‘রামরাজ্য’ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রও ভাল!

দেশময় তীব্র বিতর্কের আবহে ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হল অযোধ্যার রাম মন্দিরের। বিজেপি ও সংঘ পরিবারের নেতারা বলছেন তাঁদের বহু ঘোষিত ‘রামরাজ্য’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে কার্যত বাস্তব।

কিন্তু কী আশ্চর্য!এ হেন ‘রাম রাজ্য’ ছেড়ে হাজার হাজার লোক বিদেশে ছুটছে কেন? বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানা। রোহটক শহরে এমডি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে লক্ষ করা গেল হাজার হাজার যুবকের জটলা। তারা হরিয়ানা সরকারের বিজ্ঞাপন দেখে নাম লেখাতে এসেছেন। কাজের জন্য ইজরায়েলে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ক্যাম্প করে ছ’দিন ধরে নাম লেখানোর বিরাট কর্মসূচি। কিন্তু ইজরায়েলে যে চলছে যুদ্ধ পরিস্থিতি! তাতে কি? দেশে কর্মহীন অবস্থায় না খেয়ে-আধপেটা খেয়ে থাকার চেয়ে কাজ পেলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাওয়াও শ্রেয়–সাংবাদিকদের কাছে বললেন এক কর্মপ্রার্থী।

৪২ বছরের যুবক জগদীশ প্রসাদ ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়েএক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল–দেওয়াল কী করে প্লাস্টার করতে হয়।বোঝা গেল, রাজমিস্ত্রী, ছুতোর এই সমস্ত কাজের লোক নিচ্ছে ইজরায়েল।দ্বাদশ পাশ জগদীশ বললেন, দশ বছর ধরে এ কাজ করছি।আয় বেড়েছে হাজার চারেক টাকার মতো। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে বেশি বেতনের কাজ না পেলে এই আয়ে সংসার চালানো যাচ্ছে না।দেশে বাড়তি বেতন না পেলে বিদেশেই যেতে হবে।

রাজস্থানের শিকার থেকে এসেছেন, ইতিহাসে এমএ ২৫ বছরের যুবক রামফল গেহলট।তিনি জানালেন, পাঁচবার সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছি।একটাও হল না।তখন বাড়ির কৃষিজমিতেই কাজে লেগে যাই।কিন্তু পুঁজির অভাবের জন্য সেটাও করা গেল না। শেষে এক স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টারে ভর্তি হই। ড্রাইভার এবং সিকিউরিটি গার্ডের কাজের জন্য আবেদন করি, তাও হল না। ইজরায়েলে স্টিল ফিক্সচারের কাজের জন্য আবেদন করেছেন তিনি।

ওড়িশা থেকে এসেছেন রবীন্দর প্রধান। তিনি এর আগে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, মরিশাসে কাজ করে এসেছেন। দশ মাস আগে পারমিট শেষ হয়ে যাওয়ায় দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। বললেন, তখন থেকেই দেশে একটা কাজ খুঁজছেন। কিন্তু এই ‘রাম রাজত্বে’ উপযুক্ত বেতনের কাজ পাচ্ছেন না। ইজরায়েলে কাজ ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সেখানে যাচ্ছেন একটু বেশি বেতনের আশায়। (সূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ১৯ জানুয়ারি,২০২৪)

ইউরোপ, আমেরিকার সব দেশেই ভারতীয় শ্রমশক্তি ছুটছে। কিছু দিন আগে ফ্রান্স থেকে একটি যাত্রী বোঝাই বিমান ভারতে ফেরৎ পাঠানো হয় মানব পাচারের অভিযোগে। মুম্বই বিমনবন্দরে সেটি অবতরণ করার পর দেখা গেল, যাত্রীদের অধিকাংশই গুজরাটের। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিকারাগুয়া হয়ে আমেরিকা বা কানাডায় ঢুকে পড়া, যাতে কিছু কাজ পাওয়া যায়। জানা যাচ্ছে একটা এজেন্সি এর সঙ্গে যুক্ত। ভারতীয় শ্রমিকরা নিজেদের জমানো টাকার সবটুকু দিয়ে এই সব এজেন্সির মাধ্যমে কাজে পাড়ি দিচ্ছেন দেশে দেশে।

আমেরিকার কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রল-এর তথ্যানুসারে ২০২৩ সালে ৯৬,৯১৭ জন ভারতীয় বেআইনিভাবে আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করেছেন যা গত বছরের থেকে ৫১.৬১ শতাংশ বেশি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, এর মধ্যে ৪১,৭৭০ জন মেক্সিকোর বর্ডার দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছেন।

এই তথ্যগুলি কী দেখাচ্ছে? এতগুলো বছর ধরে নরেন্দ্র মোদিজির ভাইব্র্যান্ট গুজরাটের প্রচারের পর সেখানে এমন উন্নয়ন হয়েছে যে কাজের খোঁজে দলে দলে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে ছুটছে! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় দেশ ছেড়ে বেআইনি অভিবাসনের ঝুঁকি নিয়েও বিদেশে ছুটছেন কেন? এ প্রশ্ন দেশের মানুষকে গভীর ভাবে ভাবাচ্ছে।