হকার উচ্ছেদ কার স্বার্থে

পরিবর্তনের কথা বলে ক্ষমতার সিংহাসনে নানা সরকার আসে আর যায়, সাধারণ মানুষের দুরাবস্থার এক তিলও পরিবর্তন হয় না৷ বরং দিনে দিনে সাধারণ মানুষের উপর শোষণ–জুলুম আরও বেড়ে চলেছে৷  পথচারীদের নিরাপত্তা ও শহরের সৌন্দর্যায়নের নামে মর্মান্তিক উচ্ছেদ চলছে যা বর্তমান তৃণমূল সরকার বরানগর, দমদম, দক্ষিণেশ্বর, নিউটাউন, সল্টলেকের রাস্তাগুলিতে করছে৷ তারা রাস্তার ধারের ছোট দোকান, বসতের ঝুপড়ি সব তুলে দিয়ে রেলিং ঘিরে ত্রিফলা আলো বসিয়েছে৷

যখন পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারতে কোটি কোটি বেকার, কেউ একবেলা খেয়ে, কেউ বা আধপেটা খেয়ে দিন গুজরান করছে, সরকারি–বেসরকারি কোনও জায়গায় নিশ্চিত কোনও কাজ নেই, তখন যে মানুষগুলি ছোটখাটো দোকান, ব্যবসা করে পরিবার প্রতিপালন করেন, কোনও বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই এই উচ্ছেদে তাঁরা সম্পূর্ণ বেকার হয়ে গেলেন অথচ এই সরকারই ক্ষমতায় আসার আগে সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ আজ সে পুরো উল্টো পথে কাজ করে চলেছে৷

কেন এ কাজ তারা করছে? আসলে কি কেন্দ্র, কি রাজ্য– সমস্ত সরকারই ক্ষুদ্র–কুটির শিল্প, ছোট ব্যবসা তুলে দিয়ে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের হাতে গোটা বাজারটাকে তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে৷ মানুষ যাতে ছোট দোকানদারদের কাছ থেকে না কিনে শপিং মলে কেনাকাটা করে, যাতে একচেটিয়া মালিকদের ব্যবসা বাড়ে, তার চেষ্টা করে চলেছে এরা৷ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারও একই পথে হাঁটছে৷

এদিকে সাধারণ মানুষের বেহাল দশা৷ হাসপাতালে গরিবের বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুযোগ নেই৷ যথেষ্ট সংখ্যক ডাক্তার–নার্স নেই, হাজার হাজার মানুষ খেতে পাচ্ছে না, চাষি ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করছে, স্কুল–কলেজগুলোতে উপযুক্ত পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই৷ শহরের রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, খাল–নালাগুলোর সংস্কার নেই, ম্যালেরিয়া–ডেঙ্গু প্রতিরোধ বা মশা নিধনের সুব্যবস্থা নেই৷ এ সব দিকে সরকারের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই৷ তারা এই সব খাতে খরচ কমিয়ে নগর সৌন্দর্যায়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে চলেছে৷ এর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে না দাঁড়ালে একে প্রতিরোধ করা যাবে না৷

গৌরাঙ্গ মাইতি

সল্টলেক, কলকাতা