চোলাই বন্ধে সরব সাংবাদিক ও আন্দোলনকারীর গ্রেফতারির প্রতিবাদ

খড়গপুরের কৌশল্যাতে প্রতিবাদ সভা। ১০ সেপ্টেম্বর

খড়গপুর শহরের ২৪ নং ওয়ার্ডের সাঁজোয়ালে পাটনা পাড়া সহ আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যে রমরমিয়ে চলছে চোলাই মদের ব্যবসা। এলাকায় মদ্যপদের হৈ-হুল্লোড়, অশালীন আচরণে পরিবেশ বিষাক্ত হচ্ছে। সন্ধ্যে হলেই মহিলাদের পথ চলার সঙ্গী আতঙ্ক।

এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানুষ, বিশেষত মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে পুরসভার কাউন্সিলর ও পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানিয়ে এলেও পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার। বরং কার্যত তাদের চোলাই কারবারিদের পক্ষ নিতেই দেখা যায়। প্রতিবাদ জানিয়়ে বাসিন্দাদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে খড়গপুর টাউন থানায় গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন বাসন্তী দাসের নেতৃত্বে এলাকার মহিলারা। সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচী আনন্দবাজার পত্রিকাতে ২৭ আগস্ট এই সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগকারীদের বাড়ি ঘেরাও করে হুমকি দেয় চোলাই কারবারিরা। সে খবরও প্রকাশিত হয় পত্রিকায়। খবর প্রকাশের পরদিন জনৈকা আদিবাসী মহিলা দেবমাল্য বাগচী ও বাসন্তী দাসের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। এলাকার বাসিন্দা সহ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সাংবাদিক ও প্রতিবাদী মহিলাকে হেনস্থা করতে চোলাই কারবারিরাই আদিবাসী মহিলার নাম দিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেছে পুলিশের কাছে। দেখা যায়, চোলাইয়ের বেআইনি কারবার রুখতে যে পুলিশ এতটুকু নড়ে বসেনি, তারাই এই অভিযোগ পেয়ে অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের ধারা প্রয়োগ করে দেবমাল্য বাগচী ও বাসন্তী দাসকে গ্রেফতার করে।

এই ঘটনার বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি আদিবাসী বিকাশ পরিষদের কার্যনির্বাহী সভাপতি পর্যন্ত এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন যে, তাঁরা যখন আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় এই ধারা প্রয়োগের দাবি তোলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই দাবি পুলিশ মানে না। অথচ খড়গপুরের ঘটনায় পুলিশ সেই ধারারই অপপ্রয়োগ ঘটাচ্ছে।

 এসইউসিআই(কমিউনিস্ট)-এর খড়গপুর লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে পুলিশ-প্রশাসনের নির্লজ্জ আচরণের প্রতিবাদে ও অবিলম্বে সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচী ও বাসন্তী দাসের মুক্তির দাবিতে ১০ সেপ্টেম্বর শহরের ২৪ নং ওয়ার্ডের পুরাতন বাজার এবং কৌশল্যাতে প্রতিবাদ সভা হয়। বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সদস্য গৌরীশঙ্কর দাস সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাঁদের আরও দাবি, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক এবং ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকারীদের স্বাধীনতা খর্ব করা চলবে না, সর্বত্র মদ এবং মাদকের প্রসার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং চোলাই-কারবারিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সিপিডিআরএস-এর প্রতিবাদঃ খড়গপুরে সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার সহ সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার দাবিতে মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআরএস-এর দুর্গাপুর শাখার পক্ষ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুরে বিক্ষোভ দেখানো হয়।