ধরনায় চিটফান্ড প্রতারিতরা

চিটফান্ড কোম্পানির কেলেঙ্কারিতে সর্বস্বান্ত ৫ হাজার মানুষ ২০ ডিসেম্বর কলকাতার রানি রাসমণি রোডে প্রবল শীতের মধ্যে ধরনায় সামিল হলেন।দাবি তুললেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৯ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতিমতো টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া এখনই শুরু করতে হবে।

২০১৩ সালের শুরুতে এ রাজ্য সহ সারা দেশে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির কথা সামনে আসে।যা স্বাধীনতার পর সর্ববৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারি। দেশের ৭০ ভাগ চিটফান্ড কোম্পানির ঘাঁটি ছিল এ রাজ্যে।এখান থেকে তারা আনুমানিক ৩ লক্ষ কোটি টাকা লুঠ করেছে। সরকার চাইলে ২০১৩ সালেই দ্রুত চিটফান্ড কোম্পানিগুলোর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করে তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারত, তা না করায় আজও কোটি কোটি সর্বস্বান্ত মানুষ টাকা ফেরত পাননি।সুপ্রিম কোর্ট ও রাজ্যে রাজ্যে হাইকোর্টে চলা মামলাগুলো নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাননি। কোটি কোটি আমানতকারীর সাথে এটা সরকারের এক মারাত্মক প্রতারণা।

অল বেঙ্গল চিটফান্ড সাফারার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলনে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪-তে বিচারপতি শৈলেন্দ্র প্রসাদ তালুকদারের নেতৃত্বে ওয়ানম্যান কমিটি গঠিত হয়। কমিটি এ পর্যন্ত ৫৪টি কোম্পানির কিছু সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে সর্বস্বান্ত মানুষদের একটি অংশকে টাকা ফেরত দিতে পেরেছে।এ রাজ্য সহ সারা দেশে অন্তত ৩৫ কোটি মানুষের প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা লুঠ হয়েছে।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের মানুষকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরা পুনরায় সরকারে আসীন হলে চিটফান্ড সমস্যা সমাধান হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ২০১৯ সালের ২৬ জুন বিধানসভায় ঘোষণা করেছিলেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবেন। কেউ প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। অথচ বিগত ১৪ বছরে সরকার শিল্পপতি ও কর্পোরেটদের ব্যাঙ্ক ঋণ ও ট্যাক্স মকুব করেছে ২৭ লক্ষ কোটি টাকা। এদের ঋণখেলাপিতে দেশের মানুষের টাকা লুঠ হয়েছে।কিছু ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে, উঠে গেছে বিগত ৫-৬ বছরে।

দেশের মানুষের টাকা সরকারি কোষাগার থেকে লুঠ হয়েছে।ইতিমধ্যে এ রাজ্যে তিন শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। কোটি কোটি সর্বস্বান্ত মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।রাজ্য ও দেশ জুড়ে চরম বেকারত্বের সমাধানের কোনও দায় সরকার না নেওয়ায়, সাধারণ ঘরের যে লাখ লাখ বেকার যুবক যুবতী কোম্পানিগুলোর ফাঁদে পড়ে সাধারণ এজেন্টের কাজ করেছেন, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত।সংগঠনের দাবি, সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো অবিলম্বে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।না হলে সর্বস্বান্ত কোটি কোটি মানুষ মরণপণ লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হবে।