স্বাস্থ্যভবনে আশা কর্মীদের ডেপুটেশনে পুলিশের বাধা

সল্টলেক স্বাস্থ্যভবনে আশাকর্মীদের বিক্ষোভ

এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশনের (এনআরএইচএম) খাতে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কমানো হয়েছে। আশাকর্মীরা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকার আশাকর্মীদের কাজের জন্য গাল ভরা খেতাব দিলেও বেঁচে থাকার ন্যূনতম ব্যবস্থা করছে না। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য বাজেটে আশাকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাড়িয়ে ফি’ড ভাতা বৃদ্ধি করা, সময় মতো পারিশ্রমিক দেওয়া ইত্যাদি দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন ৭ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলায় এবং দক্ষিণবঙ্গে সল্টলেক স্বাস্থ্যভবনে ডেপুটেশনের কর্মসূচি নেয়। স্বাস্থ্যভবনে কর্মসূচি শুরুর আগেই পুলিশ বাধা দেয়। প্রবল ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ন্যায্য দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ডেপুটেশন দেওয়ার জন্য কয়েক হাজার আশাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ অতর্কিতে কর্মীদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদেরমারধর করে। এই ঘটনায় তিনজন আশা কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। পরে আশাকর্মীরা সেখানেই বিক্ষোভ দেখান ও স্বাস্থ্য অধিকর্তার হাতে দাবিপত্র তুলে দেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ৮ ফেব্রুয়ারি সারা রাজ্যে আশাকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ দিবস পালন করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক এবং মার্চ মাসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ডিউটি বয়কট করে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

এ রাজ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দে্রর তত্ত্বাবধানে কর্মরত প্রায় ৬০ হাজার আশা কর্মী প্রসূতি মা, শিশু এবং গ্রামীণ জনসাধারণকে রাত দিন স্বাস্থ্য পরিষেবা দেন। বর্তমানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেই কাজের পরিধিও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। মা-শিশুর পরিষেবা দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলেও এই কাজের জন্য আশা কর্মীদেরসম্মানজনক পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। আবার বহু ক্ষেত্রে পরিষেবা দিলেও পারিশ্রমিক পাওয়া অনিশ্চিত থাকে। এখন বিপর্যয় মোকাবিলা, খেলা-মেলা-ভোটের ডিউটি, দুয়ারে সরকার, জল পরীক্ষা, নুন পরীক্ষা, স্কুল কলেজ পরীক্ষায় ডিউটির জন্য গেটে গিয়ে অবাঞ্ছিতের মতো বসে থাকা, নির্মল বাংলা, খোলা-শৌচমুক্ত বাংলা, শৌচালয় সার্ভে, আবাস যোজনার সার্ভে, এরকম বহু প্রকল্পের কাজও তাঁদের দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে করানো হয়। এঁরা সেই কর্মী যাঁরা করোনার সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে রাতদিন আক্রান্ত মানুষকে পরিষেবা দিয়েছেন। নিজেরা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, কারও কারও মৃত্যুও হয়েছে। আবাস যোজনার সমীক্ষার মতো কাজ করতে গিয়ে ঘর পুড়েছে, মরতে হয়েছে।

সরকারের নানা উৎসব-বিনোদনে, নানা প্রকল্পের সার্ভের কাজে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এই সমস্ত ডিউটিতে আশা কর্মীদের জন্য কোনও পারিশ্রমিক বরাদ্দ করা হয় না। উপরন্তু জোর করে নানা রকমের ভয়-ভীতি দেখিয়ে কাজগুলো চাপিয়ে দেওয়া হয়। বহু কাজ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও করতে হয়। এর বিনিময়ে সরকারের কাছ থেকে জুটেছে চরম অবজ্ঞা ও অবহেলা।