Breaking News

পাঠকের মতামত : ফুটুক প্রশ্ন, প্রতিবাদ, শ্লেষ

আপনি যখন বাজারে গিয়ে সবজিটা হাতে নিয়ে দেখেও রেখে দিচ্ছেন দামের জন্য, অথবা, মায়ের একটা ওষুধ কিনবেন কি কিনবেন না, ভাবছেন–কারণ, মাসের শেষে পকেটের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, তখন অনন্ত আম্বানির ৫ মিলিয়ন ডলারের হাতঘড়িটা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন মার্ক জুকারবার্গের স্ত্রী।

আপনি যখন ছেলের ডাক্তারি পড়ার প্রচণ্ড ইচ্ছেকে ধামাচাপা দিয়ে এবারেও তাকে কোচিংয়ে দিতে পারলেন না, আর্থিক কারণেই। তখনই ১ কোটি টাকার গাউন পরে আবির্ভূত হচ্ছেন আম্বানি পরিবারের নববধূ। টিভি খুললেই, বা ফেসবুকের রিলস-এর দিকে তাকালেই আপনি দেখতে পাচ্ছেন বৈভব আতিশয্য আর ধনের নির্লজ্জ দেখনদারি। আবার এই দেখতে দেখতে নিজের অবস্থার সঙ্গে নিজের অজান্তেই তুলনা করে ফেলে যাতে আপনার বিস্ময় হঠাৎ বিরক্তি বা রাগে পরিণত না হয়, তাই মাঝে মাঝে দেখানো হচ্ছে অনন্ত আম্বানির নৈতিক চরিত্র, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রমাণ করার জন্য কিছু ইন্টারভিউ, নীতা আম্বানির ফিল্যানথ্রপি আর মুকেশ আম্বানির ‘ডাউন টু আর্থ’ আচরণ। সারা দেশের মেজো-বড়-বিরাট মাপের সেলিব্রিটিদের আশ্রয়স্থল তখন গুজরাটের জামনগর। এত ব্যস্ত সব তারকারা, যাদের ডেট পেতে মাস থেকে বছর পেরিয়ে যেতে পারে, আম্বানি পরিবারের বিয়েতে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

এখন এই কথা কেন বলছি? উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের জাঁকজমক ভারা বিয়ের অনুষ্ঠান, যাকে সোস্যাল মিডিয়ার ভাষায় ‘বিগ ফ্যাট ওয়েডিং’ বলে, তা দেখতে আমরা তো অভ্যস্ত! কই তখন তো এই প্রশ্ন করি না! বরং কব্জিডুবিয়ে সেখানে খেয়ে আসি। নিশ্চয় আসি। কিন্তু প্রথমত, এটা বলা বাহুল্য আমাদের আশেপাশে বিগ ফ্যাট ওয়েডিংয়ের থেকে আম্বানিদের আতিশয্য ধারে-বহরে অতুলনীয় এবং দ্বিতীয়ত, সাধারণ পরিবারের ছেলে বা মেয়ের বিয়েটা হয় বহু বছরের আকাঙ্খা আর সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়ে। তার সঙ্গে এই ভয়ঙ্কর বৈভব প্রদর্শনের তুলনা চলে না। ভুলে গেলে বা না বুঝলে চলবে না, এই ধনকুবেরদের ধনরাশির মধ্যে জমে রয়েছে সারা দেশের ৯০ শতাংশ খেটে খাওয়া জনতার রক্ত, ঘাম বা চোখের জল। আছেই। ঠিক সে জন্যই অতিমারি পরবর্তী সংকটে এই দেশের অধিকাংশ মানুষ যখন সবদিক থেকে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, প্রচণ্ড আর্থিক অনটনে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে, তখন মুকেশ আম্বানি আর ভারতের বিলিয়োনিয়রদের সম্পত্তি বেড়েছে কয়েকশো গুণ। ভুলে গেলে চলবে না দেশের সরকারি মদতেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্ত পরিষেবাতে থাবা বসাচ্ছে কর্পোরেট পুঁজি। মনে রাখতেই হবে মুকেশ আম্বানির পুত্রের ১২৬০ কোটি টাকার প্রি-ওয়েডিংয়েরবিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে একই দেশের সহনাগরিক মরছে ক্ষিদের জ্বালায়, গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্সে নেমেই চলেছে আমাদের দেশ। তাই প্রশ্ন করুন, বিস্মিত ওই দুটো চোখে এবার ফুটুক শ্লেষ, প্রতিবাদ আর প্রশ্ন। একই সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিন সেই সব রাজনৈতিক দলগুলির দিকেও যারা এমন সব কর্পোরেট পুঁজির থেকে টাকা নিয়ে ভোট করতে নামে।

ডাঃ নয়ন পাঠক, কলকাতা