চিটফান্ড ক্ষতিগ্রস্তদের যন্ত্রণা নিয়ে হেলদোল নেই কোনও সরকারের

ফাইল চিত্র

অর্থলগ্নি সংস্থার আবারও একটি প্রতারণার খবর সম্প্রতি সামনে এসেছে। আনুমানিক এক হাজার কোটি টাকার প্রতারণা। ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষ। বারবারই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ২০১৩ সালে সারদা, রোজভ্যালি, অ্যালকেমিস্ট, টোগো গ্রুপ অফ কোম্পানি, প্রয়াগ সহ রাজ্যের ছোট-বড় ৩৫৬টি অর্থলগ্নি সংস্থা আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে লুঠ করেছে। সারা দেশে আনুমানিক ৭ লাখ কোটি টাকা লুঠ করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালের পরে শেয়ার বিক্রি ও ফিক্সড ডিপোজিটের নতুন কৌশলের ফাঁদ পেতে আবার মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে বহু বার চিটফান্ড ক্ষতিগ্রস্তদের সংগঠন ‘অল বেঙ্গল চিটফান্ড সাফারার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি সিবিআই, ইডি, সেবি এবং ইওডব্লিউ-এরও নজরে আনা হয়। কিন্তু কারও পক্ষ থেকেই এই নতুন প্রতারণা রুখতে নূ্যনতম কোনও পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি। করোনাকালে এই জাল এ রাজ্য সহ সারা দেশে বিস্তার লাভ করেছে।

অর্থলগ্নি কেলেঙ্কারির সঙ্গে সমস্ত শাসক দল যুক্ত। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বহু মন্ত্রী, নেতা এতে প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে মদত দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত বহু তথ্য সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নামও এই কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত। ডেলো পাহাড়ের ঘটনা অনেকেরই মনে আছে। সারদা কর্তার জেল থেকে বক্তব্য ও রহস্যজনক লাল ডায়েরির হদিস আজও পাওয়া গেল না। পুলিশ কর্তার গ্রেফতার হলেন না। অনেকেরই আশঙ্কা, গোটা বিষয়টায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের গোপন সমঝোতা রয়েছে।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০১৪ সাল থেকে সিবিআই, সেবি, ইডি সহ এ রাজ্যের সরকারের গঠিত ইওডব্লিউ কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু তাই নয় ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, পুনরায় সরকারে ফিরলে ১২০ দিনের মধ্যে তাঁরা এই সমস্যার সমাধান করবেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের আশ্বাস দিয়েছিলেন। একটি প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য চিটফান্ড সাফারার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ৭ বছর ধরে আন্দোলন চলছে। ২০১৪ সাল থেকে সিবিআই তদন্ত সত্ত্বেও তদন্তের ফল এখনও গভীর জলে। আশঙ্কা, এই দীর্ঘসূত্রতার ফলে স্বাধীনতার পর ঘটে যাওয়া এই বৃহৎ কেলেঙ্কারি হারিয়ে যাবে। বিচার পাবেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। এটাই শাসক দলগুলির পরিকল্পনা। ইতিমধ্যে এ রাজ্যে ৩০০ জনেরও অধিক ক্ষতিগ্রস্ত নিরুপায় মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। আরও হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ শেষ সম্বল হারিয়ে তিলে তিলে মারা যাচ্ছেন। সারা দেশের চিত্র ভয়াবহ। সংগঠনের দাবি, সমস্ত বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। বিপুল সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করুন।

গণদাবী ৭০ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা ৬ মে ২০২২