টমেটোর দাম ও খড়ের পুতুল সরকার

কলকাতার বিভিন্ন বাজারে এখন টমেটোর দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। এক মাস আগে যে টমেটোর দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে, এখন তার দাম ৬ থেকে ৭ গুণ বেড়েছে। এটা কি কোনও স্বাভাবিক বৃদ্ধি? কৃষক যখন টমেটো বাজারে নিয়ে আসে তার দাম থাকে দেড়-দুই টাকা কেজি। এটাও কোনও স্বাভাবিক দাম নয়। কৃষক এই অস্বাভাবিক কম দামে বিক্রি করে লোকসানের শিকার হয়ে চাষে উৎসাহ হারায়, ঋণগ্রস্ত হয়, আত্মহত্যা করে। আবার প্রতিবাদী কৃষক রাস্তায় টমেটো ডাঁই করে ফেলে ক্ষোভে ফেটে পডে, তার উপর সীমাহীন বঞ্চনার প্রতিবাদ জানায়। প্রতি বছরই এই পরিচিত দৃশ্য দেখা যায়। শুধু দেখা যায় না পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খড়ের পুতুল সদৃশ সরকারের ভূমিকা।

সব খাদ্যপণ্যেরই দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। শুধু বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে অধিকাংশ মানুষের রোজগার চলে যাচ্ছে। রাজ্যে খাদ্য দপ্তর বলে একটা বিভাগ আছে। তার একজন মন্ত্রী আছে, প্রতিমন্ত্রী আছে, বহু সংখ্যক আমলা-অফিসার আছে। এদের পুষতে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এদের কাজ কী? খাদ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বেঁধে রাখতে এদের ভূমিকা কী? এই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে খাদ্যমন্ত্রীর একটা বিবৃতি পর্যন্ত শোনা গেল না। টাস্কফোর্স নামক যে ঢোঁড়া সাপ রাজ্যে গঠন করা হয়েছে, জনগণের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে সে কলকাতার দু-একটা বাজারে গিয়ে ‘দাম বেশি নেওয়া যাবে না’ বাণী দিয়েই নবান্নের ঠাণ্ডা করে ঢুকে পড়েছে। তাদের কথা মতো ব্যবসায়ীরা কেমন দাম নিচ্ছে? টমেটো বিক্রি করছে মাত্র কুড়ি টাকা শ। এদের ভয়ে দোকানদাররা কেজিতে দাম বলতে পারছে না।

গুগল সার্চ করে জানা গেল, রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর নাম জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আরও জানা গেল তিনি ইতিপূর্বে কয়েক টার্ম খাদ্যদপ্তর সামলেছেন। যে মিডলম্যানরা, যে কালোবাজারি চক্র পণ্যের বাজার নিজেদের কব্জায় নিয়ে এসে কেনার সময় জিনিসের দাম কমায়, আর বিক্রি করার সময় দাম বাড়ায়, তারা খাদ্যমন্ত্রী তথা এই সরকারের ভূমিকায় মহা খুশি। তারা দু’হাত উজাড় করে এই সরকারকে ক্ষমতায় থাকার জন্য মদত দিচ্ছে। কারণ সরকার নিষ্ক্রিয় থেকে এদের বিপুল মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফল ভুগছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পোকার উপদ্রব, বৃষ্টি, প্রতিকূল পরিবেশের জন্য এ বছর টমেটোর উৎপাদন কম হয়েছে। তার উপর সাম্প্রতিক বন্যার দরুন কর্নাটক, মহারাষ্ট্র থেকে টমেটো আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এটা কি কোনও নতুন বিষয়? সবাই জানে, কৃষি প্রকৃতিনির্ভর। আবার প্রতি বছর বন্যার জন্য মাল পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়–সেটাও অজানা নয়। এই অস্বাভাবিকতার জন্য দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তাই বলে ৫০০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি? এটা কি পুঁজিবাদী অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম? পুঁজিবাদী অর্থনীতির অতি মুনাফার লোভ চরিতার্থ করতেই পুঁজির জোরে বলীয়ান কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের চক্র সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে এই বৃদ্ধি ঘটিয়েছে।

যে সরকারের হাতে রাজ্য পরিচালনার ভার, দেশ পরিচালনার ভার, তারা এ ভাবে দেশ সেবার নামে পুঁজিপতিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। জনতার স্বার্থ কেবল ভোটের ভাষণ রূপেই থেকে যাচ্ছে।