বিজেপির স্বার্থরক্ষায় এবার নির্বাচন কমিশন ছিল বেপরোয়া

সম্প্রতি বিপুল অর্থব্যয়ে দেশব্যাপী সাত দফার নির্বাচন শেষ৷ ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দেশে দ্বিতীয় বারের জন্য মোদি সরকারের জমানাও শুরু হয়েছে৷ বিগত ৫ বছরে বিজেপি সরকাব় জনবিরোধী নীতি  প্রণয়নের চ্যাম্পিয়ান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে তার প্রভাব পড়ল না কেন? স্বভাবতই সে নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অপ্রত্যাশিতএই বিপুল জয়ের জোয়ার আদৌ কতটা জনমতের প্রতিফলন সরকার পক্ষ ও পুঁজিপতি শ্রেণি নিয়ন্ত্রিত এক শ্রেণির স্তাবক মিডিয়ার জয়োল্লাসের উন্মাদনা কেটে গেলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রশ্নগুলি আরও জোরালো হতে থাকবে৷

এবারের নির্বাচনে যেমন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার খেলার খামতি ছিল না, তেমনই ছিল কর্পোরেট চালিত মিডিয়ার প্রচার ঝড়, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রবলভাবে বিজেপির পক্ষে হাওয়া তোলা৷ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পক্ষপাতহীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা৷ কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশন যেরকম নগ্নভাবে সকল বিধিনিষেধ লঙঘন করে শাসক বিজেপির হয়ে কাজ করেছে, অতীতে তা কখনও দেখা যায়নি৷ 

শাসক বিজেপির সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ বা নিষ্ক্রিয়তা কমিশনের অন্দরেও ভিন্নমতের জন্ম দিয়েছে৷ কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে ভিন্নমত পোষণকারী সেই কমিশনারের বক্তব্য নথিভুক্ত করা হয়নি৷ শাসক বিজেপি দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক প্ররোচনামূলক বক্তব্য, সেনাবাহিনীর নামে ভোট চাওয়ার গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কমিশন নিশ্চুপ থেকেছে৷ বহু ক্ষেত্রেই ধর্ম ও জাত–পাতের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া হয়েছে৷ অথচ কমিশন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি৷

ইভিএম মেশিন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠলেও সব উড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ যে সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে কর্নাটকের পৌরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়৷ এই ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে ছাপ মেরে৷ অথচ লোকসভায় সেখানে বিজেপি জিতেছিল বিপুল শক্তিতে এবং ভোটটা হয়েছিল ইভিএম মেশিনে৷ এই সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে যখন দেখা গেল বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের শতাধিক কেন্দ্রে যেখানে যেখানে বিজেপি হেভিওয়েট প্রার্থীরা জিতেছেন তার বেশিরভাগ জায়গায় প্রদত্ত ভোটের থেকে ইভিএমে গোনা ভোট অনেক বেশি৷ এই ভুতুড়ে ভোট এল কোথা থেকে? বিজেপির হয়ে দেবতারা দিয়ে গেছেন? নির্বাচন কমিশন এর কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়নি৷

সব মিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনের এই অস্বাভাবিক ফলাফলেই প্রমাণ যে ধনকুবের গোষ্ঠী তথা পুঁজিপতি শ্রেণির অঙ্গুলীহেলনে আগেই ঠিক করা ছিল ফল কী হবে৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা)