মৎস্যজীবীদের হয়রানি না করার  প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করল সরকার

সুন্দরবনের নদী ও খাঁড়িতে কয়েক লক্ষ গরিব মানুষ পুরুষানুক্রমে মাছ–কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন৷ কিন্তু বন সংরক্ষণ ও বন্য পশু সংরক্ষণের অজুহাতে সরকার বাস্তবে গরিব মানুষকেই মারছে৷ বনবিভাগের কর্মচারীরা দিনের পর দিন অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে মৎস্যজীবীদের উপর৷ নৌকা–জাল সহ মাছ ধরার সামগ্রী আটকে দিয়ে মিথ্যা কেসে হয়রানি করছে, কখনও মোটা টাকা জরিমানা করছে ও কখনও খাদ্য সামগ্রী–পানীয় জল–চিকিৎসার ওষুধ জলে ফেলে দিচ্ছে৷ ফেলে দিচ্ছে ধরা মাছ ও কাঁকড়াগুলিও৷ কখনও কখনও মারধরও করা হচ্ছে৷ বাঘ–কুমীরের কামড়ে মৃত্যু হলে সরকারি সাহায্যও মিলছে না৷

সরকারের ফরমান, নৌকায় মেশিন বসিয়ে নদীতে মাছ ধরা যাবে না৷ সুন্দরবনে বড় বড় নদী আছে৷ সেখানে যন্ত্র চালিত নৌকা ছাড়া পাড়ি দেওয়া অসম্ভব৷ এই সব নদীতে আগে জলদস্যুরা দাঁড়ের নৌকায় আক্রমণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করত৷ প্রাণেও মেরে দিত৷ যন্ত্রচালিত নৌকা আসার পর জলদস্যুদের আক্রমণ অনেকটা কমেছে৷

মৎস্যজীবীদের দাবি, বিকল্প স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করতে হবে৷ যতদিন তা না করা যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত মাছ–কাঁকড়া অধিকার অধিকার বলবৎ রাখতে হবে৷  কিন্তু এই দাবি সরকারকে বার বার জানিয়েও প্রতিকার না হওয়ায় মৎস্যজীবীরা জীবন ও জীবিকার রক্ষার্থে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন৷

তাঁদের ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে ২৪ জুলাই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাশাসক মৎস্যজীবী সংগঠন, বন বিভাগের আধিকারিক, জেলার সমস্ত বিডিও, এসডিও, এম এল এ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলাপরিষদের কর্মাধক্ষ্য, মৎস্য বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে মিটিং করেন৷ মিটিং–এ সিদ্ধান্ত হয় নতুন করে মৎস্যজীবীদের হয়রানি ও অত্যাচার করা হবে না, যন্ত্রচালিত নৌকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ম্যুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে৷ সিদ্ধান্ত হয় নতুন মেরিন লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রি ক্যাম্প করে অল্প সময়ের মধ্যে মৎস্যজীবীদের দেওয়া হবে৷

কিন্তু এখনও পর্যন্ত মৎস্য বিভাগ নতুন নতুন রেজিস্ট্রি ও লাইসেন্স দেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেয়নি, উপরন্তু বন বিভাগের অত্যাচার ও হয়রানি বহুগুণ বেড়ে গেছে৷ সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বনদপ্তর দ্বারা আটক করা নৌকা, জাল ও মাছ ধরার সামগ্রী ফেরত দেওয়া হবে৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা ফেরত দেওয়া হয়নি৷ অত্যাচার চরম রূপ নেয় ৩০ আগস্ট৷ ওই দিন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ডিএফও তার সমস্ত বাহিনী নিয়ে, দাঁড় ও মেশিনচালিত নৌকা নির্বিশেষে মৎস্যজীবীদের আটক করে৷ তাদের মারধর করে গভীর জঙ্গলে নামিয়ে দেয়৷ অনেককে মোটা টাকা জরিমানা করে৷ এই স্বৈরাচারের প্রতিবাদে ৩১ আগস্ট ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন ও সাউথ সুন্দরবন ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতৃত্বে নামখানা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস, রামগঙ্গা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস, কুয়েমুড়ি বনিক্যাম্প, ঝড়খালী বিট অফিস, কুলতলি বিট অফিসে মা–বোন সহ শত শত মৎস্যজীবী বিক্ষোভ দেখান৷ নেতৃত্ব দেন সংগঠনের নেতা এসইউসিআই(সি)–র প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার৷

মৎস্যজীবীদের সামনে এই সরকারের ভূমিকা প্রতারকের, চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকের৷ একদিকে হাজার হাজার গরিব মানুষকে সরকার কাজ দিতে পারে না৷ অথচ নিজের উদ্যোগে যারা স্বনিযুক্ত হয়েছেন,উল্টে তাঁদের উপর সরকারি বাহিনী দিয়ে হামলা করায়৷ এই সরকার যে কত জনবিরোধী তা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছেন মৎস্যজীবীরা৷ এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারে তফাৎ কোথায়?

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ৮ সংখ্যা)