কাশ্মীরে ৩৫–এ ধারা বাতিল করা চলবে না –এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)

এস ইউ সি আই (সি)–র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ৬ আগস্ট এক বিবৃতিতে বিজেপি কর্তৃক ৩৫–এ ধারা বাতিলের প্রতিবাদে বলেন, পাকিস্তান কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে কাশ্মীরের জনগণ সেখানকার সংগ্রামী নেতা শের–ই–কাশ্মীর নামে অভিহিত শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে ভারত সরকারের সাথে চুক্তি করে ভারতীয় রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ এই অন্তর্ভুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে কাশ্মীরের কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্বাধিকার রক্ষার জন্য ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারা যুক্ত করা৷ সেই অনুযায়ী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও শেখ আবদুল্লার চুক্তিও হয়৷ কিন্তু প্রথম থেকেই ভারতীয় পুঁজিবাদের স্বার্থরক্ষক কংগ্রেস, বিজেপি ও অন্যান্য দল পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারগুলি এই চুক্তি ক্রমাগত লংঘন করায় এবং কাশ্মীরে আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করায় কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে৷ ৩৭০ ধারা কার্যকর করে এই সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পথে না গিয়ে প্রথমে কংগ্রেস ও পরে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক ও আধা সামরিক দমন–পীড়ন চালিয়ে সংকটকে আরও তীব্রতর করে, যার সুযোগ নিয়ে একদল উগ্রপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মাথা চাড়া দেয়৷ অন্য দিকে বিজেপি ৩৭০ ধারা বাতিলের দাবি তোলায় এই সংকট তীব্রতর হয়৷

আমরা মনে করি, কেন্দ্রীয় সরকার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা করার পথে গেলে এই সংকট সৃষ্টি হত না৷ অন্যদিকে দমন–পীড়ন যত চলছে বিক্ষোভ ও বিরুদ্ধতাও তত বাড়ছে, উগ্রপন্থীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বহু নির্দোষ সাধারণ মানুষও নিহত এবং আহত হচ্ছেন৷ এই অবস্থায়, বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ৩৫–এ ধারা বাতিলের দাবি তুলেছে, যার ফলে কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে সম্পত্তি, সম্পদ এবং অন্যান্য অধিকার হারানোর প্রবল আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে এবং বিক্ষোভ আরও তীব্র রূপ নিচ্ছে৷

আমরা দেশের সকল বাম, গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন, জনগণ এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, নিম্নলিখিত দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে বাধ্য করুন৷ এক) ৩৭০ ধারা সম্পূর্ণ ভাবে চালু করতে হবে৷ দুই) ৩৫–এ ধারা বাতিল করার দাবি প্রত্যাহার করতে হবে৷ তিন) সামরিক–আধা সামরিক দমন–পীড়ন প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক পথে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ কাশ্মীরের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন, কোনও রকম প্ররোচনা ও বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে তাঁরা যেন ভারতের গণতান্ত্রিক জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই আন্দোলনে সামিল হয়ে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হন৷

(৭১ বর্ষ ২ সংখ্যা ১০ আগস্ট, ২০১৮)