আজও লড়াইয়ের প্রেরণা ক্ষুদিরাম-প্রীতিলতা

দিল্লি

অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই যেমন নতুন প্রগতিশীল আদর্শবোধের জন্ম দেয়, একইভাবে উন্নত চিন্তা ও আদর্শবাদ পুষ্ট ও শক্তিশালী করে চলে চলমান জন-আন্দোলনকে। দেশেরপ্রান্তে-প্রত্যন্তে অধুনা ছাত্র ও যুবসমাজ দেশেরই ক্ষমতাসীন শাসক দলের বিরুদ্ধে এক অদম্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ। সকলেই জানেন, সে লড়াই সরকারি অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ২০১৯-এর মাধ্যমে দেশের বিজেপি সরকার চাইছে আপামর জনসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি, ধর্মীয় গোঁড়ামি-অন্ধতা, মৌলবাদী চিন্তার প্রসার ঘটাতে।

শিক্ষা-চাকরি-অন্নসংস্থান-মাথাগোঁজার ঠাঁইয়ের মতো মৌলিক দাবি মেটাতে অপারগ এ সরকার। তীব্র গতিতে বাড়ছে আর্থিক বৈষম্য। তাই মূল সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ঘোরাতে চাইছে। যাতে আম্বানি-আদানি-বিড়লা-গোয়েঙ্কাদের তীব্র পুঁজিবাদী শোষণ দীর্ঘায়িত হয়। ইতিহাস দেখিয়েছে পুঁজিবাদকে বাঁচাতেই, তার তল্পিবাহক রাজনৈতিক দলগুলি প্রগতিশীলতার পথ থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে অন্ধতা ও চিন্তার যন্ত্রীকরণের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের রাস্তা পরিষ্কার করে। বিজেপি-আরএসএসের পরিকল্পনা তাই। কিন্তু তথাকথিত ‘আচ্ছে দিনে’র ঘোর কাটিয়ে মানুষ আজ নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্র যুব-জনতা বিজেপি-আরএসএসের সেই পরিকল্পনা ধরে ফেলেছেন। রুখে দাঁড়িয়েছেন এই ঘৃণ্য চক্রান্তেরবিরুদ্ধে। গত ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সইয়ের মাধ্যমে নাগরিক সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর থেকে সে আন্দোলন সারা দেশে জোরদার আকার ধারণ করেছে।

১৯ ডিসেম্বর ছিল অগ্নিযুগের বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান ও রোশন সিং-এর শহিদ দিবস। ১৯২৭ সালে ওই দিন কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসেবে ঔপনিবেশিক শাসক তথা ব্রিটিশ সরকার তাঁদের ফাঁসি দেয়। শোষণ ও শাসনের স্বার্থে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি’ তথা সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিষ বপন এদেশে করেছিল ইংরেজরাই। একই দিনে রামপ্রসাদ বিসমিল-আসফাকউল্লা খান-রোশন সিং-দের আত্মবলিদান তাই সাম্প্রদায়িক চক্রান্তের বিরুদ্ধে জ্বলন্ত প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত। বিভাজনকারী এনআরসি, সিএএ-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ নিতে ১৯ ডিসেম্বর দিনটি তাই বেছে নিয়েছিলেন এদেশের ছাত্র যুব-জনতা। এসইউআই(সি) দলের ছাত্র যুব সংগঠন ডিএসও-ডিওয়াইওর উদ্যোগে দেশের সর্বত্র ওই দিনটি পালিত হয়েছে যথাযথ মর্যাদায়, সংগ্রামের শপথে। একইভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজেপি-আরএসএস-এর বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে ‘তোমার বুকে নাথুরাম, আমার বুকে ক্ষুদিরাম’, ‘তোমার আছে গোলওয়ালকর-সাভারকর, আমাদের আছে বিদ্যাসাগর’, ‘বিসমিল-আসফাকউল্লার ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকারী বিজেপি-আরএসএসের ঠাঁই নেই’, ‘ক্ষুদিরামের বাংলায় নাথুরামদের় ঠাঁই নেই’। মিছিলে ক্ষুদিরাম-নেতাজি-ভগৎ সিং-প্রীতিলতার ছবি বুকে নিয়ে পথে হাঁটছেন অগণিত ছাত্র যুব-মহিলা। অগ্নিযুগের অগণিত বীর বিপ্লবীরাই আজকের দিনে লড়াইয়ের প্রেরণা।

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ২৫ সংখ্যা)