নিন্দার ভাষা নেই– ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা দিবস’ পালন করা প্রসঙ্গে এসইউসিআই (সি)

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে সমস্ত রাজ্যের রাজভবনে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির উপরাজ্যপালের অফিসে ২০ জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা দিবস’ পালন করা প্রসঙ্গে এসইউসিআই (সি)-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ওই দিন এক বিবৃতিতে বলেন–

‘‘দেশভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ তৈরির ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় উদ্বাস্তু হয়ে দাঙ্গা ও দেশভাগের বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। অথচ তা নিয়ে বিজেপি সরকার যে ভাবে সব রাজভবনে আনন্দ-উৎসব করার নিদান দিয়েছে এবং নাচ-গান প্রভৃতি অনুষ্ঠান করছে তাকে নিন্দা করার কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয়।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। অবিভক্ত বাংলার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা রুখে দিয়েছিল। এ ছিল বাংলার অর্জিত গৌরব। এই আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ সহ দেশের শ্রদ্ধেয় মানুষেরা নেতৃত্ব দিযেছিলেন। সাম্রাজ্যবাদীদের সেই জঘন্য চক্রান্তকেই বাস্তবায়িত করতে ১৯২৩ সালে সাভারকার দ্বিজাতি তত্তে্বর কথা উত্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীকালে অপর এক সাম্প্রদায়িক শক্তি মুসলিম লিগ এই তত্ত্বকেই সমর্থন করেছিল। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর বইতে এ কথা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছিলেন। অত্যন্ত বেদনার বিষয়, ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’-এর নামে শোধনবাদী সিপিআই ১৯৪২ সালে বাস্তবে সাভারকার এবং আরএসএস-এর উত্থাপিত এই দ্বিজাতি তত্ত্বকেই মেনে নিয়ে কার্যত পাকিস্তান গড়ার অর্থাৎ দেশভাগের পরিকল্পনাকেই শক্তিশালী করেছিল।

রবীন্দ্রনাথ সহ দেশের বরেণ্য মানুষেরা এবং আপামর জনসাধারণ যে বিষয়ে গভীর বেদনা অনুভব করেছিলেন, আজ বিজেপি-আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার তাই নিয়ে আনন্দ অনুষ্ঠানের নিদান দিচ্ছে।

মোদি সরকার দেশের মানুষের বাঁচার সুযোগ যত কেড়ে নিচ্ছে, পুঁজিপতিদের জন্য যত বেশি লুঠের ব্যবস্থা করছে, ততই সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কহীন নানা হিন্দুত্ববাদী ও সাম্প্রদায়িক অ্যাজেন্ডা সামনে এনে তাদের অপশাসনকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা দিবস’ উদযাপন তেমনই একটি অ্যাজেন্ডা। আমরা এই ধরনের অনুষ্ঠান বাতিলের দাবিতে সর্বস্তরের মানুষকেসোচ্চার হওয়ার আবেদন করছি।