পি এম কেয়ার্স : প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের অপব্যবহার করে সর্বোচ্চ স্তরের দুর্নীতি

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ২৪ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন,

আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখলাম, দিল্লি হাইকোর্টে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক আন্ডার সেক্রেটারি হলফনামা দিয়ে বলেছেন, ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টারস সিটিজেন অ্যাসিসটেন্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচুয়েশনস’ বা ‘পিএম কেয়ারস ফান্ড’ যা ২০২০-র মার্চ মাসের শেষদিকে গঠন করা হয়, তা কোনও সরকারি তহবিল নয়। সে জন্য এই ফান্ড ‘তথ্যের অধিকার’ আইনের আওতায় পড়ে না এবং সরকারি হিসাব পরীক্ষক ‘কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটরস জেনারেল’ (সিএজি)-র অডিটের এক্তিয়ারের মধ্যেও তা নেই। অথচ ফান্ডতৈরির সময় ঘোষণা করা হয়েছিল, করোনা মহামারিজনিত পরিস্থিতিতে যে কোনও জরুরি বা দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা’-র জন্য ‘সুনির্দিষ্ট জাতীয় তহবিল’ হিসাবে এটা ব্যবহৃত হবে। এই ফান্ডের বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং সরকারের প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল’ থাকা সত্তে্বও নতুন করে এই তহবিল গড়ে তুলতে সাহায্যের জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর সরকার কখনও দেয়নি। বেসরকারি সূত্র থেকে যতটুকু সংবাদমাধ্যম জেনেছে তাতে দেখা যাচ্ছে এর কলেবর ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সরকার যতই বলুক এই ফান্ড কোনও সরকারি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত নয় এবং ব্যক্তিগত উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করছে, এতে প্রাথমিকভাবে জমা পড়া ৯ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকার মধ্যে ৪ হাজার ৩০৮ কোটি টাকাই দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা। সরকারি কর্মচারীদের একদিনের বেতন কেটে ৪৩৯ কোটি টাকা ফান্ডে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রক, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও ব্যাঙ্ক এই ফান্ডে অনুদান দিয়েছে। প্রশ্ন হল, এই দানশীলতার কতটা স্বেচ্ছায় এবং কতটা গোপন আদেশের ফলে সৃষ্ট? একচেটিয়া মালিকরা এবং কর্পোরেট সংস্থার থেকে বেশ বড় অঙ্কের অনুদান এসেছে। বিজেপি সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে পিএম কেয়ারস ফান্ডের অনুদানকে করমুক্ত করে দেওয়ার ফলে এই ফান্ড কায়েমি স্বার্থবাজদের কাছে বিপুল পরিমাণ হিসাব বহির্ভূত টাকা পাচার এবং কর ছাড় পাওয়ার লোভনীয় পথ হয়ে উঠেছে। এই ফান্ডের টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও রকম স্বচ্ছতা নেই।

‘নরেন্দ্র মোদী কেয়ারস’-এর বদলে এই ফান্ডের নাম পিএম কেয়ারস হল কেন? কেন তিনজন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী এই ফান্ডের ট্রাস্টে কর্মকর্তা হিসাবে আছেন? কেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন আন্ডার সেক্রেটারি এই ফান্ড দেখাশোনার জন্য ‘সাম্মানিক’ দায়িত্ব পালন করছেন? কেন ফান্ডের অফিসিয়াল ঠিকানা ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর, সাউথ ব্লক, নিউ দিল্লি’? মারাত্মক মহামারির সুযোগে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলা এবং তারপর তহবিলে কত টাকা এল গেল, তার কোনও হিসাব দেওয়ার দায় অস্বীকার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের অপব্যবহার ছাড়া একে আর কী বলা যায়? সর্বোচ্চ স্তরের দুর্নীতি ছাড়া একে আর কিছু বলা যায় কি?

এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, সমস্ত বিচারেই এই ফান্ডে জমা সমস্ত টাকা সরকারি টাকা, ফলে এর আয়-ব্যয় সরকারি নিয়ম মেনেই হিসাবের আওতায় আসা দরকার এবং এর সমস্ত তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।

সেবার ভেক ধরে প্রকাশ্যে এইভাবে টাকা নয়ছয় করার কাজকে আমরা তীব্র নিন্দা করছি। জনসাধারণের কাছে আমাদের আবেদন, খতিয়ে দেখুন, শাসক একচেটিয়া পুঁজিপতি শ্রেণির দাসত্ববৃত্তি এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিজেপি সরকার এবং তাদের প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এইরকম অপরাধ করে চলেছেন! এই চরম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ধ্বনিত করুন।

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ১০ সংখ্যা ১-৭ অক্টোবর ২০২১