লোকসভা নির্বাচনে তমলুক ও কাঁথি কেন্দ্রে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর প্রার্থী যথাক্রমে নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও মানস প্রধান। ১৯ মার্চ তমলুকের দলীয় দফতরে এ বিষয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক প্রণব মাইতি ও দক্ষিণ জেলা কমিটির সম্পাদক অশোকতরু প্রধান, দুই প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও মানস প্রধান সহ জেলার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে কমরেড প্রণব মাইতি বলেন, তমলুক কেন্দ্রের প্রার্থী কমরেড নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ছাত্রাবস্থায় দলের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে দলের সাথে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী ও পূর্ব মেদিনীপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে তিনি কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলনিকাশি সমস্যা সমাধানের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে মানুষজনকে নিয়ে ‘কৃষক সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে কোলাঘাট ব্লকে কংসাবতী নদীর ভয়াবহ বন্যার সময় দুর্গতদের উদ্ধার-ত্রাণ-ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাণঘাতী পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ, ব্লক এলাকার দেউলিয়া-খন্যাডিহি, সিদ্ধা-বৃন্দাবনচক, সিদ্ধা-পীতপুর সহ বিভিন্ন রাস্তা পিচ বা কংক্রিটের করা, এলাকায় চোলাই মদের ভাটি বন্ধ করা প্রভৃতি দাবিতে বহু আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ীদের স্বার্থে ফুলবাজার সহ নানা সমস্যা সমাধানের দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জেলার হোসিয়ারি শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাসবৃদ্ধি, জেলার রূপনারায়ণ নদী ও সোয়াদিঘি খাল সহ বিভিন্ন নিকাশি খাল সংস্কার, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের মাধ্যমে দুই মেদিনীপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বাস চলাচলের নানা অব্যবস্থা দূরীকরণ প্রভৃতি দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেন।
কমরেড অশোকতরু প্রধান বলেন, কাঁথি কেন্দ্রে দলের প্রার্থী প্রাক্তন ছাত্রনেতা কমরেড মানস প্রধান কাঁথি শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী, গণআন্দোলনের বিশিষ্ট সংগঠক মানস শহরবাসীর জীবনের নানা সমস্যা সহ শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বিদ্যুৎ আন্দোলনে, ইয়াস ঝড় সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে, শ্রমিক-কৃষকদের নানা ন্যায্য দাবিতে, বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপন কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা বন্ধ করা, কেলেঘাই-বাগুই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বারচৌকা বেসিন ও খালগুলি সংস্কার, দীঘা-পাঁশকুড়া-হাওড়া লাইনে পর্যাপ্ত লোকাল ট্রেনের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করছেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা আরও বলেন, এই দুই প্রার্থী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বিদ্যুতের বেসরকারিকরণের নীতি, সরকারের নানা দুর্নীতি, বেকার সমস্যা, নারী নির্যাতন, সিএএ-এর বিরোধিতায় বিভিন্ন আন্দোলনে ভূমিকা নেন।
এই আন্দোলনগুলির পাশাপাশি পার্টি ও বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্বে তাম্রলিপ্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতালের উন্নয়ন, তমলুক-হলদিয়া-পাঁশকুড়ায় রেললাইনের উপর ফ্লাইওভার নির্মাণ, দীঘা ও হলদিয়া লাইনে ট্রেনের সংখ্যাবৃদ্ধি, ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে দেউলিয়ায় আন্ডারপাস নির্মাণ, মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণ সহ শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন প্রভৃতি দাবিতে জেলাব্যাপী যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনের পরীক্ষিত সৈনিক হলেন কমরেড নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও কমরেড মানস প্রধান। তাঁরা লোকসভার অভ্যন্তরে জেলার এইসব সমস্যা সমাধানের দাবিতে সোচ্চার হবেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের এই দুই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান তাঁরা।