দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের ক্যাম্প

৩ মে থেকেই একটানা চলছে মণিপুরের মানুষের রক্তপাত, হাঙ্গামা, ঘরবাড়ি ধ্বংস। হাজার হাজার মানুষ নানা রিলিফ ক্যাম্পে এক মাসের বেশি সময় কাটাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় খাবার, পোশাক, ওষুধ, পানীয় জল, শৌচাগারের ব্যবস্থা সরকারি তরফে প্রায় নেই বললেই চলে। স্থানীয় কিছু ক্লাব এবং এনজিও যতটুকু ব্যবস্থা করতে পারছে তার ভরসাতেই মানুষের দিন কাটছে। এই পরিস্থিতিতে এস ইউ সি আই (সি) আসাম রাজ্য কমিটি প্রতিবেশী রাজ্যের দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পাঠানোর জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। সংগৃহীত অর্থ তুলে দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের (এমএসসি) হাতে।

এমএসসি-র আসাম রাজ্য ইনচার্জ ডাঃ চিত্রলেখা দাশের নেতৃত্বে চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল সড়ক পথ অবরুদ্ধ থাকায় ২৩ মে বিমানে ইম্ফল বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে চিকিৎসক দলকে স্বাগত জানান ১২৫তম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্মজয়ন্তী কমিটির মণিপুর শাখার সদস্য প্রেমচাঁদ সিং ও তরুণ কুমার সিং। এমএসসি-র সদস্যরা ২৮ মে পর্যন্ত নানা জায়গায় রিলিফ ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মানুষের চিকিৎসা করেন।

ইম্ফলের খুন্দ্রাকপাম এলাকায় নাওরেম বীরহরি কলেজ, প্রত্যন্ত এলাকার নাংখালওয়াই রিলিফ ক্যাম্প, বিষ্ণুপুর জেলায় নেতাজি সুভাষচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত মইরাংয়ের কাছে নোংসাম ও পরে ইথিং এলাকায় রিলিফ ক্যাম্প, থোউবলের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে সরকারি রিলিফ ক্যাম্পেও তাঁরা যান। ইম্ফল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ইংগৌরকে তাঁরা দেখা পান পাহাড় পেরিয়ে আসা দুর্গত মানুষদের। এই ক্যাম্পে বহু মানুষ প্রায় একমাস আশ্রয় নিয়েছেন। ইম্ফলের গৌরগোবিন্দ গার্লস কলেজেও তাঁরা চিকিৎসা করেন।

মেডিকেল টিমের অভিজ্ঞতা, রিলিফ ক্যাম্পগুলিতে পরিষ্কার জামাকাপড় এবং জলের অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগ। অথচ কোনও চিকিৎসার বন্দোবস্ত সরকার করেনি। বহু ক্যাম্পে সরকার সুরক্ষার ব্যবস্থা না করায় হাতে তৈরি বন্দুক আর লাঠি নিয়েই মানুষকে আধুনিক অস্ত্রধারী জঙ্গিদের মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে হচ্ছে। এমএসসি-র স্বেচ্ছাসেবকরা স্থানীয় ভাষা না জানায় কয়েকজন যুবককে তাঁরা দোভাষীর কাজ করার অনুরোধ জানান। ওই যুবকরা সানন্দে সাহায্য করেন।

স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেন জঙ্গিদের হাত থেকে স্থানীয় মানুষকে রক্ষার বদলে সিআরপিএফ নিরীহ মানুষের উপরই গুলি চালাচ্ছে। তাঁরা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় আধাসেনা বাহিনীর নানা অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। অনেক ক্ষেত্রে সর্বস্বহারা মানুষদের জন্য আশেপাশের এলাকা থেকে পোশাক সংগ্রহ করে দেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাই। দেখা যায় দাঙ্গা যতই হোক মানুষ মানুষের পাশে আছে। ইংগৌরকে মেইতেইদের প্রাচীন বিশ্বাসের সানামাহি মন্দিরের শিবিরে কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাই তাঁদের দেখভাল করছেন। এমএসসি-র স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে নিজেদের সমস্যা তুলে ধরেন স্থানীয় মানুষ। তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন পাশাপাশি বাস করা কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। তাঁদের উপলব্ধি, এই জাতিদাঙ্গা কারও ভাল করবে না।

রাজ্যের পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে থাকায় ক্যাম্প চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমএসসি-র স্বেচ্ছাসেবকরা ২৯ মে ইম্ফলের জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের হাতে বাকি ওষুধ তুলে দিয়ে গৌহাটি ফেরেন। স্বেচ্ছাসেবকদের অভিজ্ঞতা হল, কুকি এবং মেইতেই উভয় জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ দাঙ্গা না চাইলেও দুই পক্ষের ক্ষমতালোভী কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী রক্তপাত চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি দলেরও তাতে মদত রয়েছে।