গদির জোরে নয়, আন্দোলনের পথেই একের পর এক দাবি আদায় (দ্বিতীয় পর্ব)

 

রাজ্যে সরকার গঠনের মহারণ চলছে। সরকার যেমনই হোক একটা হবেই। আমাদের দেশে বা রাজ্যে আর যাই হোক, সরকারের অভাব কোনও কালেই ঘটেনি। কিন্তু অভাব যেটা দেখা গেছে তা হল, বিধানসভার ভেতরে সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে কে লড়বে। এতদিন বিধানসভার ভেতরে এই লড়াইটা লড়েছে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)। বাইরেও তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। জনগণের ন্যায্য দাবিতে বার বার শ্রমিক চাষি ছাত্র যুবক মহিলা লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আন্দোলনের চাপে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি আদায়ও হয়েছে। গত সংখ্যায় শ্রমিক কর্মচারীদের কিছু দাবি আদায়ের সংবাদ আমরা ছাপিয়েছি। এই সংখ্যায় থাকছে ছাত্র সংগঠনএ আই ডি এস ও-র কিছু দাবি আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ।

আন্দোলনের ফলে ফি কমেছে

২০১৮ সালে উত্তর কাঁথির করলদা হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ফি ধার্য হয়েছিল ২,৮০০ টাকা। এ আই ডি এস ও-র আন্দোলনে তা ২০০০ টাকা কমে যায়। ২০১৬ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কুঞ্জরানী বাণীভবন হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে কম্পিউটারে ধার্য ফি ১২০০ টাকা পুরোপুরি মকুব হয়। পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে ভর্তি ফি ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ কমেছে। এ বছর নারায়ণগড় ব্লকে লালবাহাদুর শাস্ত্রী বিদ্যাপীঠ উন্নয়ন ফি বাবদ আদায় করা ৩০০ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। ২০১৯ সালে খড়গপুর কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে ফি ১০০০ টাকা থেকে কমে ৫০০ টাকা হয় এআইডিএসও-র আন্দোলনে। ২০২০ সালে মুর্শিদাবাদ ডি এন কলেজে দ্বিতীয় সেমেস্টারে ফি ১০০০ টাকা থেকে কমে ৫০০ টাকা হয়। তৃতীয় বর্ষে ফি কমে ৭০০ টাকা। এই জেলার বি কে হাইস্কুলে ধার্য রেজিস্টে্রশন ফি পুরোপুরি মকুব হয়। সাদিকপুর হাইস্কুলে ২৬০ টাকা ফি কমে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এআইডিএসও-র আন্দোলনের ফলে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার এনরোলমেন্ট ফি প্রত্যাহার হয়।

রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই স্কুল-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে এআইডিএসও-র আন্দোলনের ফলে ফি কমেছে, কোথাও কোথাও পুরোপুরি প্রত্যাহৃত হয়েছে। নির্বাচিত সরকার শিক্ষায় এত কম বরাদ্দ করে যে, কর্তৃপক্ষ অনেক সময় বাধ্য হয়ে ফি ধার্য করেন। এই হল বর্তমান ও পূর্বেকার সরকারের ভূমিকা। জনগণকে আজ ভাবতে হবে কে জিতলে তার লাভ? কার শক্তি বাড়ালে তার লাভ?

অন্যান্য আন্দোলনে দাবি আদায়

শুধু ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধেই নয়, আরও বহু আন্দোলন জয়যুক্ত হয়েছে।

  • জলপাইগুড়ি জেলার রানীনগর হাইস্কুলে সাইকেল বিতরণে কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এআইডিএসও আন্দোলন গড়ে তোলে। কর্তৃপক্ষ পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়েও আন্দোলন দমাতে পারেনি। অবশেষে সাইকেল বিতরণ করতে বাধ্য হয়।
  • কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে মডেল প্রশ্নপত্র প্রকাশের দাবিতে এআইডিএসও-র আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।
  • কলকাতা শ্যামাপ্রসাদ কলেজে অনৈতিকভাবে টাকা আদায় হচ্ছিল করোনা পরিস্থিতির মধ্যে। এআইডিএসও-র আন্দোলনে কর্তৃপক্ষ সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
  • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও অধীনস্থ কলেজগুলিতে এআইডিএসও-র আন্দোলনে অসম্পূর্ণ ফল দ্রুত প্রকাশ হয়েছে। সেমিস্টার ফি মকুব হয়েছে।
  • দক্ষিণ দিনাজপুরে ২০১৭ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের বই দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে এআইডিএসও। তার ফলে ডিএম বই দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

প্যারামেডিকেল ছাত্র আন্দোলনে জয়

  • সরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্যারামেডিকেল ছাত্রদের কলেজের ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করত। রাজ্যব্যাপী আন্দোলনের চাপে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্যারামেডিকেল ছাত্রদের ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন।
  • আন্দোলনের ফলে প্যারামেডিকেল ছাত্রদের লাইব্রেরি ফেসিলিটি দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
  • আন্দোলনের ফলে প্যারামেডিকেল ছাত্রছাত্রীদের ইন্টার্নশিপ স্টাইপেন্ড মাসিক ৫০০ টাকা বেড়ে ২০০০ টাকা হয়। আন্দোলনের দাবি ১২,০০০ টাকা স্টাইপেন্ড করতে হবে।
  • প্যারামেডিক্যাল কোর্সে ভর্তির জন্য এন্ট্রান্স পরীক্ষা চালু হয়।
  • দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে রাজ্য সরকার প্যারামেডিক্যাল অ্যালায়েড বিল ২০১৫ সালে পাশ করাতে বাধ্য হয়।
  • অষ্টম শ্রেণি ও দশম শ্রেণি পাশ করেই প্যারামেডিক্যাল কোর্স পড়ার কালা সার্কুলার এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় ও পরে তা বাতিল হয়।
  • আন্দোলনের দাবি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী প্যারামেডিকসদের ল্যাটেরাল এন্ট্রির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ দিতে হবে। ২০২০ সাল থেকে হেলথ ইউনিভার্সিটি প্রথম ল্যাটেরাল এন্ট্রি চালু করেছে।
  • রাজ্যব্যাপী দীর্ঘ আন্দোলন ও একাধিক বার স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের পর এক দশকেরও বেশি সময় পর ২০১৭ সাল থেকে মেডিকেল টেকনলোজিস্টদের সরকারি নিয়োগ শুরু হয়েছে।

এই হল আন্দোলনের গুরুত্ব। নির্বাচিত সরকার এগুলি উপেক্ষাই করে গেছে। পাঠক ভাবুন, নির্বাচনে কাকে শক্তিশালী করা দরকার।