ভাষা সমস্যা সমাধানে এসইউসিআই(সি)–র বক্তব্যকে মান্যতা দিতে বাধ্য হল আসাম সরকার

ফাইল চিত্র

আসামের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে গত ২১ ডিসেম্বর ২০১৯, আসাম রাজ্য সরকার কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে৷ সে সম্পর্কে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর আসাম রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে রাজ্য সম্পাদক কমরেড চন্দ্রলেখা দাস ২৫ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন,

আসামের সকল শ্রেণির জনসাধারণ অবগত আছেন যে, নিজেদের ভাষা–সংস্কৃতি এবং কৃষ্টি অটুট এবং অক্ষুণ্ণ রাখার প্রশ্নে অসমীয়াভাষী জনসাধারণের যে গভীর আবেগ ও অনুভূতি রয়েছে তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করে আমাদের দল গত ১৯৭৯ সালের আসাম আন্দোলনের দিন থেকেই দাবি করে আসছে যে রাজ্যের জনবিন্যাস এবং জনসংখ্যার প্রকৃতি পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত না করে এবং রাজ্যের ছোটবড় ভাষিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চা করার ক্ষেত্রে সংবিধান প্রদত্ত অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখে– রাজ্য ভাষা হিসাবে অসমীয়া ভাষার বর্তমান মর্যাদা স্থায়ী করার জন্য ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন অথবা বিশেষ আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা অবিলম্বে গ্রহণ করা হোক৷ আমরা লক্ষ করেছি অসমীয়াভাষী জনসাধারণসহ অপরাপর সকল অংশের জনগণ প্রথম থেকেই আমাদের বহুল প্রচারিত এই প্রস্তাবকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন৷ আমরা আনন্দিত যে আসামের সকল জনগণ কর্তৃক সমাদৃত এই দাবির যৌক্তিকতা বিলম্বে হলেও আসাম সরকার ২১ ডিসেম্বর ২০১৯–এর মন্ত্রীসভার বৈঠকে মেনে নিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে শুধু প্রস্তাব গ্রহণ নয়, আমরা দাবি করছি এই ন্যায্য দাবি যাতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অবিলম্বে মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়িত করে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য আসাম সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের ডপর যথোচিত চাপ সৃষ্টি করুক৷

এই ঘোষণায় রাজ্য সরকার অসমীয়া ভাষার বিস্তারের কথা বলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় স্কুল পর্যায়ে অসমীয়া ভাষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় করার যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, সেই প্রশ্নে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসবাসকারী সকল অ–সমীয়া জনগণই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে, নিজ নিজ প্রয়োজনে অসমীয়া ভাষার চর্চা করেন এবং স্বচ্ছন্দে এই ভাষায় কথা বলেন, মত বিনিময় করেন, ভাব বিনিময় করেন এবং জোর জবরদস্তি না করলে আরও বেশি করে করবেন৷ দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল– স্বাধীনতা উত্তর ভারতবর্ষে যেখানেই ভাষাচর্চার জন্য জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা হয়েছে, সেখানেই সকল জনগণের পারস্পরিক সম্প্রীতি– যা স্বেচ্ছায় মাতৃভাষার বাইরে অপর একটি ভাষা শিখবার মূল ভিত্তি– সেটাই বিপন্ন হয়েছে৷ অতীতে আসামেও তাই হয়েছে৷ এটাও স্মরণযোগ্য যে অতীতে জোর করে গোটা দেশে হিন্দিকে রাষ্ট্র ভাষা করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে৷ আবার এই নীতি প্রত্যাহূত হওয়ার পর দেশের মানুষ আজ নিজ নিজ প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় হিন্দি ভাষা চর্চা করছেন৷ ভাষা চর্চার এটাই অমোঘ নিয়ম৷ বিশ্ব কমিডনিস্ট আন্দোলনের মহান নেতা লেনিনও এই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন৷ এই প্রেক্ষাপটেই আমাদের দৃঢ় অভিমত হচ্ছে, এইভাবে অসমীয়া ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার কোনও প্রয়োজন নেই৷ মানুষ স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই অসমীয়া ভাষা শিখবেন, চর্চা করবেন৷

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও আসাম সরকার আরও বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত একই সাথে ঘোষণা করেছে৷ আমাদের দৃঢ় অভিমত হচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷ নচেৎ জনগণের ঐক্য মারাত্মকভাবে বিঘ্ণিত হয়৷ তাই আমাদের দাবি এই পদ্ধতিতে এই সিদ্ধান্তগুলি পুনর্বিবেচিত হোক৷

একই সঙ্গে গভীর ডদ্বেগের সঙ্গে আমরা লক্ষ করলাম যে, অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত দাবিদাওয়ার সঙ্গে রাজ্যের চূড়ান্ত অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, অসহনীয় বেকার সমস্যা যা রাজ্যের জনসাধারণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, তা মোকাবিলা করার অপরিহার্য প্রয়োজনে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রাজ্যে ছোট, মাঝারি এবং সুনির্দিষ্ট বড় কলকারখানা গড়ে তোলার জরুরি প্রশ্ণে আসাম সরকারের এই ঘোষণায় একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি৷ তাই আমাদের দাবি আসাম সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে শিল্প স্থাপনের একটি বাস্তবানুগ প্যাকেজ প্রোগ্রাম অবিলম্বে ঘোষণা করুক৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ২১ সংখ্যা)