বিপর্যয়কেও মতলব হাসিলে কাজে লাগাতে চায় বিজেপি


লকডাউনের ফলে কাজ হারানো কোটি কোটি বিপন্ন মানুষের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করতে না পারার কারণ হিসেবে মোক্ষম অজুহাত দিয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। কী বলেছেন তিনি? বলেছেন, এনআরসি-র তথ্যভাণ্ডার থাকলে সহজেই নাকি দেশের নাগরিকদের খুঁজে পাওয়া যেত এবং প্রতিটি নাগরিক ত্রাণসাহায্য পেত। কথায় আছে, ‘দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না’। তাই করোনার মতো অতিমারিতে দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ, চিকিৎসক সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই, করোনা পরীক্ষার যথেষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা না থাকার অজুহাত হিসাবে এনআরসি-র বিষয়টাকে টেনে আনতে বাধল না।
অথচ কেন এনআরসি-এনপিআর-সিএএ-র বিরোধিতা দেশের সাধারণ মানুষ করেছেন, তা তো শাসক দল বিজেপির অজানা নয়! চরম অগণতান্ত্রিক, বিপজ্জনক ও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এনআরসি-এনপিআর-সিএএ প্রত্যাহারের দাবিতে এই সেদিনও ধর্ম-বর্ণ-জাত-ভাষা নির্বিশেষে দেশের অগণিত ছাত্র-যুব-মহিলা রাজপথে নেমে আন্দোলনের জোয়ার তুলেছিলেন। সে আন্দোলনের তীব্রতা ছিল এতটাই যে, তাতে শাসকের ভিত পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল– এ কথা তাঁরা মানতে না চাইলেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই জানতেন। ফলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কখন কোন কথাটা কীভাবে বলে দেশের কিছু মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও বিভ্রান্তি তৈরি করা যায়, এনআরসি-এনপিআর-সিএএ-র গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা ফেরানো যায়, এ শয়তানিবিদ্যা তাঁদের জানা আছে।
১ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে এনপিআর হওয়ার কথা ছিল। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনপিআর করার পরিকাঠামো ও কর্মচারী সরকারের আছে’। অথচ লকডাউনের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করার পরিকাঠামো নাকি সরকারের নেই। আসলে পরিকাঠামো নয়, সদিচ্ছা ও সরকারি নীতিরই অভাব, এই সহজ সত্যটুকু স্বীকার করতে বিজেপি নেতারা ভয় পাচ্ছেন। শাসক যখন বলে, রাজনীতি কোরো না, বুঝতে হবে, বিরুদ্ধতার রাজনীতি সরকার চাইছে না। বলা বাহুল্য, বিরুদ্ধতা ও প্রতিবাদী রাজনীতি কোনও জনবিরোধী সরকারই চায় না। তারা চায়, মানুষ নীরবে বিনা প্রতিবাদে তাদের জনস্বার্থবিরোধী নীতিগুলি মেনে নিক। দেশের এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ছে, ব্যাঙ্কে আমানতের উপর সুদ কমছে, জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বাড়ছে, ধর্মান্ধতায় মাতিয়ে রাখতে করোনা তাড়ানোর নামে থালা বাজানো, প্রদীপ জ্বালানোর নিদান দেওয়া হচ্ছে। আর শাসক বিজেপি ওত পেতে আছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে কীভাবে এনআরসি-এনপিআর-সিএএ চালু করা যায়। আশা এই, দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা আজও মরেনি।