Breaking News

আর্থিক সঙ্কটের অবসান চায় মানুষ, ব্যাপক বিক্ষোভ লেবাননে

দিনের পর দিন আর্থিক সঙ্কট। খাবার, জ্বালানি এমনকি ওষুধের দামও নাগাল ছাড়িয়েছে। এদিকে ব্যাঙ্কে যেটুকু টাকা সঞ্চিত আছে, সরকারি হুকুমে তাতেও প্রয়োজন মতো হাত দেওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভে ফুঁসছেন ভূমধ্যসাগরের তীরের ছোট্ট দেশ লেবাননের মানুষ। এর বিরুদ্ধে ২১ ও ২২ মার্চ পরপর দু’দিন রাজধানী বেইরুটে সরকারি দফতরগুলির সামনে প্রবল বিক্ষোভে সোচ্চার হলেন সেখানকার সাধারণ মানুষ।

নিরাপত্তা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ও অন্যান্য ক্ষেত্রের পেনসনজীবীরা এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। ২২ তারিখ বেইরুটে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। রক্ষীরা ব্যারিকেড খাড়া করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। আগের দিন বিক্ষোভকারীরা রাজধানী শহরের বহু রাস্তা অবরোধ করেন। বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু দোকানপাট। স্লোগান ওঠে– অবিলম্বে জিনিসের দাম কমাতে হবে, মেটাতে হবে জ্বালানি সঙ্কট। ধুঁকতে থাকা সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে হবে, খুলে দিতে হবে বন্ধ হয়ে থাকা স্কুলগুলি। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি মাস থেকে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা বেতনের ন্যায্য বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। ধর্মঘটে সামিল তাঁরাও। সম্প্রতি সরকার বেতন সামান্য বাড়ালে ও যাতায়াতের খরচ মেটাতে রাজি হলে শিক্ষকদের একটি অংশ কাজে যোগ দেন। কিন্তু তাঁদের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে যাঁরা চুক্তিতে কাজ পেয়েছেন, তাঁরা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বন্ধ হয়ে রয়েছে দেশের অনেক স্কুল।

সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতা জিইয়ে রাখতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসররা সদা সচেষ্ট। লেবাননের উপর বেশ কয়েক বছর ধরে তারা জারি করেছে নানা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা। পরিণতিতে বিশেষ করে গত চার বছর ধরে লেবানন ভুগছে প্রবল আর্থিক সঙ্কটে। রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানকার ৮২ শতাংশ মানুষই আজ দারিদ্রের কবলে। ২০১৯ সাল থেকে মার্কিন ডলারের অনুপাতে লেবাননের মুদ্রা ‘লিরা’র দাম পড়তে থাকে। বর্তমান ডলারের তুলনায় লিরার মূল্য ৯৮ শতাংশ পড়ে গেছে। ফল হয়েছে মারাত্মক। আমদানির উপর নির্ভরশীল এই দেশটির আমদানি-খরচ বিপুল পরিমাণে বেড়ে গেছে। আমদানি করা খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের দাম ক্রমেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

সঙ্কটকে সাময়িক ভাবে সামাল দিতে লেবানন সরকারের সামনে একটি পথ খোলা রয়েছে। তা হল, সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক সংস্থা আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নেওয়া। আইএমএফ-ও টাকার ঝুলি নিয়ে তৈরি। কিন্তু ঋণের সেই টাকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহুজাতিক সংস্থাগুলির মুনাফার স্বার্থে তৈরি নানা কঠিন শর্ত। যেগুলি মানতে হলে লেবানন সরকারকে সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি আরও বেশি করে জলাঞ্জলি দিয়ে গোটা দেশের সমস্ত সম্পদের মালিকানা অবাধে তুলে দিতে হবে মুনাফাবাজ বহুজাতিকদের হাতে। ফলে দেশের খেটে-খাওয়া মানুষের রোষের মুখে পড়তে হবে তাদের। তাই আইএমএফ-এর ঋণের় ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত লেবানন সরকার। এদিকে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠায় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে লেবাননের মানুষ। প্রতিকার চাইছে।

শুধু লেবানন নয়। দেশে দেশে পুঁজিবাদী অর্থনীতি আজ সঙ্কটে সঙ্কটে জর্জরিত। আইএমএফ বা কোনও সরকারের সাধ্য নেই তা থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করার। ক্রমবর্ধমান সমস্যা থেকে মুক্তির একটাই রাস্তা। তা হল শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে পরিকল্পনাভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা সমাজতন্ত্র কায়েম করা। এটাই সময়ের দাবি, যা লেবাননের বিপর্যস্ত মানুষকে বুঝতে হবে। (তথ্যসূত্রঃ পিপলস ডিসপ্যাচ, ২৩ মার্চ, ‘২৩)