প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ–ফেল চায় জনগণ, রাজ্য সরকার টালবাহানা করেই চলেছে

তমলুক

প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালুর দাবিতে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর নেতৃত্বে দীর্ঘ দিন ধরে বহু মিছিল মিটিং ধর্মঘট হওয়া সত্ত্বেও আবার রাজ্য জুড়ে স্বাক্ষর সংগ্রহে নামতে হল৷ অথচ এর কোনও প্রয়োজন হত না যদি রাজ্য সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করত৷ রাজ্যের মানুষ ভুলে যাননি, প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালুর দাবিতে গত বছর ১৭ জুলাই এস ইউ সি আই (সি)–র ডাকা সারা বাংলা সাধারণ ধর্মঘট সফল করে তুলতে রাজ্যের সমস্ত স্তরের মানুষ বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন, তখন তৃণমূল সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এস ইউ সি আই (সি) নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা অবিলম্বে পাশ–ফেল চালু করবেন৷ কিন্তু এক বছর পার হলেও তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি৷ এটা নিছক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর সর্বনাশকে চলতে দেওয়া৷

কলকাতা

১৯৭৯ সালে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সিপিএম সরকারের পাশ–ফেল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীকালে তৃণমূল সরকারের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ–ফেল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরিণাম সম্পর্কে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) সেদিনই যে আশঙ্কার কথা বলেছিল, আজ ভারতের শিক্ষক অভিভাবক এবং শিক্ষার সাথে জড়িত প্রায় সমস্ত মানুষ তাঁদের অভিজ্ঞতায় তার সত্যতা বুঝতে পারছেন যে, পাশ–ফেল না থাকায় দেশের কোটি কোটি ছেলেমেয়ের শিক্ষার মানের কী সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে নানা কমিটি, কমিশন, সংস্থা এমনকী নানা শিক্ষাবিদ ব্যক্তিগত স্তরেও যে সব সমীক্ষা করেছেন, সেই সমস্ত সমীক্ষার রিপোর্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ভারতবর্ষের নিদারুণ শিক্ষাচিত্রকে৷ ক্লাস ফাইভ–সিক্স তো বটেই, নাইনের ছাত্রও এক সংখ্যার যোগ–বিয়োগ করতে পারে না, স্কুলের বহু ছাত্র মাতৃভাষায় রিডিং পড়তে পারে না, এমনকী নিজের নামটুকুও শুদ্ধ করে লিখতে পারে না৷ গোটা দেশজুড়ে এস ইউ সি আই (সি)–র নেতৃত্বে ছাত্র শিক্ষক শিক্ষাবিদ অভিভাবকদের লাগাতার আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত গত ২ জুন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন, পাশ–ফেল ফিরিয়ে আনতে তাঁরা সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে বিল পেশ করবেন৷ তিনি এ–ও জানিয়েছেন, কোন শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালু হবে সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাজ্য সরকারের৷ এত দিন তৃণমূল সরকারের নেতা–মন্ত্রীরা অজুহাত হিসাবে কেন্দ্রের বাধার কথা বলে আসছিলেন৷ ছাত্রস্বার্থকে পুরোপুরি জলাঞ্জলি দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই এতদিন পাশ–ফেল চালুর প্রশ্নে একে অপরকে দোষারোপ করে গেছে৷ এখন আর সেই কায়দায় অযথা কালক্ষেপ করার দিন শেষ৷ তাই অবিলম্বে পাশ–ফেল চালু করার দাবি জানিয়ে এস ইউ সি আই (সি) রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু মুখ্যমন্ত্রীকে আবারও চিঠি দিয়েছেন৷ বলেছেন, রাজ্যের মানুষের দাবিকে মর্যাদা দিয়ে অবিলম্বে প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালু করুন৷ দুঃখের বিষয়, মুখ্যমন্ত্রী সে চিঠির কোনও উত্তর দেননি এবং পাশফেল চালু করার সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেননি৷ ফলে আন্দোলন আবার তীব্র করা জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷ এই অবস্থায় এস ইউ সি আই (সি) ব্যাপক স্বাক্ষর সংগ্রহের ডাক দিয়েছে৷

দলের কয়েক হাজার কর্মীই শুধু স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে নামেননি, রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাজার কমিটি, শ্রমজীবী ও কৃষক সমিতির নেতৃত্ব ও সদস্যদের কাছে, ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক এবং বিভিন্ন সংস্থা ও সমিতিগুলির কাছেও এই স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানকে সফল করার জন্য দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ গ্রাম–গঞ্জ হাট–বাজার স্টেশন বাসস্ট্যান্ড ব্লক মহকুমা জেলা রাজধানী শহর থেকে শুরু করে মফস্বলের গরিব এলাকা, শহরের বস্তি সহ সর্বত্র প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালুর দাবিতে ৮ থেকে ২২ জুন লক্ষ লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে৷ উদ্দেশ্য একটাই, কোনও টালবাহানা, কোনও অজুহাত আর নয়, রাজ্য সরকার অবিলম্বে সার্কুলার জারি করুক, কোটি কোটি ছেলেমেয়ের শিক্ষাজীবন আর ধ্বংস না হতে দিয়ে তারা প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল ফিরিয়ে আনুক অতি দ্রুত৷ রাজ্য সরকার যেন আর কালহরণ করে একটি ছাত্রেরও শিক্ষাজীবন নষ্ট না করে এবং প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ–ফেল চালু করে– এটা আজ সমস্ত মানুষের দাবি৷ সরকার এই দাবির মূল্য দিক৷

(৭০ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা ১৫জুন, ২০১৮)