উচ্চবর্ণবাদী বিজেপির দলিত প্রেমের মুখোশ খুলে গেল

দেশের বিরাট সংখ্যক দলিত অংশের মানুষদের সম্পর্কে বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গিটি ঠিক কী, তা স্পষ্ট হয়ে গেল ‘তফসিলি জাতি–উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইন’ দুর্বল করা এবং তার প্রতিবাদে দলিতদের আন্দোলনে গুলি করে ১১ জনকে হত্যার ঘটনায়৷ সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ, যারা সাধারণভাবে দলিত বলে পরিচিত, কীভাবে যুগ যুগ ধরে উচ্চবর্ণের মানুষদের দ্বারা শোষিত এবং অত্যাচারিত হয়ে আসছে, তা কারও অজানা নয়৷ এদের বিরুদ্ধে হিংসা রুখতে ১৯৮৯ সালে এই আইন তৈরি হয়েছিল৷ তারা আক্রান্ত হলে এই আইনে অভিযুক্তকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করার কথা বলা আছে৷ কিন্তু এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয়, অভিযোগ হলেই গ্রেপ্তারি বা ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে না৷ প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়ার পর তবেই দায়ের করা যাবে এফআইআর৷ সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ হলে গ্রেফতারের আগে নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে৷ আর, কোনও নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাঁকে গ্রেফতারের আগে ডিএসপি পদমর্যাদার কোনও পুলিশ আধিকারিককে দিয়ে তার তদন্ত করাতে হবে৷ বলা বাহুল্য এর ফলে দলিতদের উপর আক্রমণ আরও বাড়বে৷

এমনিতে বিজেপি শাসনে নিম্নবর্ণের মানুষের উপর অত্যাচার বেড়ে চলায় তাঁদের ক্ষোভ বাড়ছিল৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় সেই ক্ষোভের বারুদে আগুন লাগায়৷ দলিত সংগঠনগুলি ২ এপ্রিল ভারত বনধের ডাক দেয়৷ বনধ রুখতে রাজ্যে রাজ্যে বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সরকার ব্যাপক দমন–পীড়ন চালায়৷ ১১ জন নিহত হন৷ বহু মানুষকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের নামে যথেচ্ছ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়৷

এই ঘটনা দেখিয়ে দেয় বিজেপির দলিত–প্রীতি কতখানি ভণ্ডামিতে ভরা৷ জনমতের প্রবল চাপে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে এবং জানায়, সরকার দলিত আইন লঘু করতে চায় না৷ অথচ বিক্ষোভের আগে সরকার এই পিটিশনের কথা ভাবেনি৷ উপরন্তু বিজেপি নেতারা বারবার বলতে থাকেন, সরকার এই মামলার শরিক ছিল না৷ অর্থাৎ এই রায়ে তাঁদের কোনও দায় নেই৷ বাস্তবে যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ তাতে কোর্ট এই আইনের অপপ্রয়োগের অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল৷ সরকার অভিযোগের বিরোধিতা করেনি৷ উপরন্তু কোর্টকে জানিয়েছিল, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহার হচ্ছে৷

বিজেপি সরকার কোথায় এই আইনের অপপ্রয়োগ দেখল? আসলে এই দেখার পিছনে তাদের আরএসএসের ছাঁচে ঢালা উচ্চবর্ণের মানসিকতাটি কাজ করেছে৷ বাস্তবে বিজেপি সরকারের মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যই সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছে৷ গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভায় লিখিত প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির যে তথ্য পেশ করেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৩–তে এই আইনে মামলা হয়েছে ৪৬,১১৪টি, সাজা হয়েছে মাত্রই ৯,৭৭৮ জনের, বিচার বকেয়া ১,১৭,২১৯টি মামলায় (পুরনো ধরে)৷ ’১৪–তে এই সংখ্যাগুলি যথাক্রমে ৪৭,১২৬ ও ১১,৫৬৬ এবং ১,১৯,৪৭৬৷ ’১৫–তে ৪৪,৮৩৯ ও ৯,৮৫৫ এবং ১,১৩,৫১৭৷ অর্থাৎ মামলা রুজু হলেও তদন্ত বা বিচার চলছে অতি ধীরে বা চলছেই না৷ অপপ্রয়োগ অনেক দূরের কথা, আইনটির প্রয়োগই হয়নি৷ আইনটির দুর্বলতার সুযোগই বেশি নিচ্ছে নিগ্রহকারীরা৷ অথচ দলিতদের উপর নিগ্রহ রোধে আইনটিকে দ্রুত কার্যকর করতে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার ও কড়া শাস্তির কথা বলা হয়েছিল৷

এমনিতেই নিম্নবর্ণের মানুষের উপর উচ্চবর্ণের মানুষের অত্যাচার বরাবরই রয়েছে৷ কিন্তু কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় বসার পর থেকে গত চার বছরে দেশজুড়ে, বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই আক্রমণ ব্যাপক আকার নিয়েছে৷ ২০০৭–’১৭, দশ বছরে দলিতদের উপর আক্রমণের সংখ্যা ৬৬ শতাংশ বেড়েছে৷ ন্যাশনাল ক্রাইম বুরোর তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে দলিত মহিলাদের ধর্ষণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, না হলে নিতে গড়িমসি করেছে৷ কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হামলাকারীরা বিজেপির সংগঠিত অনুগামী৷ হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের ‘একই সাংসৃক্তিক অভ্যাসের’ ফতোয়া এই আক্রমণগুলিকে আরও বাড়িয়েছে৷ এই হিন্দুত্ববাদীরা নিম্নবর্ণের মানুষের প্রচলিত খাদ্যাভাসকেও গায়ের জোরে বদলে দিতে চাইছে৷

একের পর এক এই ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে যখন সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ দেখা গেছে তখনও প্রধানমন্ত্রী চুপ করে থেকেছেন৷ তা সে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রোহিত ভেমুলার মৃত্যুই হোক কিংবা উনায় মৃত গরুর চামড়া ছাড়ানোর অপরাধে দলিতদের উপর নির্মম অত্যাচারেই হোক৷ এবারও তফসিলি উপজাতি ও জনজাতি অত্যাচার রোধ আইন সংশোধন নিয়ে দেশের মানুষের এত বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী একবারও বলেননি যে এই আইন সংশোধন তিনি সমর্থন করেন না৷ বিজেপি যেহেতু পুঁজিপতি শ্রেণির অন্যতম বিশ্বস্ত ভোটবাজ একটি দল, অর্থাৎ তার সমস্ত নীতি–বক্তব্য–প্যাঁচ একমাত্র লক্ষ্য ভোটে জেতা, তাই হিন্দুত্বের কথা বলতে গিয়ে বিজেপি নেতারা মাঝে মাঝে, বিশেষত ভোটের আগে, দলিতরাও যে হিন্দু তা জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেন৷ কারণ এই বিরাট অংশের মানুষদের ভোটও তাঁদের প্রয়োজন৷ তাই দলিতপ্রীতি দেখাতে বিজেপি নেতারা এখন আম্বেদকর–ভক্তির বান ডাকাচ্ছেন৷ বাস্তবে বিজেপি–আরএসএস নেতাদের এই দলিতপ্রেম যে ভোট রাজনীতির স্বার্থেই, তাঁরা যে সত্যিই হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদের বিরোধী নন, তা তাঁদের আচরণে প্রতি মুহূর্তে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ দলিত মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার আইনটিকে লঘু করার বিরোধিতা না করাতে তা আরও স্পষ্ট৷ আরএসএস নেতা মোহন ভাগবত গত চার বছরে বারবার সংবিধানে সংরক্ষণ বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন৷ বিজেপি–আরএসএস নেতাদের মুখে প্রায়ই দলিত বিদ্বেষ প্রকাশ হয়ে পড়ে৷ কর্ণাটকের বিজেপি নেতা অনন্তকুমার হেগড়ে দলিতদের ‘কুকুর’ বলে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছিলেন৷ তিনি দিব্যি কেন্দ্রে মন্ত্রীত্ব করছেন৷

এই আদেশের পিছনে সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি, আইনের অপপ্রয়োগ আটকাতে এই সংশোধন৷ আইন বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, টাডা–পোটা–ইউএপিএ–র অপপ্রয়োগে কত শত নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করে জেলে ভরা হয়েছে, অথচ এই আইনগুলির অপপ্রয়োগ নিয়ে এমনই সোচ্চার হতে কোর্টকে দেখা যায় না৷ দেশের থানাগুলিতে প্রতিদিন অজস্র ঘটনায় পুলিশ রামের অপরাধে শত–সহস্র শ্যামকে গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকাচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও তো অপপ্রয়োগের অভিযোগ তোলা হয় না৷ কেন এ সব ক্ষেত্রেও তা হলে প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে তবে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা হবে না? এই আইনের সংশোধনের পিছনে উচ্চবর্ণের মানসিকতা কি প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করছে না?

স্বাধীনতার সাত দশক পরেও ভারতের সমাজ জুড়ে ধর্ম–বর্ণের বৈষম্য ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে রয়েছে৷ বর্ণবৈষম্য নিরসনে ভীমরাও আম্বেদকর স্বাধীনতার আগে থেকেই চেষ্টা করেছেন৷ বাস্তবে ছোটখাটো কিছু দাবি আদায় হলেও সমাজের গভীরে বাসা বাঁধা বর্ণবৈষম্যের গায়ে তিনি আঁচড় কাটতে পারেননি৷ সেই সময়ের কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ছিলেন হিন্দুধর্মের কুসংস্কার সহ সমস্ত আচার–বিচার মেনে চলা লোক৷ তাঁরা জাতীয়তাবাদী হলেও তা ছিল হিন্দু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ৷ তাঁদের অনেকের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মীয় জাত্যভিমান ছিল অত্যন্ত প্রবল৷ এই জাত্যভিমানীদের একটি অংশই পরবর্তীকালে গড়ে তোলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন৷ এ দেশের মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ অন্য ধর্মে বা মতে বিশ্বাসী মানুষদের অধিকার সম্পর্কে এঁদের বিশেষ কোনও ভাবনা ছিল না৷ হিন্দুধর্মের অন্তর্গত দলিতদের অধিকার সম্পর্কেও তাঁরা চরম উদাসীন ছিলেন৷ তেমনই আম্বেদকরের দলিত স্বার্থরক্ষার আন্দোলনের মধ্যেও সমাজের গণতন্ত্রীকরণের আন্দোলনটি অনুপস্থিত থেকে গেছে৷ আম্বেদকর যখন বুঝেছেন, হিন্দুত্ববাদী নেতৃত্ব বর্ণবৈষম্য দূর করতে আগ্রহী নয়, তিনি হতাশ হয়েছেন৷ হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছেন৷ জাতপাত–বর্ণবৈষম্য সম্পূর্ণরূপে দূর করতে হলে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে রাজনৈতিক বিপ্লবের কর্মসূচির মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কর্মসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি কাজ ছিল এবং গোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব সংস্কারবাদী জাতীয় বুর্জোয়াদের হাতে থাকার দরুন যে এ কাজ সম্ভব হয়নি এটিই তিনি ধরতে পারেননি৷ সেই সময় দেশে সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি থাকলে তারা এই কাজটি করতে পারত৷ কিন্তু সে সময় যারা এ দেশে কমিউনিস্ট বলে পরিচিত ছিলেন তাঁরা সমস্যাটা ধরতেই পারেননি৷

আজ যাঁরা দলিত স্বার্থরক্ষার নামে নানা সংগঠন গড়ে তুলেছেন এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা যদি সত্যিই দলিত স্বার্থ দেখতে চান, তাহলে তাঁদের বুঝতে হবে, সামন্তী সমাজের জাতপাত–সম্প্রদায়ের সমস্যা এটা নয়, এর সাথে যুক্ত হয়েছে পুঁজিবাদী রাজনীতির হিসেব–নিকেশের জটিলতা৷ এই জটিলতা শুধুমাত্র কিছু আইনি অধিকার দিয়ে দূর করা যাবে না৷ দলিত সরকার, দলিত রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বারা এই সমস্যার সমাধান হবে না৷ ভীমরাও আম্বেদকর চেয়েছিলেন আইনি রক্ষাকবচ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দলিতদের আর্থিক উন্নতি ঘটিয়ে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে৷ কিন্তু সেই নির্দিষ্ট সময় বহুদিন আগেই পেরিয়ে গেলেও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বিভেদ দূর হয়নি৷ কারণ সমানাধিকারের প্রশ্নটি শোষণমূলক এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটিকে উচ্ছেদের সাথে যুক্ত৷ এই সমাজ ব্যবস্থাটিকে টিকিয়ে রেখে কিছু ক্ষেত্রে সংরক্ষণ চালু করে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না৷ দলিত সহ সকল সাধারণ মানুষকেও পরিষ্কারভাবে এ কথা বুঝতে হবে, আজ এই সমানাধিকারের প্রশ্নটি আলাদা করে শুধু শোষিত–বঞ্চিত দলিত তথা নিম্নবর্ণের মানুষের সমস্যা নয়, ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র শোষিত মানুষের সমস্যা৷ এর সমাধানটিও যুক্ত হয়ে আছে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটি উচ্ছেদের সাথে৷ অতীতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের মতোই এ দেশের পুঁজিবাদ আজ তার আয়ুকে দীর্ঘায়িত করতে শোষিত মানুষের মধ্যে অনৈক্য চাইছে, জাতপাত–ধর্ম–বর্ণ নিয়ে ক্রমাগত বিভেদ তৈরি করে চলেছে৷ পুঁজিবাদের এই চরিত্রকে বুঝে আজ দলিত–মুক্তি আন্দোলনকে সামগ্রিক ভাবে গোটা সমাজের শোষণমুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে না পারলে সত্যিকারের দলিত–মুক্তি আসবে না৷ কাঁসিরাম, মায়াবতী, লালুপ্রসাদ, মুলায়মের মতো এক একজন দলিত নেতা উঠে আসবেন, নেতা হবেন, মন্ত্রী হবেন, প্রচুর সম্পদের মালিক হবেন, আর অন্য বুর্জোয়া নেতারা যা করেন, সেই মিথ্যা স্তোক দিয়ে দলিত সমর্থকদের প্রতারিত করবেন৷ এমনকী ব্রাহ্মণ্যবাদী দল বিজেপিও আজ শুধুমাত্র ভোট–রাজনীতির ফায়দা তুলতে দলিতদের মন পেতে আম্বেদকরের বড় পূজারি সেজেছে৷ দলিত–সমস্যা আজও টিকে থাকার জন্য মূলত দায়ী যে কংগ্রেস, তারাও আজ দলিত–দরদি সেজে তাদের ভোটলুঠের খেলায় নেমেছে৷ এদের সবার আম্বেদকর–পূজার সাথে দলিতদের স্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই৷ বরং তা দলিতদের প্রকৃত স্বার্থের সাথে এক বিরাট প্রতারণা৷ তাই আজ দলিত সমাজের শোষণ–মুক্তির সংগ্রামটি এই নিকৃষ্ট পুঁজিবাদী রাজনীতির চরিত্র বুঝে পুঁজিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার এবং তার পরিপূরক সামাজিক–সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার সাথে যুক্ত৷ একমাত্র দ্বারাই সম্ভব সত্যিকারের জাতপাত–ধর্ম–বর্ণ সমাজ গঠন৷ যতদিন তা না হচ্ছে তত দিন তফসিলি জাতি–উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনটিকে পূর্বাবস্থাতেই রাখতে হবে৷ এজন্য সরকারকে অবিলম্বে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে৷

(৭০ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা ২০ এপ্রিল, ২০১৮)