প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা উঠে আসছে সমস্ত সমীক্ষাতেই

রাজ্য সরকার পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাইমারি স্তরে ফেরানোর কথা ভাবছে৷ অথচ প্রাইমারি স্কুলগুলির বেহাল দশা, যা সর্বজনবিদিত, তার উন্নতিসাধনে কোনও পদক্ষেপ নেই৷ সমস্ত সমীক্ষা বারবার সেই বেহাল দশার প্রমাণ দিয়ে চলেছে৷ সাম্প্রতিক প্রতীচী ট্রাস্টের রিপোর্টও উঠে এল সেই চিত্র৷

রাজ্যে ৮৪৭টি গ্রাম আছে, যেখানে কোনও প্রাথমিক স্কুল নেই৷ বহু প্রাথমিক স্কুলে রয়েছে একজন মাত্র শিক্ষক এবং এ ধরনের স্কুলের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে৷ শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে ২০ শতাংশ স্কুল৷ কোথাও কোথাও ছাত্র–শিক্ষক অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৪০ : ১৷ তার উপরে প্রাক–প্রাথমিক শিক্ষা যুক্ত হয়েছে স্কুলে৷ অথচ তার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ হয়নি৷

শিক্ষাদান ছাড়াও শিক্ষকদের নানা কাজে যুক্ত থাকতে হয়৷ ভোটের কাজ, জনগণনার কাজ , মিড–ডে–মিলের কাজ, শিক্ষা বিভাগের আমলাদের কাছে তদ্বির করার কাজ, সবই করতে হয় শিক্ষকদের, যার ফলে শিক্ষাদান হয়ে ওঠে গৌণ৷ বেশিরভাগ স্কুলে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই, তীব্র গরমে স্বস্তিতে ক্লাস করার জন্য পাখাও নেই৷ পানীয় জলের ব্যবস্থাও অপর্যাপ্ত৷ ফলে গরমের সময় হাঁসফাঁস করতে হয় ছাত্রছাত্রীদের৷ স্কুলের শৌচাগার নিয়মিত সাফাইয়ের ব্যবস্থা নেই৷

সম্প্রতি কলকাতার এক নামী সরকারি স্কুলের অভিভাবকরা স্কুলের শৌচাগারের অসহনীয় অবস্থার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন৷ কলকাতার বুকে নামী স্কুলেই যদি এই অব্যবস্থা চলে, তাহলে হাজার হাজার গ্রামীণ সরকারি স্কুলগুলির অবস্থা সহজেই অনুমেয়৷ পর্যাপ্ত সরকারি অনুদানের অভাবে স্কুলের শিক্ষকদের চাঁদা তুলে সাফাই সামগ্রী কিনতে হয়, ঠিকা সাফাইকারি নিয়োগ, প্রাক–প্রাথমিকের কচিকাঁচাদের সামলানোর জন্য স্থানীয় লোক নিয়োগ, বিদ্যুতের বকেয়া বিল মেটানোর ব্যবস্থা সবই করতে হয়৷ সমীক্ষায় জানা যায় মিড–ডে–মিলের জন্য যেখানে ছাত্র পিছু সাত টাকা সতেরো পয়সা খরচ হয়, সেখানে সরকার দেয় মাত্র চার টাকা তের পয়সা৷ তাই প্রশ্ন ওঠে খাবারের গুণগত মান নিয়ে৷

রিপোর্ট বলছে, শিক্ষা পরিচালনায় শিক্ষক–অভিভাবক ও স্থানীয় মানুষজনদের সাথে আলোচনা করতে হবে৷ প্রথম শ্রেণির একটি শিশুর জন্য বরাদ্দ ৩৫০ পাতার ভারী পাঠ্যবই, যার পাতায় পাতায় রয়েছে নানা অবাস্তব বিষয়৷ ‘আমার বই’ নামে এই বইটি অবৈজ্ঞানিক ও ভুলে ভরা বলে বহু শিক্ষকেরই অভিমত৷

প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিকে শিশুদের বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানকে সাংবিধানিক অধিকার দেওয়ার জন্য আইন হয়েছিল নয় বছর আগে৷ তখনই বলা হয়েছিল এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে৷ কিন্তু আইনে শিক্ষার পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে যে যে কথা বলা হয়েছিল, তা রূপায়ণের জন্য অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, তার কোনও উল্লেখ ছিল না৷ তাই গোটা দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সরকারি ব্যবস্থাটা বেহাল অবস্থাতেই রয়েছে৷ আইনে উল্লেখিত পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকগুলি উপেক্ষিত৷

(৭১ বর্ষ ৪ সংখ্যা ২৪ আগস্ট, ২০১৮)