২০১২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়ে কাঁথির উপকন্ঠে জুনপুটে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু কাঁথির শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনসাধারণ ও জুনপুটবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল, কিন্তু পরিকল্পনা রূপায়ণ থেকে সরে আসেনি, গোপন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক জানিয়েছেন ডিআরডিও খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এই মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করতে চলেছে কাঁথির উপকণ্ঠ জুনপুটে।
ভারতে ইতিমধ্যেই চাঁদিপুরে মিসাইল উৎক্ষেপণ ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে পাঁচ ছয় মাস অন্তর একটি মিসাইল পরীক্ষা করা হয়। এই সময়সীমা কমিয়ে আনলেই তো বাড়তি মিসাইল কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন থাকে না। তাছাড়া আমেরিকা ছাড়া ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স সহ বেশিরভাগ দেশেই একটি করে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র আছে। তাহলে ভারতের মতো একটি পিছিয়ে পড়া দেশে প্রতিরক্ষার কথা বলে ওড়িশার চাঁদিপুর, তামিলনাডুর শ্রীহরিকোটার পরও আবার জুনপুটে মিসাইল কেন্দ্র স্থাপনের সত্যিই কি প্রয়োজন আছে?
এলাকাবাসীর আশঙ্কা জুনপুটে একবার মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে সমগ্র এলাকা মিলিটারির দখলে চলে আসবে। যুদ্ধ লাগলে আক্রমণকারী দেশ অন্য দেশের মিসাইল ও সেনা ঘাঁটি, পরমাণুবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করে, সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ লাগলে জুনপুট আক্রমণকারী দেশের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলে শুধু জুনপুট উপকূলবাসী নয়, সমগ্র কাঁথিবাসীর জীবন বিপন্ন হবে। গণপ্রতিরোধের চাপে যে হরিপুর থেকে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল, মিলিটারি দিয়ে জুনপুট সংলগ্ন সেই হরিপুরে আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। সুতরাং জুনপুটে মিসাইল কেন্দ্র স্থাপন হওয়া মানে হরিপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিশ্চিত করা, হাজার হাজার মানুষকে জীবন জীবিকা থেকে উচ্ছেদ করা, তেজস্ক্রিয় দূষণের দিকে সমগ্র কাঁথি মহকুমাকে ঠেলে দেওয়া। সামগ্রিক পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতায় আন্দোলনে নেমেছে স্থানীয় বিজ্ঞান ক্লাব কন্টাই সায়েন্স সেন্টার সহ বিভিন্ন সংগঠন। এই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে এসইউসিআই(সি)-র পূর্ব মেদিনীপুর দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কমিটি।