আমেরিকা সফরে গিয়ে গলা ছেড়ে গণতন্ত্রের জয়গান করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, ‘গণতন্ত্র বয়ে চলেছে ভারতের ধমনীতে। গণতন্ত্রেই বাঁচে ভারত।’ আরও বলেছেন, ‘মোদি সরকারও গণতন্ত্রেরই পূজারী।’
বাস্তবিকই, এমন রাতকে দিন নরেন্দ্র মোদিই করতে পারেন। কারণ, তিনি এমন একজন ‘গণতান্ত্রিক’ শাসক, যাঁর শাসনে বিরোধী দল থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বুদ্ধিজীবী থেকে সাংবাদিক–যারাই সরকারের অপছন্দের, তাদের সকলের ত্রাহি ত্রাহি রব। গণতন্ত্রের প্রতি এই শাসকের মান্যতা এমনই যে তিনি গত ন’বছরের শাসনকালে গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে একবারের জন্যও কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি।
এবারের আমেরিকা সফরেও সাংবাদিকদের এড়াতেই চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের চাপে বাধ্য হয়েছেন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে। মুখোমুখি হতে হয়েছে অমোঘ কিছু প্রশ্নের, যার বিষয়বস্তু ভারতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার, মানবাধিকার লংঘন এবং সমালোচক ও বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ। ‘শূন্য কলসীর আওয়াজ বেশি’– এই প্রবাদের সত্যতা প্রমাণ করে উত্তর দিতে গিয়ে ১২ বার ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন মোদি। বলেছেন, তাঁর সরকারের কল্যাণমূলক কর্মসূচির সুফল ধর্ম-বর্ণ-জাত নির্বিশেষে সকল ভারতীয়েরই সহজলভ্য। বলেছেন, মানবাধিকার লংঘন ও বৈষম্যের পথ ধরলে ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ বলে গণ্য হতে পারত না। দেখা যাক, নরেন্দ্র মোদির ভারতের শিরায় শিরায় কীভাবে বয়ে চলেছে গণতন্ত্রের রক্তস্রোত।
সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ
নরেন্দ্র মোদির শাসনে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছে বোধহয় সংবাদমাধ্যমই। ফতোয়া দিয়ে টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স যেমন কেড়ে নিয়েছে বিজেপি সরকার, তেমনই সরাসরি প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমকে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করে চলেছে। এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ অজস্র। টুইটারের পূর্বতন প্রধান জ্যাক ডরসি সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ভারত হল এমন একটি দেশ যেখানে সরকারের সমালোচনামূলক পোস্টগুলি তুলে নেওয়া না হলে টুইটারের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি খানাতল্লাশি চালানে হবে বলে হুমকি দেন সরকারি কর্তাব্যক্তিরা।
কিছুদিন আগে ঘটা প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা বিবিসি-র হেনস্থার কথা অনেকেরই মনে আছে। নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সত্যনিষ্ঠ একটি তথ্যচিত্র বানানোর ‘অপরাধে’ প্রবল গণতান্ত্রিক বিজেপি সরকার বিবিসি দফতরে আয়কর বিভাগের হানাদারি চালায়, যে ঘটনার বিরুদ্ধে নিন্দায় সরব হয়েছিল গোটা বিশ্ব। এই সরকার এমনই গণতান্ত্রিক যে বিরোধী প্রচারে লাগাম পরাতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে বদলে দেয়। খবর তো বটেই, এমনকি পছন্দসই না হলে সমাজমাধ্যম-সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে চলা যে কোনও ধরনেরই লেখাকেই ‘জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী’ বলে দাগিয়ে প্রচার বন্ধ করে দেওয়ারও বন্দোবস্ত করেছে এই সরকার।
ভারতে গণতন্ত্রের এমনই রবরবা যে, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে হয় কথায়, নয় কথায় সাংবাদিকদের উপর জুলুম চালানো, তাঁদের জেলবন্দি করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের কথা সকলেরই মনে আছে। উত্তরপ্রদেশে এক নাবালিকা ধর্ষণ ও সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের পুলিশ কর্তৃক মৃত মেয়েটির দেহ গোপনে পুড়িয়ে দেওয়ার খবর করতে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ফল, দীর্ঘদিন জেল-যন্ত্রণা ভোগ। আরও কয়েকশো সাংবাদিক বিজেপি-জমানায় স্রেফ বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করার জন্য জেলবন্দি হয়ে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে অন্তত সাত জনের বিরুদ্ধে এমন ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে যেগুলি ব্যবহার করা হয় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে।
গণতান্ত্রিক ভারতে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এভাবেই রক্ষার ব্যবস্থা করেছে নরেন্দ্র মোদির গণতান্ত্রিক বিজেপি সরকার। সঙ্গত কারণেই এই সরকারের ন’বছরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক তালিকায় ভারতের স্থান ক্রমাগত নিচে নেমে এ দেশের ধমনীতে বইতে থাকা গণতন্ত্রের হাল বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত নিগ্রহের শিকার
ভারত একটি ঘোষিত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদি-নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশে হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যবাদের দাপটে অন্য ধর্মাবলম্বীদের টুঁ শব্দটি করার উপায় নেই। প্রতিনিয়ত উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ। গোরক্ষার নামে দরিদ্র সংখ্যালঘু মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। একের পর এক এই ধরনের নৃশংস খুনের ঘটনায় সরকারের ভূমিকা স্রেফ নীরব নিষ্ক্রিয় দর্শকের। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা অহরহ সংখ্যালঘুবিদ্বেষী ঘৃণাভাষণ ছড়িয়ে চলেছেন। বিজেপি-শাসিত উত্তরাখণ্ডে উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা প্রকাশ্যে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অর্থনৈতিক ভাবে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন। যে প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় সাংবাদিকদের সামনে গণতন্ত্রের জয়ঢাক পিটিয়ে এলেন, নির্বাচনী সভাগুলিতে মুসলিমবিদ্বেষী ভাষণ দিতে তাঁর নিজেরই কোনও কুণ্ঠা নেই। ভারতকে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ বানিয়ে তুলতে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন সহ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডগুলিতেও হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে তিনি অত্যন্ত তৎপর। যে কোনও নির্বাচনের আগে এলাকায় এলাকায় দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে দাঙ্গা লাগিয়ে ভোটবাক্সে তার ফয়দা লোটা এখন বিজেপির অন্যতম নির্বাচনী কৌশল, যাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত থাকে নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দলের নেতাদের। গণতন্ত্রের জয়জয়কারই বটে!
জম্মু-কাশ্মীর আইন
গণতন্ত্রের বড়াই করা নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালে চূড়ান্ত স্বৈরাচারের পরিচয় দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মতামতের তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে ঐতিহাসিক কারণে প্রাপ্য রাজ্যটির বিশেষ অধিকারগুলি কেড়ে নিয়ে সেটিকে দু-টুকরো করে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় নিয়ে এসেছেন। চার বছর কেটে গেলেও কাশ্মীরের মানুষের নির্বাচিত বিধানসভা কবে হবে তা নিয়ে সরকার ক্রমাগত টালবাহানা করে চলেছে। হাজার হাজার নাগরিককে জেলবন্দি বা গৃহবন্দি করে রেখেছে বিজেপি সরকার। রেহাই পাননি সেখানকার মূলধারার রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরাও।
বিতর্কিত আইন ও রায়দান
আমেরিকায় গিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রের ফানুস উড়িয়ে এলেন যে নরেন্দ্র মোদি, তাঁর সরকারই ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’ বা সিএএ নামে যে আইনটি চালু করেছে, সেটি খোলাখুলিভাবেই মুসলিম-বিরোধী। এই আইনে প্রতিবেশী দেশ থেকে বিতাড়িত সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ বিস্ময়কর ভাবে এই সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলিমদের ঠাঁই দেওয়া হয়নি।
নরেন্দ্র মোদির শাসনকালেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত ন্যায়বিচারের তোয়াক্কা না করে বাবরি মসজিদের জমিতে রামমন্দির নির্মাণের রায় দিয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের চালু করা রাষ্ট্রদ্রোহ আইন যা তারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দমন করতে তৈরি করেছিল, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার সেই আইনকে আরও কঠোর করে তুলেছে। চরম স্বৈরাচারীর মতো বিজেপি সরকার ২০১৬-২০১৯ এই সময়কালে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে যে অভিযোগ দায়ের করেছে তা অতীতের তুলনায় ১৬০ শতাংশ বেশি। অথচ সরকারি রিপোর্টই বলছে, আদালতে এই অভিযোগের মাত্র ৩.৩ শতাংশ প্রমাণ করতে পেরেছে সরকার।
বিরোধিতা হলেই প্রতি-আক্রমণ
ভারতের ধমনীতে গণতন্ত্রের এমন ধারা বইছে যে, ক্ষমতায় বসার পর থেকে সমস্ত গণতান্ত্রিক নৈতিকতা দু-পায়ে মাড়িয়ে পুলিশ-প্রশাসন সহ সরকারি সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের নাস্তানাবুদ করে চলেছে বিজেপি সরকার। অথচ দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের গায়ে আঁচড়টুকুও পড়ছে না। দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যাওয়া বিরোধী নেতাদের অনেককেই দল বদলে বিজেপির আশ্রয় নিয়ে সরকারি তদন্তের হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন।
মানবাধিকার কর্মীদের উপর আক্রমণ
নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে সমাজকর্মী বা মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করার ঘটনা আগেকার সমস্ত রেকর্ড ভেঙেছে। এইসব সমাজকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সমাজসেবী এমনকি কবিরাও। বিজেপি সরকারের অন্যায় কার্যকলাপের বিরোধিতা করলেই চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক ভাবে এই সমাজকর্মীদের বিনা বিচারে জেলবন্দি করে রাখা হচ্ছে। অতি বৃদ্ধ স্ট্যান স্বামীর জন্য এই সরকারের জেলে ন্যূনতম মানবাধিকারটুকুও জোটেনি। এমনকি সমাজমাধ্যমে সরকারবিরোধী কথা বললেও তার মাশুল গুনতে হচ্ছে মানুষকে।
গোপন নজরদারি
আমেরিকার সফরে গিয়ে গণতন্ত্রের ঢাক পিটিয়ে এলেন যিনি, মানুষ ভুলে যায়নি সেই নরেন্দ্র মোদি-সরকারের বিরুদ্ধেই গোপন নজরদারির যন্ত্র পেগাসাস ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বেসরকারি সংস্থার করা তদন্তে উঠে এসেছে, ইজরায়েল থেকে কেনা এই স্পাইওয়্যারটি ১৭৪ জন ব্যক্তির উপর নজরদারি চালাতে ব্যবহার করেছে মোদি সরকার। এঁদের মধ্যে বিচারপতি, মন্ত্রী, সাংবাদিক, বিরোধী দলের নেতা, বিজ্ঞানী– কে নেই! এ যদি একটি গণতান্ত্রিক দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের আচরণ হয়, তাহলে স্বৈরাচারী সরকার আর কাকে বলে!
ফলে, বিশ্বের দরবারে বসে দেশ ও তাঁর সরকারের গণতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে নরেন্দ্র মোদি যে কথাগুলি বলে এলেন, তা সত্যের ধারকাছ দিয়েও যায় না। বাস্তবে এই সত্য বিশ্বের কাছে আজ আর গোপনও নেই। তাই নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরে প্রবাসী ভারতীয়রা যেমন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তেমনই বেশ কয়েকজন মার্কিন সিনেটরও তাঁর ভাষণ বয়কট করেছেন। গুজরাট গণহত্যার দায় কাঁধে চেপে থাকায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত খোদ আমেরিকাতেই প্রবেশ নিষেধ ছিল স্বয়ং নরেন্দ্র মোদির।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন এবং সেদিন মোদির ভাষণের সম্প্রচার যাঁরা দেখেছেন, কলঙ্কের সেই অধ্যায়ের কথা কি তাঁরা ভুলে গেছেন? তা সত্ত্বেও সেসব ভাবনার তোয়াক্কা না করে গণতন্ত্র নিয়ে এ হেন নির্জলা মিথ্যাচারে বিশ্ববাসীর কাছে দেশের মাথা আসলে ধুলোয় লুটিয়ে দিয়ে এলেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। (তথ্যসূত্রঃ দ্য ওয়্যার, ২৩ জুন, ‘২৩ ও অন্যান্য সংবাদপত্র)
আমরা নরেন্দ্র মোদিকে চাই না, বিক্ষোভ আমেরিকায়
নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফর সাক্ষী হয়ে থাকল প্রবাসী ভারতীয়দের তীব্র মোদি-বিরোধী বিক্ষোভের। সামিল হয়েছিলেন মার্কিন নাগরিকরাও। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উষ্ণ অভ্যর্থনা যে সে দেশের মানুষের ‘মন কি বাত’ নয়, তা প্রকাশ্যে এল। ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনে বিজেপি সরকারের নগ্ন ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষ আমেরিকার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালেন। ২১ জুন নিউইয়র্কে দেখা গেল মোদির বিরুদ্ধে ব্যানার ও পোস্টারে সুসজ্জিত প্রতিবাদ মিছিল। ছাত্র-যুব-মহিলা-শ্রমজীবী মানুষের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে জ্বলজ্বল করছিল– ‘মোদি নট ওয়েলকাম’,‘সেভ ইন্ডিয়া ফ্রম হিন্দু সুপ্রিমেসি’, ‘রাইজেন হিটলার ইন দ্য ইস্ট’, ‘হাউডি ডেমোক্রেসি’ ইত্যাদি। দেশ বিভাজনের কারিগরকে আমেরিকায় সাদরে অভ্যর্ত্থনা জানানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও তীব্র ধিক্কার জানান তাঁরা।
ভারতে একের পর এক মুসলিম-খ্রিস্টান-দলিত নিধন, দেশদ্রোহী দাগিয়ে দিয়ে নিরপরাধদের দিনের পর দিন জেলে পুরে রাখার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে আমেরিকার নানা জায়গায়। সেখানকার মানবাধিকার কর্মী সহ নানা অংশের মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে জোরালো দাবি তুলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে প্রশ্নগুলি রাখার জন্য। এমনকি এর প্রতিবাদে কয়েক জন সেনেট সদস্য মার্কিন কংগ্রেসে মোদির বক্তব্য বয়কট করেছেন।
ভারতে বিজেপির গণতন্ত্রকে পদদলিত করার প্রতিবাদে ওয়াশিংটনেও কয়েকশো ইন্দো-মার্কিন নাগরিক বিক্ষোভ দেখান। এতে সংবাদমাধ্যম এবং মুক্তমনা মানুষদের উপর আক্রমণেরও তীব্র নিন্দা করা হয়।
সাম্রাজ্যবাদের শিরোমণি আমেরিকা এবং সাম্রাজ্যবাদী দেশ ভারতের শীর্ষকর্তাদের বৈঠক যত আড়ম্বরপূর্ণই হোক না কেন, আর তাতে যত চুক্তি স্বাক্ষরিত হোক না কেন, তা যে সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়, তা দু-দেশের শ্রমজীবী মানুষই জানেন। মার্কিন নাগরিকদের বিক্ষোভ সেই বার্তাই দিয়ে গেল।