বালাকোটে জঙ্গিমৃত্যুর উল্লেখ নেই–আন্তর্জাতিক মিডিয়া

নয়াদিল্লি – পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের বিমান হানায় আদৌ কোনও জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে? এ নিয়ে দাবি, পাল্টা দাবি চলছে এখনও৷ ‘সোর্স’কে উদ্ধৃত করে অনেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দুশো থেকে তিনশো মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে৷ তবে কোনও মৃত্যুর কথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে না৷ যা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য৷ গত দু’দিনে ইউরোপ, আমেরিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার প্রথম সারির সংবাদপত্রের সব প্রতিবেদনেই  মৃত্যুর কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তার কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া হল৷

নিউ ইয়র্ক টাইমস : সামরিক পর্যবেক্ষক এবং দু’জন পশ্চিমী নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান হামলায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷ তাঁরা জানিয়েছেন, খাইবার–পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওই এলাকা থেকে অনেক আগেই জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির সরে গিয়েছিল৷ বালাকোট এবং আশপাশের অঞ্চলে আগে জঙ্গিদের শিবির ছিল৷ কিন্তু ২০০৫ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরে অনেক বিদেশি সংস্থা সেখানে ত্রাণ নিয়ে যাতায়াত শুরু করেছিল৷ চিহ্ণিত হওয়ার আশঙ্কায় সেসময় জঙ্গিরা বালাকোটের এই এলাকা থেকে সরে গিয়েছিল৷

ওয়াশিংটন পোস্ট : এলাকার মানুষ এবং স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীরা আত্মপরিচয় গোপন রেখে জানিয়েছেন, বালাকোট শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে বড় কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি৷

লন্ডন টেলিগ্রাফ : স্থানীয় গ্রামবাসীরা রয়টার্সের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, মঙ্গল বার ভোরে তাঁরা চারটি বড় বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন৷ কিন্তু বোমার ‘শার্পনেলে’ মাত্র একজন আহত হয়েছেন৷ ২৫ বছরের স্থানীয় যুবক মহম্মদ আজমল ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বলেছেন, ‘কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে, একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর বোমা পড়ার চারটি জায়গায় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে দেখেছি৷’

দ্য গার্ডিয়ান : ভারত জুড়ে উৎসব চলছে৷ কিন্তু ফাইটার জেটের হানায় আদৌ গুরুত্বপূর্ণ কোনও ফল হয়েছে, না কি ১৪ ফেব্রুয়ারির আত্মঘাতী হামলার (পুলওয়ামায়) পর জনতার মধ্যে তৈরি হওয়া ক্রোধ প্রশমনের উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ, তা স্পষ্ট নয়৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে রয়টার্স এবং পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গভীর রাতে চার–পাঁচটি বিস্ফোরণ হয়৷ তাতে কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মাটিতে গর্ত হয়ে গিয়েছে৷

লন্ডনের সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘জেন ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ’ : গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য জানাচ্ছে, ওই এলাকা থেকে জঙ্গি শিবির সরানো হয়ে গিয়েছিল৷ রাজনৈতিক প্রতীকী তাৎপর্য ছাড়া ঘটনাটিতে (বিমান হানা) আর কিছুই নেই৷ আসলে ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের তরফে কিছু অ্যাকশন দেখাতে হত৷

(এই সময়–০১.০৩.’১৯

কোনটা সত্য

সরকারি সূত্র

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম

১৷ বিমান হানায় ৩৫০ জঙ্গি নিহত হয়েছে৷ তাদের মধ্যে রয়েছে জইশ–প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজহার ও বিরাট সংখ্যক জইশ জঙ্গি, প্রশিক্ষক, সিনিয়র কমান্ডার, জিহাদি৷ ১৷ কোনও জঙ্গির মৃত্যু হয়নি৷ কিছু পাইন গাছ আর একটা কাক মারা গেছে৷

 

২৷ বালাকোটে সমস্ত জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ২৷ ২০০৫ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরে জঙ্গিরা বালাকোটের এই এলাকা থেকে সরে গিয়েছিল৷ বালাকোট শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে৷

বিজেপি নেতাদের দাবি

অথচ

১৷ প্রধানমন্ত্রী নিজের বাসভবনে তিন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন৷ ১৷ সেনা প্রধানরা জানালেন, জইশ শিবিরের নিশানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ দেওয়াটা সরকারের সিদ্ধান্ত৷
২৷ সারা রাত জেগে অপারেশনের উপর নজর রেখেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ অভিযান শেষ হওয়ার পরে সব ক’টি মিরাজ যুদ্ধবিমানের পাইলটের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ২৷ তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি৷

 

৩৷ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বললেন, বায়ুসেনা হামলায় ২৫০ জঙ্গি মারা গেছে৷

 

৩৷ কেন্দ্রের বিজেপি মন্ত্রী এস এস অহলুওয়ালিয়া বললেন, কোনও প্রাণহানি হয়নি৷ কারণ জঙ্গি ঘাঁটির সামনে ফাঁকা জায়গায় বোমা ফেলে পাকিস্তানকে শুধু বার্তা দেওয়া হয়েছিল৷

 

)

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৩০ সংখ্যা)