পাঠকের মতামতঃ প্রতিহিংসামূলক, ন্যক্কারজনক

কলকাতায় রাজভবনের সামনে

নাবালিকা সহ অন্যান্য মহিলা কুস্তিগিরদের ওপর যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ও রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে গ্রেপ্তারের দাবিতে দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্তর্জাতিক পদকপ্রাপ্ত কুস্তিগিররা ৩৫ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ ধরনা চালিয়েছেন। তাঁদের সমর্থনে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এবং কিছু সংগঠন মুখর হয়েছে। কলকাতা সহ অন্যত্রও ক্রীড়াপ্রেমী ও ক্রীড়াবিদরা সংহতি মিছিল সংগঠিত করেছেন। সংযুক্ত কিষান মোর্চাও এদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। ক্রীড়াবিদদের ডাকা মহিলা সম্মান মহা পঞ্চায়েত বানচাল করতে দিল্লি পুলিশের এক বিশাল বাহিনী এসে তাদের টেনে-হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে নিগ্রহ করে এবং গ্রেপ্তার করে কার্যত বাসের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ধরনা মঞ্চ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

এই ঘটনার ভিডিও দেখে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা পর্যন্ত একে প্রতিহিংসামূলক ও ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন লোকুর, বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, বিচারপতি এ কে সিক্রি সহ বহু আইনবিদই বলেছেন, যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে, সরকার আইন মানলে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য।

 পূর্বতন বিচারপতিদের এই সব মন্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আইনের ধার ধারে না। শুধু তাই নয়, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে বাঁচাতে অভিযোগকারীদেরই নির্যাতিত হতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বিজেপির বহু নেতা, বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রায়শই ধর্ষণের অভিযোগ উঠছে এবং তাদের শাস্তির পরিবর্তে তাদের ধর্ষণের সপক্ষে সাফাই গাওয়া হচ্ছে। বিলকিস বানুর ধর্ষকদের বিজেপি মাথায় তুলে নেচেছে। বোধহয় তারা এটাই বলতে চায় আইন নয়, নীতি নৈতিকতা নয়– তারা যা করবে তাকেই মেনে নিতে হবে। বিজেপি ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে তারা বিন্দুমাত্র বিরোধিতা বরদাস্ত করতে রাজি নয়। তাদের মতের বিরোধী বহু বুদ্ধিজীবীকে তারা হয় খুন করেছে, নয় জেলে পুরে রেখেছে। অথচ বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ান সাজেন।

যদিও গণতন্ত্র এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা এই দুটি শব্দই ক্ষয়িষ্ণু প্রতিক্রিয়াশীল পুঁজিবাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। পুঁজিবাদের রক্ষক সরকারগুলোর কাছে গণতন্ত্র মানে– পুঁজিপতিদের অবাধ শোষণ করার অধিকার। মন্দা আক্রান্ত পুঁজিবাদকে টিকে থাকতে হলে তাকে ফ্যাসিবাদের আশ্রয় নিতেই হবে। ফ্যাসিবাদ মানে শুধু নির্যাতন নয়, এ হল মনুষ্যত্ব বিনাশকারী একটি ব্যবস্থা। এ মানুষকে মানুষ হতে দেয় না। তাই প্রতিবাদ দেখলেই সে আঁতকে ওঠে। সে জানে মনুষ্যত্ববিশিষ্ট মানুষই প্রতিবাদ করে, আন্দোলন করে। আর আন্দোলনের পথেই গড়ে ওঠে মানুষের চেতনা যে, পুঁজিবাদই তাদের সকল সমস্যার উৎস। তখন তারা চায় পুঁজিবাদকে উচ্ছেদ করতে। তাই আন্দোলন তা যত ছোটই হোক, যে চরিত্রেরই হোক তা পুঁজিপতিদের ঘুম কেড়ে নেয়। তাই তাদের সেবাদাস সরকার চেষ্টা করে আন্দোলনকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে।

গুণাধীশ দাস, বীরভূম