রাজনৈতিক ওয়াশিং মেশিন

২০১৪ থেকে ২৫ জন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিরোধী নেতাকে বিজেপি নিজের দলে অথবা তার নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র মাধ্যমে কাছে টেনেছে। তাদের মধ্যে ১০ জন কংগ্রেসের, ৪ জন করে এনসিপি ও শিবসেনার, ৩ জন তৃণমূল কংগ্রেসের, টিডিপি-র ২ জন এবং সমাজবাদী পার্টি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ১ জন করে আছে। বিজেপির সাথে হাত মেলানোর পরেই ৩ জনের বিরুদ্ধে চলা মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ২০ জনের মামলা চলে গেছে ঠাণ্ডা ঘরে, বাকি তিনজনের মামলাতেও ধীরে চলো নীতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।

উল্লেখযোগ্য নাম হল, এনসিপি-র অজিত পাওয়ার এবং প্রফুল্ল প্যাটেল। প্রথম জন লাভাসা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, দ্বিতীয় জন এয়ার ইন্ডিয়া কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। এনসিপি ভেঙে মহারাষ্ট্রের এনডিএ সরকারে এই দু-জন যোগ দেওয়ার পর গত মার্চ মাসে প্রফুল্ল প্যাটেলকে ক্লিন চিট দিয়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার সম্প্রতি দুর্নীতি নিয়ে যে শ্বেতপত্র সংসদে পেশ করেছে, তাতে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বানকে আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বলে দেখানো হয়েছে। সেই অশোক চহ্বান সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তাঁকেই রাজ্যসভার টিকিট দিয়ে জিতিয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে সারদা মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূলের তৎকালীন সাংসদ মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও পদক্ষেপ সিবিআই নেয়নি। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা ও বিজেপির প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারী ২০১৯-এর নারদ স্টিং অপারেশনে টাকা নেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত। তখন তিনি ছিলেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সিবিআই লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে অনুমতি চাইলেও তা ঝুলিয়ে রাখা হয়। ২০২০-তে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। আর কোনও এজেন্সি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টাও করেনি।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ২০১৪-তে কংগ্রেসে থাকাকালীন সারদা চিটফান্ড সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত হন। তাঁর বাড়ি ও অফিসে সিবিআই তল্লাশিও হয়। ২০১৫-তে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। এরপর থেকে আর কোনও তদন্তের সামনে তাঁকে পড়তে হয়নি। প্রায় একই রকম উদাহরণ, কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ জ্যোতি মৃধা, টিডিপি-র প্রাক্তন সাংসদ ওয়াই এস চৌধুরি ইত্যাদি। এঁরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে অভিযোগ নিয়ে কোনও এজেন্সি এতটুকু নাড়াচাড়া করেনি। তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় নারদ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর বিজেপিতে যান। পরে বিজেপি ছাড়তেই গ্রেপ্তার হন তিনি। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক তাপস রায়ের বাড়িতে ইডি হানা দেওয়ার পরেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

(সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ এপ্রিল ২০২৪, বর্তমান ৪ এপ্রিল, ২০২৪)