চার বিচারপতির প্রকাশ্য অভিযোগ বিচারবিভাগের অধঃপতনেরই পরিচয়

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১৩ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের চারজন বরিষ্ঠ বিচারপতি অতি তৎপরতার সাথে হঠাৎ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে, সুপ্রিম কোর্টের ভিতরকার পরিচালন ব্যবস্থার দুর্বলতা, অনিয়ম ও হস্তক্ষেপের মতো কার্যকলাপ প্রকাশ করে দিয়েছেন৷ সর্বোপরি গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেছেন, প্রধান বিচারপতি গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলির বিচার বেছে বেছে তাঁর পছন্দের জুনিয়র বিচারপতিদের দিচ্ছেন৷ এই ঘটনা সমগ্র দেশের জনগণকে স্তম্ভিত করেছে৷

চার ক্ষুব্ধ বিচারপতি সিবিআই আদালতের বিচারপতি বি এইচ লোয়ার রহস্যজনক মৃত্যু সম্পর্কে একটি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিচারপতি লোয়া নিম্ন আদালতে একটি ভুয়ো সংঘর্ষের মামলা শুনছিলেন, যে মামলায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অভিযুক্তদের অন্যতম৷ স্মরণ করা যেতে পারে, বিচারপতি লোয়ার পরিবারের অভিযোগ ছিল, বিজেপি নেতার সমর্থনে রায় দেওয়ার জন্য তাঁকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে চাওয়া হয়েছিল যা বিচারপতি নিতে রাজি হননি৷ এর পরেই তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে৷ বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু নিয়ে বোম্বে হাইকোর্টে মামলা চলছে৷ ইতিমধ্যে এই মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে সাংবাদিক বি আর লোন সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন করেন৷ বোম্বে লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানায়, সুপ্রিম কোর্টে এই পিটিশন করা হয়েছে বোম্বে হাইকোর্টের শুনানি বন্ধ করতেই৷ বোম্বে হাইকোর্টে বিষয়টি ফয়সালার আগে সুপ্রিম কোর্ট যেন ওই পিটিশন গ্রহণ না করে৷ প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা চিঠিতে চার বিচারপতি ওই মামলার পিটিশন বাতিলের আর্জি জানান৷ কিন্তু প্রধান বিচারপতি তাঁদের সেই চিঠির উত্তরও দেননি৷

 ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা আরও অভিযোগ করেছেন যে, বিচারপতি নিয়োগের ‘কলেজিয়াম’ একটি চক্রের মতো কাজ করছে৷ এই কলেজিয়াম সদস্যদের মধ্যে একটা ‘বার্টার সিস্টেম’ অর্থাৎ দেওয়া–নেওয়ার ব্যাপার চালু আছে৷ বিচার বিভাগের আভ্যন্তরীণ এইসব উদ্বেজনক ঘটনাবলির প্রকাশ সমগ্র দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশের অর্থনৈতিক–রাজনৈতি প্রভৃতি জীবনের সকল ক্ষেত্রে নীতিনৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় আজ ক্রমবর্ধমান, দেশের বিচারব্যবস্থাও আদৌ তার বাইরে নয়৷ এই মুহূর্তের কর্তব্য হচ্ছে, বিচারপ্রক্রিয়ায় এই ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সংগঠিত জনমত গড়ে তোলা যাতে বিচার ব্যবস্থার অধঃপতনে রাশ টানা যায়৷ দেশের জনগণকে আমরা এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে বিচারবিভাগকে অকিঞ্চিৎকর করে দেওয়ার প্রচেষ্টার যে পরিচয় এই চার বিচারপতির বক্তব্যে প্রকাশ পেল, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ চাপ সৃষ্টি করা যায়৷