বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ও রুশ বিপ্লবের রূপকার কমরেড লেনিনের মৃত্যুশতবর্ষ উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে বর্ষব্যাপী কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে ভি আই লেনিনের ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ রচনাটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। অনুবাদ সংক্রান্ত যে কোনও মতামত সাদরে গৃহীত হবে। এ বার বিংশ কিস্তি।
সুবিধাবাদীদের দ্বারা মার্ক্সবাদের বিকৃতি
রাষ্ট্রের সাথে সমাজ বিপ্লবের এবং সমাজ বিপ্লবের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রশ্ন নিয়ে, ঠিক যেমন সাধারণভাবে বিপ্লবের প্রশ্ন নিয়েও দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের (১৮৯৪-১৯১৪) বিশিষ্ট তাত্ত্বিক ও প্রচারকরা খুব সামান্যই ভেবেছেন। কিন্তু সুবিধাবাদের ক্রমবিকাশের সবচেয়ে বড় চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য হল, তাঁরা এই প্রশ্নের মুখোমুখি হলেই, হয় একে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, আর না হয় লক্ষই করেননি। এই সুবিধাবাদই ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিককে ভাঙনের দিকে নিয়ে গেছে।
সাধারণভাবে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্রের সাথে সর্বহারা বিপ্লবের সম্পর্কের প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা সুবিধাবাদকে সাহায্য ও শক্তিশালী করেছে। এর ফলে মার্কসবাদের বিকৃতি ঘটেছে এবং তার চূড়ান্ত অপব্যাখ্যা হয়েছে।
এই শোচনীয় প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণনা করার জন্য আমরা মার্কসবাদের দুই প্রখ্যাত তাত্ত্বিক প্লেখানভ ও কাউটস্কির কথা আলোচনা করব।
১। নৈরাজ্যবাদীদের সঙ্গে প্লেখানভের বিতর্ক
সমাজতন্ত্রের সাথে নৈরাজ্যবাদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্লেখানভ একটা বিশেষ পুস্তিকা লিখেছিলেন। পুস্তিকাটির নাম ‘নৈরাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্র।’ জার্মানিতে এই পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯৪ সালে।
এই বিষয়টা আলোচনা করতে গিয়ে প্লেখানভ নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সবচেয়ে জরুরি, সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক, রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে বিপ্লবের সম্পর্ক এবং সাধারণভাবে রাষ্ট্রের প্রশ্নটি সুকৌশলে একেবারে এড়িয়ে গেছেন। তাঁর পুস্তিকাটি দুটি বিভাগে বিভক্ত। একটিতে আছে ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক আলোচনা, যেখানে স্টার্নার, প্রুধোঁ ও অন্যান্যদের ধ্যান-ধারণার ইতিহাস নিয়ে মূল্যবান আলোচনা আছে। অন্যটি পণ্ডিতমূর্খসুলভ। নৈরাজ্যবাদী ও ডাকাতের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই– এই নিয়ে এই বিভাগটিতে উদ্ভট আলোচনা আছে।
এই পুস্তিকা কৌতুককর নানা বিষয়ের সংমিশ্রণ। রুশ বিপ্লবের প্রাক্কালে এবং বিপ্লবের সময়ে প্লেখানভের সমগ্র কার্যকলাপের বৈশিষ্ট্য এতে পরিস্ফুট হয়েছে। বস্তুত, ১৯০৫ সাল থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে প্লেখানভ নিজেকে একজন আধা তাত্ত্বিক ও আধা কূপমণ্ডুক হিসাবে প্রকাশ করেছেন, যিনি রাজনীতিতে বুর্জোয়া শ্রেণিকে অনুসরণ করেছেন।
নৈরাজ্যবাদীদের সঙ্গে বিতর্কে মার্ক্স ও এঙ্গেলস বিপ্লবের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী, সে বিষয়ে তাঁদের মতামত কেমন বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, আমরা তা দেখেছি। ১৮৯১ সালে, মার্ক্সের ‘ক্রিটিক অব দি গোথা প্রোগ্রাম’-এর ভূমিকায় এঙ্গেলস লিখেছেন, ‘আমরা’– অর্থাৎ মর্ক্স ও এঙ্গেলস– ‘‘সেই সময়ে, প্রথম আন্তর্জাতিকের হেগ কংগ্রেসের বড় জোর দুই বছর পরে, বাকুনিন ও তাঁর নৈরাজ্যবাদী সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে ঘোরতর সংগ্রামে লিপ্ত ছিলাম।’’
নৈরাজ্যবাদীরা প্যারিস কমিউনকে তাঁদেরই নিজস্ব বলে, তাঁদের মতবাদের যাথার্থ্যের প্রমাণ বলে দাবি করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা প্যারিস কমিউনের শিক্ষা এবং সেই শিক্ষা সম্পর্কে মার্ক্সের বিশ্লেষণ বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিলেন। পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে কি অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে? ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের জায়গায় কী কায়েম হওয়া উচিত?– নৈরাজ্যবাদ এমন কিছুই দেয়নি যা দিয়ে এইসব সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক সমস্যার সত্যকার সমাধানের এমনকী কাছাকাছিও পৌঁছনো যায়।
রাষ্ট্র সম্পর্কে সমস্ত আলোচনা পাশ কাটিয়ে গিয়ে ‘নৈরাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্র’ নিয়ে আলোচনা করা এবং কমিউনের আগে এবং পরে মার্ক্সবাদের সমগ্র বিকাশকে লক্ষ্য না করার অর্থ হল অনিবার্য ভাবে সুবিধাবাদের পাঁকে ডুবে যাওয়া। যে দুটি প্রশ্নের কথা এইমাত্র বলা হল, সেগুলি আদৌ তোলা না হোক, সুবিধাবাদ ঠিক সেটাই চায়। ঠিক এটাই সুবিধাবাদের পক্ষে একটা জয়।
২. সুবিধাবাদীদের সাথে কাউটস্কির বিতর্ক
সন্দেহ নেই, অন্য যে কোনও ভাষার তুলনায় রুশ ভাষাতে কাউটস্কির রচনা অনেক বেশি অনূদিত হয়েছে। কোনও কোনও জার্মান সোস্যাল ডেমোক্র্যাট ঠাট্টা করে বলেন, কাউটস্কির রচনা রাশিয়াতে যত পড়া হয় জার্মানিতে তত পড়া হয় না। বিনা কারণে তিনি এই কথা বলেননি। (বন্ধনীর মধ্যে আমরা বলতে পারি, যারা এই রসিকতা প্রথম করেছিল, তারা যতটা ভাবতে পেরেছিল, তার চেয়ে এই রসিকতার ঐতিহাসিক তাৎপর্য অনেক গভীর। কারণ ১৯০৫ সালে রুশ শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে দুনিয়ার সেরা সোস্যাল ডেমোক্রেটিক সাহিত্যের সেরা রচনার বিপুল ও অভূতপূর্ব চাহিদা দেখা দিয়েছিল। অন্যান্য দেশের তুলনায় অশ্রুতপূর্ব পরিমাণে তাঁরা এই সব রচনার অনুবাদ আমদানি করে প্রতিবেশী এক উন্নততর দেশের বিপুল অভিজ্ঞতাকে রাশিয়ার নবীন সর্বহারা আন্দোলনের মাটিতে রোপণ করেছিলেন)।
জনসাধারণের মধ্যে মার্ক্সবাদের প্রচার করা ছাড়াও সুবিধাবাদীদের সঙ্গে, তাদের নেতা বার্নস্টাইনের সঙ্গে বিতর্কের কারণে কাউটস্কি আমাদের দেশে বিশেষভাবে পরিচিত। কিন্তু একটা ঘটনা প্রায় কেউই জানে না। আমরা যদি অনুসন্ধান করে দেখি, ১৯১৪-১৫ সালের সেই সঙ্কটময় দিনগুলোতে কাউটস্কি কীভাবে অবিশ্বাস্য রকমের কলঙ্কজনক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিলেন, কীভাবে তিনি সোস্যাল শোভিনিজমের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাহলে আমরা একে উপেক্ষা করতে পারব না। ব্যাপারটি ছিল এই রকমঃ ফ্রান্সে (মিলেরা ও জোরে) এবং জার্মানিতে (বার্নস্টাইন) সুবিধাবাদের প্রখ্যাত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করার কিছুকাল আগে কাউটস্কির মধ্যে বেশ খানিকটা দোদুল্যমানতা দেখা গিয়েছিল। ১৯০১-০২ সালে স্টুটগার্ট থেকে প্রকাশিত মার্ক্সবাদী পত্রিকা জারিয়া (ভোর)-তে সর্বহারার বিপ্লবী মতবাদ সমর্থন ও প্রচার করা হত। এই পত্রিকাটি কাউটস্কির সঙ্গে বিতর্কে নামতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ, ১৯০০ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিক সোস্যালিস্ট কংগ্রেসে তিনি যে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, তা ছিল সুবিধাবাদের প্রতি নরম, ভাসাভাসা ও আধাখ্যাঁচড়া। জারিয়া বলেছিল, কাউটস্কির এই প্রস্তাবকে যেমন খুশি তেমন ব্যাখ্যা করা যায়। জার্মানিতে কাউটস্কির লেখা চিঠিপত্র থেকে বোঝা যায়, বার্নস্টাইনের বিরোধিতায় নামার আগেও তিনি কম দ্বিধা প্রকাশ করেননি।
যাই হোক, এর থেকে বহুগুণ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল, সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁর বিতর্ক। মার্ক্সবাদের প্রতি কাউটস্কির সম্প্রতিকালের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস যদি পর্যালোচনা করি, আমরা দেখতে পাবো, সেই বিতর্কে তিনি যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যে পদ্ধতিতে তা আলোচনা করেছেন, তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্ক্সবাদের শিক্ষা থেকে ক্রমাগত দূরে সরে গিয়ে সুবিধাবাদের দিকে ঢলে পড়ার ইতিহাস।
সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, ‘বার্নস্টাইন ও সোস্যাল ডেমোক্রেটিক কর্মসূচি’র কথাই ধরা যাক। কাউটস্কি বিস্তারিতভাবে বার্নস্টাইনের মতামত খণ্ডন করেছেন। কিন্তু সেখানে লক্ষ করার মতো বিষয় হচ্ছেঃ
বার্নস্টাইন তাঁর কুখ্যাত গ্রন্থ ‘প্রেমিসেস অফ সোস্যালিজম’-এ মার্ক্সবাদকে ‘ব্ল্যাংকিবাদ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন (ঠিক এই অভিযোগই তারপর থেকে রাশিয়ার সুবিধাবাদীরা ও উদারবাদী বুর্জোয়ারা বিপ্লবী মার্ক্সবাদী, বলশেভিকদের বিরুদ্ধে হাজার বার করেছেন)। এই প্রসঙ্গে বার্নস্টাইন বিশেষভাবে মার্ক্সের ‘ফ্রান্সে গৃহযুদ্ধ’ বইটি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং আমরা দেখেছি, কমিউনের শিক্ষা প্রসঙ্গে মার্ক্সের মতামতকে প্রুধোঁর সঙ্গে এক করে দেখাবার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। ১৮৭২ সালে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ভূমিকায় যে সিদ্ধান্তের উপর মার্ক্স বিশেষ জোর দিয়েছেন, তাকেই বার্নস্টাইন বেছে নিয়েছেন। মার্ক্সের এই সিদ্ধান্ত হলঃ ‘শ্রমিক শ্রেণি আগের তৈরি রাষ্ট্রযন্ত্র শুধু করায়ত্ত করে তাকে নিজের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করতে পারে না।’
মার্ক্সের এই উক্তি বার্নস্টাইনকে এতই ‘খুশি’ করেছিল যে, তিনি তিন তিনবার তাঁর গ্রন্থে এই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং সর্বাপেক্ষা বিকৃত সুবিধাবাদীসুলভ অর্থে এর ব্যাখ্যা করেছেন।
আমরা দেখেছি মার্ক্স বোঝাতে চেয়েছেন যে, শ্রমিক শ্রেণিকে সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে হবে, ভাঙতে হবে, ছিন্নভিন্ন করতে হবে (‘বিস্ফোরণ’– এঙ্গেলস এই অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করেছেন)। কিন্তু বার্নস্টাইনের মনে হয়েছে, মার্ক্স যেন এই কথার দ্বারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সময়ে অত্যধিক বিপ্লবী উদ্দীপনা দেখানোর বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণিকে সতর্ক করেছেন।
মার্ক্সের চিন্তার এর চেয়ে বেশি স্থূল ও জঘন্য বিকৃতির কথা কল্পনাও করা যায় না।
তা হলে বার্নস্টাইনের মতবাদের বিস্তারিত বিরোধিতার কাজে কাউটস্কি কেমনভাবে এগিয়েছিলেন?
এই প্রশ্নে সুবিধাবাদীদের হাতে মার্ক্সবাদের যে চরম বিকৃতি ঘটেছে, কাউটস্কি তার বিশ্লেষণ করেননি। মার্ক্সের ‘গৃহযুদ্ধ’ গ্রন্থের ভূমিকায় এঙ্গেলসের লেখা উপরে উদ্ধৃত অনুচ্ছেদ দেখিয়ে তিনি বলেছেন, মার্ক্সের মতে শ্রমিক শ্রেণি আগের তৈরি রাষ্ট্রযন্ত্রটি শুধু দখল করেই থাকতে পারে না। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে, দখল করতে পারে এবং সেটাই সব। ১৮৫২ সাল থেকে মার্ক্স বলে আসছেন যে, সর্বহারা বিপ্লবের কাজ হল রাষ্ট্রযন্ত্রকে ‘ধ্বংস’ করা– এটাই মার্ক্সের প্রকৃত মত। বার্নস্টাইন ঠিক এর বিপরীত মতকেই মার্ক্সের মত বলে প্রচার করেন। বার্নস্টাইনের এই অপপ্রচার সম্পর্কে কাউটস্কি একটি কথাও বলেননি।
এর ফল হয়েছে এই যে, সর্বহারা বিপ্লবের কর্তব্য প্রসঙ্গে মার্ক্সবাদ ও সুবিধাবাদের মধ্যে সবচেয়ে মূলগত পার্থক্যটি কাউটস্কি চেপে গেছেন!
‘‘সর্বহারা একনায়কত্বের সমস্যা সমাধানের ভার আমরা অনায়াসে ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিতে পারি’’– বার্নস্টাইনের ‘‘বিরুদ্ধে’’ লেখার সময় এ কথা বলেন কাউটস্কি (জার্মান সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৭২)।
বার্নস্টাইনের বিরুদ্ধে এ কোনও বিতর্ক নয়। প্রকৃতপক্ষে এ হল বরং বার্নস্টাইনকেই সুবিধা দেওয়া, সুবিধাবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। কারণ সুবিধাবাদীরা সর্বহারা বিপ্লবের কর্তব্য প্রসঙ্গে যাবতীয় মূল প্রশ্ন ‘‘ভবিষ্যতের হাতে অনায়াসে ছেড়ে দেওয়া’’-র চেয়ে ভালো আর কিছু বর্তমানে চান না।
১৮৫২ থেকে ১৮৯১ সাল– এই চল্লিশ বছর ধরে মার্ক্স ও এঙ্গেলস সর্বহারা শ্রেণিকে শিখিয়েছেন যে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে তাঁদের ধ্বংস করতেই হবে। তবুও, সুবিধাবাদীরা যখন মার্ক্সবাদের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাসঘাতকতা করল, ১৮৯৯ সালে সেই বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাউটস্কি কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করেন। রাষ্ট্র ধ্বংস করা দরকার কি না, এই প্রশ্নের বদলে তিনি রাষ্ট্র ধ্বংসের মূর্ত রূপ কী হবে এই প্রশ্ন হাজির করেন। এবং তারপর এই ‘তর্কাতীত’ (এবং নিষ্ফল) কূপমণ্ডুক সত্যের আড়ালে আশ্রয় গ্রহণ করে বলেন, এই মূর্ত রূপগুলি আগে থেকে জানা যায় না!
শ্রমিক শ্রেণিকে বিপ্লবের কাজে প্রস্তুত করার সর্বহারা পার্টির কর্তব্য প্রসঙ্গে মার্ক্স ও কাউটস্কির মতামতের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান রয়েছে।
কাউটস্কির পরবর্তী ও আরও পরিণত বইটি প্রসঙ্গে এবার আসা যাক। এই বইটিও অনেকটা সুবিধাবাদী সুলভ ভুলভ্রান্তির সমালোচনা করার জন্য লেখা হয়েছিল। এই পুস্তিকার নাম হল ‘দি সোস্যাল রেভলিউশন’। এই গ্রন্থে লেখক আলোচনার বিশেষ বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছেন ‘সর্বহারা বিপ্লব’ ও ‘সর্বহারা রাজ’। এই পুস্তিকায় তিনি অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন, কিন্তু রাষ্ট্র প্রসঙ্গে আলোচনা তিনি স্রেফ এড়িয়ে গিয়েছেন। সমস্ত পুস্তিকা জুড়ে লেখক শুধু রাষ্ট্রক্ষমতা অধিকার করার কথা বলেছেন– আর কিছু বলেননি। অর্থাৎ এমন একটি সূত্র তিনি বেছে নিয়েছেন যাতে সুবিধাবাদীদের সুবিধা দেওয়া হয়। সেই সূত্রে তিনি রাষ্ট্রযন্ত্র ধ্বংস না করে ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেছেন। ১৮৭২ সালে কমিউনিস্ট ইস্তাহারের কর্মসূচিতে মার্ক্স যে চিন্তাকে বাতিল বলে ঘোষণা কর়েছিলেন, ১৯০২ সালে কাউটস্কির হাতে তা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে!
এই পুস্তিকার় একটা পরিচ্ছেদে ‘সমাজ বিপ্লবের রূপ ও হাতিয়ার’ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে কাউটস্কি রাজনৈতিক গণধর্মঘট, গৃহযুদ্ধ, ‘আমলাতন্ত্র ও সেনাবাহিনীর মতো আধুনিক বৃহৎ রাষ্ট্রের ক্ষমতার উপকরণ’ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কিন্তু কমিউনের অভিজ্ঞতা শ্রমিকদের ইতিমধ্যেই যে শিক্ষা দিয়েছে, সে সম্পর্কে একটি কথাও তিনি বলেননি। স্পষ্টতই, রাষ্ট্রের প্রতি ‘অন্ধ ভক্তি’-র বিরুদ্ধে, এঙ্গেলস বিশেষ করে জার্মান সমাজতন্ত্রীদের যে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, তা অকারণে ছিল না।
কাউটস্কি বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন এইভাবে যে, বিজয়ী সর্বহারা শ্রেণি ‘গণতান্ত্রিক কর্মসূচি কাজে পরিণত করবে’, এবং তিনি তার ধারা-উপধারা রচনায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। কিন্তু ১৮৭১ সাল সর্বহারা গণতন্ত্রের দ্বারা বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে দমনের যে নতুন শিক্ষা আমাদের দিয়েছিল, সে প্রসঙ্গে তিনি একটা কথাও বলেননি। ‘গুরুগম্ভীর’ মামুলি যুক্তির অবতারণা করে তিনি প্রশ্নটির নিষ্পত্তি করেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ
‘তবুও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বিজয় অর্জন করতে পারব না। বিপ্লব অর্থেই বুঝতে হবে, একটা দীর্ঘস্থায়ী এবং সুগভীর সংগ্রাম, যা আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাবে।’
ঘোড়া ওটস খায় বা ভলগা নদী কাস্পিয়ান সাগরে পড়েছে, এই কথাগুলো যেমন সত্য, নিঃসন্দেহে এই ‘বলার অপেক্ষা রাখে না’ কথাগুলোও সেই ধরনের সত্য। শুধু দুঃখের বিষয় হল, ‘সুগভীর সংগ্রাম’ সম্পর্কে এই গালভরা ফাঁকা কথাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে বিপ্লবী সর্বহারা শ্রেণির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। বিষয়টি হল ঃ রাষ্ট্র সম্পর্কে, গণতন্ত্র সম্পর্কে সর্বহারা বিপ্লবের ‘সুগভীর’ প্রকৃতি সম্পর্কিত, যা আগেকার় অ-সর্বহারা বিপ্লবগুলি থেকে একেবারেই আলাদা।
এই প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে, কাউটস্কি প্রকৃতপক্ষে এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে সুবিধাবাদকে সুযোগ করে দেন। যদিও, মুখে তিনি সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে প্রবল যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ‘বিপ্লবের ধারণার’ গুরুত্বের উপর বিশেষ জোর দেন (এই ‘ধারণা’ কতটা কার্যকর, যখন কেউ শ্রমিকদের বিপ্লবের সুনির্দিষ্ট শিক্ষা দিতে ভয় পায়?), অথবা বলেন, ‘বিপ্লবী আদর্শবাদ সবকিছুর আগে’, বা ঘোষণা করেন যে, ইংল্যান্ডের শ্রমিকরা এখন ‘পেটি বুর্জোয়াদের থেকে একটু বেশি’।
কাউটস্কি লিখেছেন, ‘নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান– আমলাতান্ত্রিক(??), ট্রেড ইউনিয়ন, সমবায়, ব্যক্তিগত– সমাজতান্ত্রিক সমাজে এরা পাশাপাশি থাকতে পারে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলি আমলাতান্ত্রিক (??) সংগঠন ছাড়া চলতে পারে না। যেমন রেলব্যবস্থা। এখানে গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলি এই ধরনের রূপ নিতে পারেঃ শ্রমিকরা প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে, যে প্রতিনিধিরা পার্লামেন্ট ধাঁচের প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ম-কানুন তৈরি করে এবং আমলাতান্ত্রিক যন্ত্রটির কাজকর্ম দেখভাল করে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মের দায়িত্ব চলে যেতে পারে ট্রেড ইউনিয়নের হাতে, অন্যগুলো সমবায় সংগঠনে পরিণত হতে পারে’ (পৃষ্ঠা ১৪৮ ও ১১৫, রুশ অনুবাদ, ১৯০৩ সালে জেনেভায় প্রকাশিত)।
এই যুক্তি ভ্রান্ত। কমিউনের শিক্ষাকে গ্রহণ করে সত্তরের দশকে মার্ক্স ও এঙ্গেলস যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তার তুলনায় এ হল এক পা পিছনের দিকে হাঁটা।
যে ‘আমলাতান্ত্রিক’ সংগঠনকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়, সেই দিক থেকে দেখতে গেলে রেলওয়ে এবং বৃহদায়তন মেশিন শিল্পের যে কোনও ধরনের প্রতিষ্ঠান, যে কোনও কারখানা, বড় গুদামঘর কিংবা বৃহদায়তন পুঁজিবাদী কৃষি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এই ধরনের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে চাই সুকঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা, নিজের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনে প্রত্যেকের চাই চূড়ান্ত নির্ভুলতা। কারণ তা না হলে গোটা প্রতিষ্ঠানটির কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বা মেশিনপত্র কিংবা উৎপাদিত দ্রব্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকরা অবশ্যই ‘প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, যারা সংসদ ধরনের একটা কিছু তৈরি করবে।’
কিন্তু গোটা জিনিসটি হল এই যে, ‘সংসদ ধরনের’ এই প্রতিষ্ঠান, বুর্জোয়া-সংসদীয় প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা যা বুঝি, তা হবে না। আসল কথা হল, এই ‘সংসদ ধরনের একটা কিছু’ কেবল ‘নিয়ম কানুন তৈরি এবং আমলাতান্ত্রিক যন্ত্রের পরিচালনা তদারক’ করবে না– কাউটস্কি অবশ্য তেমনই মনে করেন, তাঁর ধারণা বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থার কাঠামোর সীমা পার হতে পারে না। সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রমিক ডেপুটিদের নিয়ে গঠিত ‘পার্লামেন্ট ধরনের’ ব্যবস্থায় অবশ্যই ‘রাষ্ট্রযন্ত্রে’র ‘কাজকর্মের নিয়ম-কানুন তৈরি করা হবে এবং কাজকর্মের তদারকিও করা হবে’, কিন্তু এই যন্ত্র ‘আমলাতান্ত্রিক’ হবে না। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে শ্রমিক শ্রেণি পুরনো আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করবে, তারা এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে সমূলে উৎপাটিত করবে, এর একটি ইটকেও অবশিষ্ট রাখবে না এবং তার জায়গায় এই একই শ্রমিক ও কর্মচারীদের নিয়ে তৈরি নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। এই শ্রমিক ও কর্মচারীরা যাতে আমলাতান্ত্রিক না হতে পারে সে জন্য তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ব্যবস্থা সম্পর্কে মার্ক্স এবং এঙ্গেলস বিস্তারিভাবে বলেছেনঃ ১) শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচিত ডেপুটিদের যে কোনও সময়ে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অধিকার থাকবে। ২) এই ডেপুটিদের বেতন সাধারণ শ্রমিকের চেয়ে বেশি হবে না। ৩) সকলকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির কাজে অংশগ্রহণ করানো যাতে সকলেই কিছু সময়ের জন্য ‘আমলা’ হবে, এবং তাই কেউই ‘আমলাতান্ত্রিক’ হতে পারবে না।
মার্ক্সের চিন্তা কাউটস্কি আদৌ প্রতিফলিত করেননি। মার্ক্স বলেছেনঃ ‘কোনও সংসদীয় প্রতিষ্ঠান নয়, কমিউনকে হতে হত কাজ পরিচালনা করার প্রতিষ্ঠান– একই সঙ্গে আইন তৈরির ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করার প্রতিষ্ঠান’।
কাউটস্কি বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে সর্বহারা গণতন্ত্রের পার্থক্য আদৌ বুঝতে পারেননি। বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রের (জনগণের জন্য নয়) সাথে আমলাতন্ত্রকে (জনগণের বিরুদ্ধে) এক সাথে যুক্ত করে। আর সর্বহারা গণতন্ত্র আমলাতন্ত্রকে সমূলে উচ্ছেদ করার জন্য তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এই ব্যবস্থাকে একেবারে শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করে আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণ অবলুপ্ত করে এবং জনগণের জন্য পূর্ণ গণতন্ত্র প্রবর্তন করে।
কাউটস্কি এখানে সেই রাষ্ট্রের প্রতি পুরনো ‘অন্ধ ভক্তি’ এবং আমলাতন্ত্রের প্রতি ‘অন্ধ বিশ্বাস’-এর পরিচয় দিয়েছেন।
আমরা এখন সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে কাউটস্কির সর্বশেষ ও সবচেয়ে উৎকৃষ্ট রচনা ‘ক্ষমতালাভের পথ’ (‘রোড টু পাওয়ার’) পুস্তিকাটি সম্পর্কে আলোচনা করব (আমার বিশ্বাস, এই পুস্তিকা রুশ ভাষায় অনূদিত হয়নি। কারণ ১৯০৯ সালে যখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেই সময় রাশিয়ায় দারুণ প্রতিক্রিয়ার যুগ)। এই পুস্তিকায় যথেষ্ট অগ্রগতির পরিচয় লক্ষ করা যায়। কারণ, ১৮৯৯ সালে বার্নস্টাইনের বিরুদ্ধে লেখা পুস্তিকার মতো এই পুস্তিকাতে সাধারণভাবে বৈপ্লবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি এবং ১৯০২ সালে প্রকাশিত ‘সমাজ বিপ্লব’ নামের পুস্তিকার মতো এই পুস্তিকায় ঘটনাকাল উপেক্ষা করে সমাজ বিপ্লবের ভূমিকা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়নি। যে সব সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য আমরা স্বীকার করতে বাধ্য হই যে ‘বৈপ্লবিক যুগ’ এগিয়ে আসছে, এই পুস্তিকায় সে সবই আলোচিত হয়েছে।
লেখক নির্দিষ্ট করে সাধারণভাবে শ্রেণি সংগ্রামের তীব্রতা বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং সাম্রাজ্যবাদ যা এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তার প্রতিও মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিম ইউরোপে ‘১৭৮৯ থেকে ১৮৭১ পর্যন্ত বিপ্লবী যুগের পর’, ১৯০৫ সালে একই ধরনের আর একটা বিপ্লবী যুগ পূর্ব ইউরোপে শুরু হয়েছে। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিশ্বযুদ্ধ ধেয়ে আসছে। ‘‘অপরিণত বিপ্লবের কথা শ্রমিক শ্রেণি আর বলতে পারে না।’’ ‘‘আমরা একটা বিপ্লবী যুগে প্রবেশ করেছি’’। ‘‘বিপ্লবী যুগ শুরু হয়ে গেছে।’’
এইসব ঘোষণা একেবারে পরিষ্কার। জার্মানির সোস্যাল ডেমোক্রেসি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের আগে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং যুদ্ধ বাধার পর কাউটস্কি সহ তাদের গভীর অধঃপতন– এই দুইয়ের তুলনার ক্ষেত্রে কাউটস্কির এই পুস্তিকাকে বিচারের মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ। যে পুস্তিকার কথা আমরা আলোচনা করছি সেখানে কাউটস্কি লিখেছেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপদ হচ্ছে এই যে, আমরা (অর্থাৎ জার্মান সোস্যাল ডেমোক্রেসি) বাস্তবে যতটা নরমপন্থী তার থেকে আমাদের অনেক বেশি নরমপন্থী বলে মনে হতে পারে।’’ বস্তুত জার্মান সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে যতটা নরমপন্থী ও সুবিধাবাদী বলে মনে হয়েছিল, দেখা গেল বাস্তবে তারা তার চেয়েও অনেক বেশি নরমপন্থী ও সুবিধাবাদী!
আরও লক্ষণীয় বিষয় হল, কাউটস্কি যদিও নির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন, বিপ্লবের যুগ শুরু হয়ে গেছে, তবুও এই পুস্তিকায় তিনি রাষ্ট্রের প্রশ্নটিকে আবারও সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন। অথচ তিনি নিজেই বলেছেন যে, এই পুস্তিকায় ‘রাজনৈতিক বিপ্লব’-এর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রশ্ন এইভাবে এড়িয়ে যাওয়া, বাদ দেওয়া ও দ্ব্যর্থবোধক বাক্য প্রয়োগ করা– এ সব কিছুরই অনিবার্য পরিণাম সুবিধাবাদের কবলে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। এই বিষয়টি আমাদের এখন আলোচনা করতে হবে।
জার্মান সোস্যাল ডেমোক্রেসির মুখপাত্র কাউটস্কি যেন ঘোষণা করেছেনঃ আমি বিপ্লবী চিন্তা মেনে চলি (১৮৯৯), আমি বিশেষভাবে মনে করি সর্বহারা শ্রেণির সমাজবিপ্লব অবশ্যম্ভাবী (১৯০২), বিপ্লবের নতুন যুগ এগিয়ে আসছে তা আমি স্বীকার করি (১৯০৯)। তবুও, এখন যখন রাষ্ট্র সম্পর্কে সর্বহারা বিপ্লবের কর্তব্য কী, সেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে (১৯১২), তখন ১৮৫২ সালে মার্কস যা বলেছিলেন আমি তা স্বীকার করি না।
পান্নেকোয়েকের সঙ্গে কাউটস্কির় বিতর্কে প্রশ্নটি ঠিক এরকম সরাসরি ভাবে তোলা হয়েছিল। (চলবে)