তীব্র পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে মরক্কোর শ্রমজীবী মানুষ

শ্রমিক–কর্মচারীদের্ মজুরি বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জলের বিল, তেল, আটা, জ্বালানি সহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ ও সমস্ত রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবিতে ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র দূরীকরণ দিবসে মরক্কো সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এফএসএম)–এর নেতৃত্বে মরক্কোর ৩০টিরও বেশি শহরে সাধারণ মানুষ ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়৷ আফ্রিকার উত্তর–পশ্চিমের এই দেশটিতে স্বাধীনতা ও আর্থ–সামাজিক অধিকারগুলি সুরক্ষিত করার দাবিতে ও আকাশছোঁয়া দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে তিন দিনের যে বিক্ষোভ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছিল এফএসএম, ১৭ তারিখ ছিল তার শেষদিন৷ বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ওয়ে পার্টি (ডব্লিউডিডব্লিউ) এবং ও মরক্কো অ্যাসোসিয়েশন অফ হিউম্যান রাইটস সংগঠন৷

আন্দোলনকারীদের এক নেতা মুয়াদ এলজোহরি মন্তব্য করেছেন, মরক্কোর জনসংখ্যার অন্তত দুই–তৃতীয়াংশ আজ অত্যন্ত দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷ এই দারিদ্র্য আকাশ থেকে পড়েনি৷ এ হল শাসক পুঁজিপতি শ্রেণির শোষণনীতির পরিণাম৷ তিনি আরও বলেছেন, মরক্কোয় দরিদ্র জনসাধারণের সংখ্যা যখন বেড়ে চলেছে, অধিকাংশের ক্রয়ক্ষমতা যখন ভীষণ ভাবে কমছে, ঠিক তখনই, গত দু’বছরে সরকারের বড়কর্তাদের সম্পদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

রাজধানী রাবাতে পার্লামেন্ট স্কোয়ারের সামনে ১৭ অক্টোবর বিক্ষোভ-আবস্থানের ডাক দিয়েছিল এফএসএম৷ সেখানে আন্দোলনকারীরা পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদের লুঠ ও শোষণের নীতিকে ধিক্কার জানিয়ে বলেন, গোটা বিশ্ব জুড়ে সাধারণ মানুষ আজ ঘৃণ্য পুঁজিবাদী শোষণের শিকার৷ এদিন কাসাব্লাঙ্কা, মারাকেস, টেটুয়ান সহ বিভিন্ন শহরের শান্তিপূর্ণ মিছিলগুলিতে পুলিশ হামলা চালায়৷

কৃষিপ্রধান দেশ মরক্কো বর্তমানে ভয়ঙ্কর খরার কবলে৷ এর সাথে যুক্ত হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা৷ খাদ্যপণ্যের দামও কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে৷ ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার জন্য জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে মালিকদের মুনাফার স্বার্থে মরক্কো সরকার ডিজেল ও গ্যাসোলিন সহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে চলেছে৷

আন্দোলনে যোগদানকারী সংগঠন ডব্লিউডিডব্লিউ–ও একইভাবে মরক্কোর দরিদ্র জনসাধারণের দুর্দশার পিছনে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিমালিকের হাতে দেশের সমস্ত সম্পদ জমা হওয়াকে দায়ী করেছে৷ সংগঠনটির এক নেতৃস্থানীয় আন্দোলনকারী মন্তব্য করেছেন, নিপীড়িত মানুষ সংগঠিত হয়ে যখন এইসব লুটেরা ও তাদের প্রভুদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে, তখনই সমাজ থেকে দারিদ্র্য মুছে ফেলা যাবে৷

শ্রমিক–কর্মচারীদের মজুরি বৃদ্ধি, জ্বালানি তেল সহ খাদ্যদ্রব্যের দাম কমানোর পাশাপাশি এফএসএম মরক্কোর একমাত্র তেল শোধনাগারটির জাতীয়করণের দাবি তুলেছে৷ তেল–লবি যে বিপুল অর্থ লুট করেছে, তা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা৷ এছাড়াও ধর্মঘট ও ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কিত দমনমূলক আইনগুলি প্রত্যাহার করা, ঠিকা–শ্রম প্রথা বন্ধ করা, সকলের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সরকারি পরিষেবা দেওয়া, সকলেব জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, কাজের অধিকার সুনিশ্চিত করা, জমি–মাফিয়াদের জমি লুট বন্ধ করা এবং বেকারভাতা দেওয়ার দাবি উঠেছে৷ আন্দোলনকারীরা মরক্কোর সমস্ত রাজনৈতিক বন্দি ও বেআইনি ভাবে কারারুদ্ধ হয়ে থাকা সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও তুলেছেন৷ মরক্কোর মানুষের অভিজ্ঞতা ভারতের শোষিত মানুষের অভিজ্ঞতার থেকে কিছুমাত্র আলাদা নয়৷ ভারতেও একচেটিয়া পুঁজির তীব্র শোষণে জর্জরিত হচ্ছে সমাজের ৯৯ ভাগ মানুষ৷