ইয়াস ঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি

স্থানীয় বিডিও সঙ্গে পু্নর্বাসন নিয়ে আলোচনায় কুলতলীর প্রাক্তন বিধায়ক জয়কৃষ্ণ হালদার।

২৬ মে ইয়াস ঝড় ও জলোচ্ছাসের প্রকোপে সুন্দরবন অঞ্চলের ব্লকগুলি বিধ্বস্ত হয়েছে। এই এলাকার ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করে দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে এস ইউ সি আই (সি)-র জয়নগর ও কুলতলি বিধানসভা কেন্দ্রের দুই প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড তরুণকান্তি নস্কর ও কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার ওই দিন মুখ্যমন্ত্রীকে নিচের চিঠিটি পাঠানঃ

মাননীয়া মহাশয়া,

গত ২০ মে আপনাকে চিঠি লিখে আমরা আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনের নদীবাঁধ অধ্যুষিত ব্লকগুলিতে দ্রুত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। এখন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস বিধ্বস্ত এই ব্লকগুলির ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে নিম্নলিখিত বক্তব্যে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

১)   আপনি নিচয়ই অবগত আছেন, সাগর ব্লকের গঙ্গাসাগর, মুড়িগঙ্গা ১ ও ২, ধবলাট, ধসপাড়া-সুমতিনগর ২ প্রভৃতি অঞ্চল সমেত প্রায় ৮০ শতাংশ জলের তলায় চলে গেছে। বিপন্ন মানুষ, যাঁরা বিভিন্ন ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা বাড়ি ছাড়ার সময় খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতে পারেননি, তা নোনা জলে ডুবে নষ্ট হয়েছে। ফলে এখনই খাদ্যসংকট দেখা দেবে।

২)   নামখানার মৌসুনী দ্বীপ, মদনগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুড়াখালি, দেবনগর, ট্যাঁকার বাজার, হরিপুর, ঈশ্বরীপুর, নাদাডাঙা প্রভৃতি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে।

৩)   কাকদ্বীপ শহরে জল ঢোকায় বাজারের সকল দোকান ডুবেছে, দোকানের সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কাকদ্বীপের গঙ্গাধরপুর, হারউড পয়েন্ট, ভুবননগর প্রভৃতি জায়গা প্লাবিত হয়েছে।

৪)   পাথরপ্রতিমার ১২টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

৫)   রায়দিঘি ব্লকের দক্ষিণ কঙ্কনদিঘির তিন জায়গায়, পুরকাইত পাড়ায়, দক্ষিণ শংকরের ঘেরি নারায়ণ মন্দির থেকে স্ল্যুইস গেট প্রভৃতি জায়গায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে।

৬)   কুলতলির দেউলবাডি, নলগড়া, কৈখালি, গোপালগঞ্জ, ব্যাঙ্কের ঘাট, সানকিজাহান, দেবীপুর, ভুবনেশ্বরী, ঢাকিরমুখ, ডোঙাজোড়া, অম্বিকানগর, বৈকুন্ঠপুর, নগেনাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে।

৭)   গোসাবার সাতজেলিয়া, রাঙাবেলিয়া, কুমিরমারী, মোল্লাখালি, বাসন্তীর ঝড়খালি ও ভরতগড় এবং ক্যানিংয়ের ইটখোলা প্রভৃতি জায়গা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

৮)   গোসাবার সাতজেলিয়া, কুলতলির ভাসা, কুলপীর ট্যাংরার চর সমেত সুন্দরবনের নানা জায়গায় গ্রামের মানুষ নিজেরা বাঁধ রক্ষা করার কাজ করেছেন, আমাদের দলের কর্মীরা তাতে হাত লাগিয়েছেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দাবি–

ক)   অতীতের মতো দুর্নীতিতে প্রশ্রয় না দিয়ে দলমত নির্বিশেষে ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে যুক্ত করে সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।

খ)   নোনা জল ঢোকায় চাষের জমি ও মাছের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলিকে দ্রুত নোনা জল মুক্ত করা হোক। যে সব পানচাষির বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।

গ)   ভাঙা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িগুলি মেরামতের জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া হোক এবং দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তা বন্টন করা হোক।

ঘ)   যাঁদের দোকানঘর ভেসে গেছে তাঁদের আর্থিক সাহায্য করা হোক।

আমাদের প্রত্যাশা আপনার সরকার জনস্বার্থে দ্রুত এই ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করবে।

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা