‘‘সমস্ত সঙ্কীর্ণতাবাদী ধ্যানধারণাই মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূত। বিপ্লবের যথার্থ প্রয়োজনের সঙ্গে তা সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন। কাজের সঙ্কীর্ণতাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং বাস্তববর্জিত মনগড়া ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে সংগ্রাম একই সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে।
… মনগড়া ধ্যানধারণাকে প্রতিহত করতে হলে আমাদের অবশ্যই বস্তুবাদ ও দ্বন্দ্বতত্ত্বের প্রচার ও অনুশীলন করতে হবে। আমাদের পার্টিতে এমন অনেক কমরেড আছেন যাঁরা বস্তুবাদ বা দ্বন্দ্বতত্ত্বের প্রচারের উপর কোনও গুরুত্ব দেন না। কেউ কেউ মনগড়া ধ্যানধারণার প্রচার নির্বিবাদে চলতে দেন এবং শান্তভাবে তা মেনেও নেন। তাঁরা মনে করেন, তাঁরা মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী, কিন্তু বস্তুবাদের প্রচারের কোনও চেষ্টাই তাঁদের নেই। মনগড়া কোনও বিষয় বা বক্তব্য যখন তাঁরা শোনেন বা পড়েন, তখন তা নিয়ে তাদের মনে কোনও প্রশ্ন জাগে না বা কোনও মতামতই তাঁরা দেন না। এটা কোনও কমিউনিস্টের আচরণ হতে পারে না। এই জিনিস চলতে দিলে মনগড়া চিন্তাভাবনার বিষ আমাদের বহু কমরেডের মনকে আচ্ছন্ন করবে, যা তাদের অনুভূতিকে অসাড় করে দেবে। এই কারণেই মনগড়া ধারণা ও সূত্রবাদিতার ধোঁয়াশা থেকে আমাদের কমরেডদের মনকে মুক্ত করতে হবে এবং তাদের সকলের উদ্দেশ্যে মনগড়া ধারণা, সংকীর্ণতাবাদ ও লেখার ক্ষেত্রে গতানুগতিকতাকে বর্জনের আহ্বান জানাতে হবে। এই ব্যাধিগুলি আমাদের মধ্যে টিকে থাকুক এবং আমরা তাতে বরাবরের জন্য আচ্ছন্ন হয়ে থাকি, একমাত্র আমাদের শত্রুরাই এ জিনিস কামনা করে। কাজেই আমাদের এই দুষ্ট ব্যাধিগুলিকে বর্জন করার প্রচারাভিযান চালাতে হবে। মনগড়া ধ্যানধারণা, সংকীর্ণতাবাদী প্রবণতা এবং গতানুগতিক লেখার মতো যাবতীয় পণ্যসামগ্রী আমাদের বর্জন করতে হবে। এইসব পণ্য বিক্রির পথে দুর্লঙ্ঘ্য বাধা খাড়া করতে হবে এবং এইসব পণ্যের কারবারিদের পার্টির তত্ত্বগত নিম্নমানের সুযোগ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে দেওয়া চলবে না।
এই উদ্দেশ্যে আমাদের কমরেডদের ঘ্রাণশক্তিকে প্রখর করতে হবে। প্রখর ঘ্রাণশক্তি নিয়ে সমস্ত কিছুকে তাদের পরীক্ষা করতে হবে এবং কোনও কিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মন্দ থেকে ভালকে আলাদা করতে হবে। কমিউনিস্টদের যে কোনও জিনিস কেন এবং কী জন্য– বারে বারে প্রশ্ন করে বুঝে নিতে হবে, তাদের মাথাকে কাজে লাগাতে হবে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখতে হবে, সেই বিশেষ বিষয়টি বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না এবং তাকে সমস্ত দিক থেকে প্রকৃতই বিচার করে নেওয়া হয়েছে কি না। কোনও অবস্থাতেই অন্ধভাবে কোনও কিছু মেনে নেওয়া এবং দাসসুলভ মনোভাবে উৎসাহ জোগানো তাদের উচিত নয়।’’
১৯৪২-এর ভাষণ থেকে সংকলিত
এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা ১৩ – ১৯ জুন ২০২৫ এ প্রকাশিত