‘নোকরি ডট কম’ একটি কাজ খুঁজে দেওয়ার পোর্টাল। এর একটি সমীক্ষা দেশের কর্মপ্রত্যাশী মানুষের কপালে উদ্বেগের ভাঁজ ফেলেছে। সমীক্ষা দেখিয়েছে, সারা দেশে অফিস-কাছারিতে উঁচুপদে নিয়োগ ২০২২-এর ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩-র ডিসেম্বরে ১৬ শতাংশ কমেছে। ‘নোকরি জব স্পিক’ ইনডেক্স অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তিতে কর্মী নিয়োগ কমেছে ২১ শতাংশ। বিপিওতে কমেছে ১৭ শতাংশ, শিক্ষা ও খুচরো ব্যবসায় ১১ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কমেছে ১০ শতাংশ।
এই তথ্য অবশ্যই কেন্দ্রের মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আসন্ন লোকসভা ভোটের সামনে প্রশ্ন উঠবেই প্রধানমন্ত্রীর বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? কেন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেল না? এই তথ্য রাজ্য সরকারগুলিকেও বিব্রত করবে। কারণ কর্মী নিয়োগ হ্রাসের এই প্রবণতা শুধু কেন্দ্রীয় দফতরেই নয়, সব রাজ্যেরই।
কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন এই নৈরাশ্যব্যঞ্জক চিত্র? এর জন্য দায়ী কেন্দ্রের মোদি সরকারের কর্মী ও কর্ম সংকোচন নীতি, উদারিকরণ ও বেসরকারিকরণ নীতি। উন্নত প্রযুক্তিকে শুধুমাত্র ব্যবহার করা হচ্ছে মুনাফা বাড়ানোর জন্য উৎপাদন ব্যয় কমাতে। তাতে বিলুপ্ত হচ্ছে বহু পদ। নিয়োগ বন্ধ বহু পদে। ভারতের সর্বত্র শিল্পের মন্দাদশা। কিন্তু কেন মন্দাদশা? কারণ জনগণের প্রকৃত আয় বাড়ছে না, যাকে ভিত্তি করে শিল্পপণ্যের বাজার চাঙ্গা হতে পারে। শিল্পের এই মন্দাদশা শুধু ভারতেরই বৈশিষ্ট্য নয়, আজ বিশ্বজুড়ে সঙ্কটগ্রস্ত পুঁজিবাদী দুনিয়ার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ফলে শ্রমিক-প্রধান শিল্প বিশ্বের কোথাওই আর হচ্ছে না। উৎপাদনের উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ মুনাফা হওয়ার ফলে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, শ্রম-সময় বৃদ্ধি এবং কম শ্রমিক নিয়োগ সব রাজ্যে, সব দেশে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে দেখা দিয়েছে।
শিল্পের অবাধ বিকাশের দরজা খুলে দিতে হলে, স্থায়ীভাবে জনগণের আয় বাড়াতে হবে, যা আজ আর পুঁজিবাদ করতে পারে না। দৃঢ়ভাবে এই কথাটা এসইউসিআই(সি) ছাড়া কোনও দলই বলে না। একের পর এক সমীক্ষা এসইউসিআই (সি)-র এই বিশ্লেষণকে সত্য প্রমাণ করছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে মুনাফার জন্য উৎপাদনের পরিবর্তে সমাজের সকল মানুষের প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বদলই আজ জরুরি কর্তব্য। না হলে কর্মসংস্থানের সঙ্কট ক্রমাগত গভীর হতেই থাকবে।