হাতিবাগানে নলিন সরকার স্ট্রিট যেখানে অরবিন্দ সরণিতে এসে পড়েছে সেই মোড়টাতেই দেওয়াল লিখন চলছিল এস ইউ সি আই (সি) প্রার্থী ডাঃ বিপ্লব চন্দ্রের সমর্থনে। আমরা আট-দশ জন তরুণ ছেলেমেয়ে হইহই করে লিখছি একটি বড় দেওয়াল। অফিস ফেরত আমাদেরই একজন পিঠে ব্যাগ নিয়েই তুলি ধরে বললেন, আমি কিছুটা লিখি। এমন সময় একটা বাইক এসে দাঁড়াল। আরোহী এক তরুণ, সঙ্গে দুই শিশু।
কাদের দেওয়াল লেখা হচ্ছে? বললাম, এস ইউ সি আই কমিউনিস্টের। জানেন তো, উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের একমাত্র বামপন্থী প্রার্থী ডাক্তার বিপ্লব চন্দ্র।
– ও, আমি ভাবলাম সিপিএমের।
– সিপিএমের? সিপিএম তো এ বার উত্তর কলকাতায় প্রার্থী দেয়নি। ছেড়ে দিয়েছে কংগ্রেসকে।
বললেন, ও, শেষ পর্যন্ত এটাই হল! দলের এই লাইন আমি কোনও মতেই মানতে পারিনি। এমন প্রস্তাব শুনেই আমি জোনাল নেতৃত্বের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। তাঁরা বললেন, তাঁদেরও অনেকেরই এতে মত নেই। কিন্তু এটা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, তাই কিছু করার নেই। যুবকটি দুঃখের সঙ্গে বললেন, সারা জীবন কংগ্রেস রাজনীতির বিরোধিতা করে এলাম। এই কংগ্রেসই দেশের বর্তমান করুণ পরিস্থিতির জন্য অনেকখানি দায়ী। এখন সেই কংগ্রেসকে ভোট দিতে হবে? আমি এটা কোনও মতেই পারব না!
বললেন, আমাদের বামপন্থী পরিবার। বাবা-কাকারা কংগ্রেস আমলে মার খেয়েছেন, পাড়া ছাড়া হয়েছেন। কত বামপন্থী কর্মীকে কংগ্রেসি গুন্ডারা খুন করেছে! বলুন তো, এরপরেও কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া যায়? তাঁর চোখেমুখে ক্ষোভ ও বেদনা স্পষ্ট হয়ে উঠল।
বললাম, শুধু পুঁজিপতিদের বিশ্বস্ত একটি দলের সঙ্গেই নয়, ধর্মভিত্তিক একটি সংগঠনের সঙ্গেও তাঁরা জোট গড়ার চেষ্টা দীর্ঘদিন চালিয়েছেন এবং এর দ্বারা পশ্চিমবাংলার মতো একটি রাজ্যে তাদের জায়গা করে দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। বললেন, দলটা আর আদৌ বামপন্থী আছে কি না আমার সন্দেহ হয়।
বললাম, আমরা তো চেয়েছিলাম বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুক। তারপর নির্বাচন এসে গেলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়ূক।
তিনি গভীর আগ্রহে জিজ্ঞেস করলেন, সেটা হল না কেন?
বললাম, কী করে হবে, কংগ্রেস এবং সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সঙ্গ তো তাঁরা ছাড়তে চাইলেন না স্রেফ ভোটের হিসেব করে। এমন জোটে তো কোনও সত্যিকারের বামপন্থী দল যুক্ত হতে পারে না।
বললেন, সে তো অবশ্যই।
কোথায় থাকেন জিজ্ঞেস করায় নিজের নাম-ঠিকানা দিয়ে বললেন, যোগাযোগ করবেন। বললাম অবশ্যই করব।
উজ্জ্বল হয়ে উঠল তাঁর মুখ। হতাশার মাঝে যেন আশার ঝলক দেখতে পেলেন।
প্রচার করতে গিয়ে এমন বহু মানুষেরই দেখা পাচ্ছেন দলের কর্মীরা যাঁরা সিপিএম নেতৃত্বের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। তাঁদের সারা জীবনের বিশ্বাস এবং স্বপ্নকে যে এই নেতারা দু-পায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছেন! একই সঙ্গে তাঁরা এস ইউ সি আই-কমিউনিস্টের সংগ্রামী ভূমিকায় তাঁদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছেন। তাই এস ইউ সি আই (সি) দলের কর্মীরা যখন তাঁদের কাছে যাচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের সাদরে গ্রহণ করছেন, চাঁদা দিচ্ছেন, যোগাযোগ রাখার অনুরোধ করছেন।
অমর মিত্র, কলকাতা-৪