আজও স্বপ্ন দেখায় নভেম্বর বিপ্লব

ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় ৭-১৭ নভেম্বর যে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল সমগ্র বিশ্বে। আজও সমগ্র বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ঐতিহাসিক নভেম্বর বিপ্লব। নভেম্বর বিপ্লবের ১০৬ বছর বাদেও নভেম্বর বিপ্লবের গুরুত্ব আজও অম্লান, অনস্বীকার্য ও চিরভাস্বর হয়ে রয়েছে।

নভেম্বর বিপ্লবের ফলে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রথম গড়ে ওঠে। সেখানে মানুষ কর্তৃক মানুষের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন ছিল না। উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান ঘটে সামাজিক মালিকানার পথ প্রশস্ত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সমগ্র বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্টে্রর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিল নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমেই। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বিকল্প উন্নততর গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে সেদিন বাস্তবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তা এখনও শোষিত নিপীড়িত মানুষের কাছে প্রেরণা যোগায়, আশা যোগায়, মুক্তির স্বপ্ন দেখায়।

সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া দারিদ্র, বেকারি, অশিক্ষা, সমস্ত রকম কুসংস্কার, অনাহার, চুরি, দুর্নীতি, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি থেকে মুক্ত হয়েছিল। শিক্ষা ছিল সম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক ও সার্বজনীন। ধর্মনিরপেক্ষ বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাদান করা হত। সর্বপ্রকার চিকিৎসা জনগণ পেত বিনামূল্যে। স্ট্যালিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিকরাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়া হিটলারকে পরাজিত করে এবং বিশ্বকে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিল।

নভেম্বর বিপ্লবের পরে রাশিয়া জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তির উন্নতি করে প্রথম বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। জার শাসন থেকে রাশিয়ার মুক্তি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙক্ষা জাগে। ভারত সহ একাধিক দেশ উপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে একে একে মুক্তি লাভ করে।

এ কথা সত্য যে, রাশিয়া ও চিন এখন আর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টা এবং সংশোধনবাদীরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ধীরে ধীরে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া ও চিনের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকল্প উন্নততর সমাজব্যবস্থার যে দর্শন লেনিন নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা আজও শোষিত, নিপীড়িত মানুষের কাছে প্রেরণা যোগায়, ভরসা যোগায়, আশা যোগায়। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সাময়িক বিপর্যয়ের পর বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও তা কিন্তু একতরফা নয়। বিশ্ব রাজনীতিতে আজ রাশিয়া, চিন, জার্মানি, জাপান এরাও আমেরিকার আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পাল্টা সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। এর ফলে প্রতিদিন যুদ্ধের বিপদ বাড়ছে। প্যালেস্টাইন, ইরাক, সিরিয়া সহ নানা দেশ যুদ্ধবিগ্রহে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

তাই আজও নভেম্বর বিপ্লবে রাশিয়ায় মস্কো শহরে লেনিন-স্ট্যালিনের ছবি সহ মিছিল হচ্ছে। নভেম্বর বিপ্লব শোষিত নিপীড়িত সর্বহারা মানুষকে তার প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে।

শ্যামল দত্ত, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর