লখিমপুর খেরিঃ তদন্তের স্বার্থেই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হবে

উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে যেদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও খেরি কেন্দ্রের সাংসদ অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিস গাড়ি চাপা দিয়ে চার কৃষক ও এক সাংবাদিককে হত্যা করল সেদিনই দিল্লির আন্দোলনরত কৃষকরা আশিসের গ্রেপ্তারির পাশাপাশি অজয়কে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছিল। তিনি আশিসের পিতা, এ জন্য কৃষকরা এই দাবি তোলেননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হয়েও তিনি সেদিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। বলেছিলেন, ঘটনার সঙ্গে তাঁর ছেলে আশিস কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। প্রসঙ্গত, দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়ি-দায়িত্ব এই দপ্তরের উপরই বর্তায়। তদন্তে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ আশিসের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর লঘু অভিযোগ এনেই তাঁকে রেহাই দিতে চেয়েছিল। পরে আন্দোলনের চাপে বিচারবিভাগ বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের নির্দেশ দেয়। সিট তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়, সেদিন হত্যার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করে কৃষকদের উপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং গাড়ির চালকের আসনে ছিল আশিস।

স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র, যিনি একজন অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিলেন, তিনি নিজে এই হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত নন– এ কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আগেই জোর দিয়ে বলা চলে না। কারণ অজয় শুধু একজন মন্ত্রীই নন, তিনি এলাকায় ‘রাজাসাহেব’ এবং একজন মাফিয়া নেতা হিসাবে পরিচিত। এমন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রেখে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত কখনওই যথাযথ হতে পারে না। দিল্লি দাঙ্গা সহ বিজেপি নেতাদের অজস্র অপরাধমূলক কাজে তদন্তকে প্রভাবিত করার বহু নজির রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তদন্তকে যথাযথ করার জন্য অজয়কে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করে তদন্ত চালানোর দাবি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত এবং গণতান্ত্রিক দাবি।

অজয়কে বরখাস্তের দাবি শুধু কৃষকরাই তোলেনি, বিরোধী দলগুলিও তুলেছে। এই দাবিতে দিনের পর দিন সংসদ অচল হয়ে যাওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী কেন অজয় মিশ্রকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাচ্ছেন না? বিজেপি নেতারা যতই বিচারাধীন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন, তাতে গণতান্ত্রিক দাবিটির প্রতি তাঁদের অবহেলা তথা অবজ্ঞাকে ঢাকা দেওয়া যাবে না। কারণ, আইনে কোথাও নেই যে, তদন্ত চললে একজন মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো যাবে না।

বিজেপি নেতাদের এই মনোভাব থেকেই আরও একবার প্রমাণ হল, কৃষি আইন প্রত্যাহারের মধ্যে কোথাও কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সুবিচার পাওয়ার ন্যায্য দাবির প্রতি বিজেপির কোনও মান্যতা নেই। আইনকে আইনের পথে চলতে দেওয়ার কথাটি তাঁদের শুধু মুখের কথা মাত্র। তার মধ্যে আইনকে তাঁদের মেনে চলার কোনও চিহ্নই নেই। যদি থাকত তবে সিটের এমন স্পষ্ট বক্তব্য– ‘হত্যার উদ্দেশ্যেই সেদিন কৃষক সমাবেশের উপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল’, বলার পরও প্রধানমন্ত্রী অজয়কে বরখাস্ত না করে পারতেন কি? সংবাদমাধ্যমেই এ সত্য প্রকাশ পেয়েছে যে, মাফিয়া নেতা অজয় মিশ্র উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক অংশের ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই যত অপরাধই করুন না কেন, সে রাজ্যে ভোটের স্বার্থেই এমন ‘সম্পদ’কে নরেন্দ্র মোদিরা হারাতে ভয় পাচ্ছেন।

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ২০ সংখ্যা ২৪ ডিসেম্বর ২০২১