব না হলে কী করে ফাইল ছাড়া যাবে? আরে, চেয়ারম্যানও যেমন শিল্পপতির আবার ছাড়পত্র তেনারা হলেন মন্ত্রী–নেতাদের মা–বাপ৷ তাঁদের ফাইল ছাড়পত্রের জন্য আটকে থাকবে? চাকরি চলে যাবে না চেয়ারম্যানের!

যাই হোক, বেঁচে গেছেন চেয়ারম্যান৷ বেঁচেছে তাঁর চাকরিটাও৷ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সাথে দু’বেলা বৈঠক করে ফটাফট ফাইল ছাড়ছেন তিনি৷ কিন্তু ওই ফাইলগুলোর কী হল– আম পাবলিকের কাজে লাগবে যেগুলো?

আরে ছাড়ুন ছাড়ুন৷ আম পাবলিক তো পাতি পাবলিক, শিল্পপতি তো নয়৷ ইলেকশনে খরচা আছে না পাবলিকের বাপের ক্ষমতা আছে সেই এলাহি খরচা জোগানোর৷

পুনশ্চ : এক দশক আগে এক মুখ্যমন্ত্রীর গলায় একবার ‘ডু ইট নাউ’ শুনেছিল এ রাজ্যের মানুষ৷ অনেকেই বুঝতে পারেনি, তিনি ‘এখনই’ কী করতে বলেছিলেন৷ এখন বুঝতে পারছে, তিনি আসলে টাটা আর সালেমদের ফাইলগুলো ছাড়ার কথাই বলেছিলেন৷

(৭০ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা ২২ জুন, ২০১৮)