অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যে প্রশ্নটা সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মহলকে ভেবে দেখতে হবে বলে মনে করি তা হল, যে নির্বাচনী বন্ডকে সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছে, সেই নির্বাচনী বন্ডের সবকিছুকে অক্ষত রেখে, অর্থাৎ যেমন চলছে তেমন চলতে দিয়ে, তার উপর কিছু সমালোচনার চাদর চড়িয়ে কি এই নির্বাচন স্বচ্ছ হতে পারে?
নির্বাচন যেহেতু একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, তাই অসাংবিধানিক নির্বাচনী বন্ড যা নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ বাইরে নিয়ে গিয়ে পুঁজিতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণকে নিরঙ্কুশ করবে, যে বন্ড ‘চান্দা দো, ধান্দা লো’ আদর্শে সম্পৃক্ত, তাকে অক্ষত রেখে এ নির্বাচন স্বচ্ছ হতে পারে কি? এদিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্বামী অর্থনীতিবিদ পরাকলা প্রভাকরের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হল ইলেক্টোরাল বন্ড। অভিযোগটা কি ফেলে দেওয়ার মতো? এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন দেখছি নির্বিকার। যেন কিছুই ঘটছে না– এমন একটা ভাব। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাধ্য হয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বন্ডের তথ্য নিয়ে তা কেবল প্রকাশ করে কমিশন দায়িত্ব শেষ করেছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকল কি বিসর্জিত হল এ নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
একটা ন্যূনতম গণতান্ত্রিক আবহেও যদি কোনও নির্বাচনকে পরিচালিত করতে হয় তবে নির্বাচন পরিচালকদের কর্তব্য হওয়া উচিত, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল অন্যায় পথে ধনকুবেরদের টাকা নিয়ে অর্থ শক্তির জোরে নির্বাচনে অন্যদের টেক্কা দিয়ে বাজিমাৎ করতে চাইছে তাদের প্রকাশ্যে তা ফেরত দিতে বাধ্য করা। যদি কেউ ফেরত দিতে সম্মত না হয়, কমিশনের উচিত তাকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না দেওয়া। কেন না, নির্বাচনের মতো দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু করার আগে সব প্রতিযোগীদের তো এক লাইনে দাঁড় করাতে হবে। সে সবের ছিটেফোঁটাও দেখছি না নির্বাচন কমিশনের এ যাবত বিবিধ কার্যক্রমে। এরপরও নির্বাচন কমিশন বলছে ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার’ ইলেকশন করতে তারা বদ্ধপরিকর।
এ জন্য আদর্শ আচরণবিধিরও লম্বা ফিরিস্তি। গোড়াতে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করার এক অসাংবিধানিক ব্যবস্থাকে বহাল তবিয়তে চলতে দিয়ে ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার’ ইলেকশনের লক্ষ্যে এই আদর্শ আচরণবিধি যত কঠোরভাবেই বলবৎ হোক না কেন, তার কোনও মূল্য থাকে কি?
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়গপুর