‘পাতা হ্যায় আপ্পি, লড়াইকে বাদ সব কুছ কালা হো গ্যায়া’ (দিদি জানিস, লড়াইয়ের পর সব কিছু কালো হয়ে গেছে)– পুড়ে ঝলসে যাওয়া বাড়ি দেখিয়ে দিদিকে বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির চার বছরের শিশু। এমন ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়, উত্তর-পূর্ব দিল্লি জুড়ে শত শত পরিবারের শিশু-কিশোরদের মনে এই আতঙ্ক চেপে বসেছে। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ড শুধু ৫৩টি প্রাণই কাড়েনি, শত শত পরিবারের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে।
যে মধ্যবিত্ত মানুষগুলি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত খেটে ছোট্ট একটা দোকান কিংবা মাথা গোঁজার মতো একটা বাড়ি তৈরি করতে পেরেছিলেন, তাঁদের স্বপ্নের সেই সব সৌধ পোড়া কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কত স্বজনহারা আজও খুঁজে চলেছেন তাঁদের প্রিয়জনের দেহটুকু। কেউ বা ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বারবার চেষ্টা করছেন যদি কিছু বেঁচে থাকে তা ফিরে পাওয়ার। ব্যর্থ হয়ে বিড়বিড় করে নিজের দুর্ভাগ্যকেই হয়ত দুষতে দুষতে চোখের জল মুছছেন সব-হারানো মানুষ।
ত্রাণশিবিরেও তাঁরা শিউরে ওঠেন সেই সব দিন-রাতের আতঙ্কের কথা ভেবে। চাঁদবাগের অন্তঃসত্ত্বা মায়ের দেহ কালসিটের দাগে ভর্তি। মাটিতে ফেলে লাথি-ঘুঁসি, লাঠির বাড়ি মারতে মারতে তাঁকে মেরেই ফেলার ইচ্ছা ছিল ঘাতকবাহিনীর। সিমেন্টের চাঙড় দিয়ে মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে তারা। কারণ অনাগত শিশুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি সামিল হয়েছিলেন সিএএ বিরোধী ধরনায়।
এই পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, শিশু-কিশোরদের মন। তারা চোখ বুজলেই দেখে সেই সর্বগ্রাসী কালো ধোঁয়া, শুনতে পায় প্রিয়জনদের সেই মরণ আর্তনাদ, খুনিদের ভয়াবহ হুঙ্কার। বিদ্বেষের আগুন জ্বালিয়ে রাখতে খুনে বাহিনীর সাথে পুলিশ কীভাবে হাত মিলিয়েছে তাও তাদের মনে প্রবল ধাক্কা দিয়েছে। তারা কারওর উপরেই বিশ্বাস রাখতে পারছে না।
মার্চ মাসে যখন পরীক্ষা শুরু হয়েছে সিবিএসই বা আইসিএসই অনুমোদিত স্কুলগুলিতে, ছাত্রদের সামনে তখন নিকষ কালো অন্ধকার। বই নেই, পড়ার পরিবেশ নেই, দিনের পর দিন ঘুম নেই। কারও পরিজন শুয়ে লাশকাটা ঘরে, কেউ কাতরাচ্ছে যন্ত্রণায়।
পরীক্ষা দেবে কি, জীবনটাই যে তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে! এই দুর্গত ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্র সংগঠন এ আই ডি এস ও। এলাকার মানুষের সাহায্য নিয়ে ছাত্রদের বইখাতা সহ শিক্ষাসামগ্রী কিনে দেওয়া শুধু নয়, তাদের পড়ানোর উদ্যোগও নিয়েছে ডিএসও-র দিল্লি রাজ্য কমিটি, হয়েছে কোচিং সেন্টারের ব্যবস্থা। এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন এই মহতী উদ্যোগকে।