অভূতপূর্ব সমারোহে, বিপুল ব্যয়ে, তাক লাগানো প্রচারের মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পর বলেছেন, এর মধ্যে দিয়ে সূত্রপাত হল রামরাজত্বের।
প্রচলিত ধারণায় ‘রামরাজত্ব’ মানে কী? রামরাজত্ব বলতে যদি ভাবা হয় প্রজাবৎসল, ন্যায়নিষ্ঠ রাজার রাজত্ব অর্থাৎ এমন এক রাজত্ব বা দেশ, যেখানে মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করে, যেখানে রাজার সুশাসনে মানুষের কোনও অভাব থাকে না, খাওয়া-পরা-থাকার চিন্তা করতে হয় না, বিদ্বেষ-দ্বন্দ্ব না থাকায় যেখানে মানুষ শান্তিতে জীবন কাটায়, তাহলে তার সূচনা কী ভাবে কোন আশ্চর্য মন্ত্রে রামমন্দিরের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ঘটল তা অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বলেননি। ভারতবর্ষের বুকে এমন একটি স্বর্গরাজ্য নামিয়ে আনবেন কীভাবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
বিগত দশ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল এ দেশের শাসনক্ষমতায় রয়েছেন।সেই রাজত্বের দিকে তাকালেই প্রধানমন্ত্রী বর্ণিত রাম রাজত্বের কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে।২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস শাসনে নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতি, কালো টাকার সমান্তরাল অর্থনীতি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছিল, ঠিক তখনই প্রতিশ্রুতির লম্বা তালিকা নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে হাজির হয়েছিলেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। সেই লম্বা তালিকার বেশির ভাগই আজ মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেলেও বিশেষ কয়েকটির কথা মানুষ ভোলেননি। ভয়ঙ্কর মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার সাধারণ মানুষকে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে একশো দিনের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করবেন। বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যে সমস্ত কালো টাকা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনবেন এবং সেই টাকা ১৫ লক্ষ করে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করে দেবেন। বছরে দু’কোটি করে বেকারকে কাজ দেবেন। বলেছিলেন, দুর্নীতি দূর করে দেশের মানুষকে স্বচ্ছ প্রশাসন দেবেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনে আসবে এক ‘আচ্ছে দিন’। তালিকায় ছিল এমন আরও অজস্র প্রতিশ্রুতি।
দশ বছরের বিজেপি রাজত্বে মানুষের অভিজ্ঞতা কী? হয়েছে ঠিক উল্টো। জিনিসপত্রের দাম অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে। গৃহস্থের যে গ্যাসের দাম সেই সময়ে ছিল সাড়ে চারশো টাকা, তা বেড়ে এখন হয়েছে প্রায় এক হাজার টাকা। ডিজেল-পেট্রোল কিংবা ভোজ্য তেলের দাম হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রমশ সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। একটি কালো টাকাও বিদেশ থেকে ফেরেনি শুধু নয়, কালো টাকার মালিকদের তালিকাটুকু প্রকাশ্যে আনতেও রাজি হয়নি এই বিজেপি সরকার। কর্মহীনতা গত পঞ্চাশ বছরে রেকর্ড। লক্ষ লক্ষ চাষি আত্মহত্যা করছে। তিনটি কৃষক স্বার্থ ধবংসকারী কৃষি আইন নিয়ে এসেছিল এই সরকার, যা প্রবল কৃষক বিদ্রোহের মুখে বাধ্য হয়ে প্রত্যাহার করতে হয়েছে তাদের। নির্যাতিতা, ধর্ষিতা নারীর আর্তনাদে দেশের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে অবিশ্বাস্য হারে।শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরিটুকুর ভরসাও সরকার দেয়নি, বরং শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী কালা আইন চালু করেছে। লাখ লাখ শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ ক্রমাগত দারিদ্রের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।সাম্প্রতিক অ’ফ্যাম রিপোর্ট দেখাচ্ছে, দেশের ৩ শতাংশ সর্বোচ্চ ধনীর হাতে কুক্ষিগত হয়েছে দেশের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশ, যেখানে সবচেয়ে নিচের তলার ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ। গত ৩০ বছরে ধনী-দরিদ্রে বৈষম্য মারাত্মক আকারে বেড়েছে।মোদি শাসনে তা আরও তীব্র রূপ নিয়েছে। ২০২০ সালে যে শতকোটিপতির সংখ্যা ছিল ১০২ জন, তা ২০২২ সালে পৌঁছেছে ১৬৬-তে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাপক বেসরকারিকরণ। ধনকুবেরদের হাতে তেল, রেল, গ্যাস, ব্যাঙ্ক, বিমা, বন্দর, খনি সহ দেশের প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ এবং সম্পত্তি জলের দরে তুলে দিচ্ছে মোদি সরকার।এ ক্ষেত্রে এমনকি প্রশাসনিক কিংবা আইনি কোনও প্রক্রিয়ারই ধার ধারছেন না প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েই শিল্পপতি হিসাবে গৌতম আদানির উত্থান হয়েছে এবং আর মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বে সেই উত্থান এগিয়েছে উল্কার গতিতে। সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এইভাবে বিশেষ কিছু পুঁজিপতিকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়া, বিনিময়ে তাঁদের অঢেল আশীর্বাদ লাভ করা এবং গদি অটুট রাখা, রাজনীতির পরিভাষায় যাকে বলে স্যাঙাৎতন্ত্র, তারই রমরমা চলছে মোদি শাসনে।
এই হল মোদি রাজত্বের নমুনা। তাই কোন রামরাজত্ব এবং কাদের জন্য রামরাজত্ব তিনি আসলে কায়েম করবেন তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। যে মুনাফাসর্বস্ব পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়া দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে নিংড়ে সর্বস্বান্ত করছে, তাকেই আরও সংহত, ও শক্তিশালী করার কাজ নরেন্দ্র মোদি দশ বছর ধরে করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। কাজেই, এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পর দেশের মানুষের রুজিরুটির সমস্যার কোনও সুরাহা হবে বা দেশে হিংসা-বিদ্বেষ-ধর্মীয় হানাহানি কমবে, এমন দুরাশা কেউ করে না।
তা হলে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ রামরাজত্বের কথা বললেন কেন? আসলে প্রতারণার রাজনীতির রূপই এমন। একটা প্রতিশ্রুতি মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেলে আবার একটা নতুন প্রতিশ্রুতি আনতে হয়। আবার সেটা ধরা পড়ে গেলে নতুন আর একটা। গত দশ বছরে জীবন-যন্ত্রণা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে জনগণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষোভ যে কোনও সময়ে প্রবল বিক্ষোভের আকারে ফেটে পড়তে পারে। অভূতপূর্ব এই সঙ্কটের থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই প্রধানমন্ত্রীর রামমন্দির উদ্বোধন এবং রামরাজত্বের স্লোগান তোলা। বাস্তবে আচ্ছে দিন এবং অমৃতকালের পর ‘রামরাজত্ব’ এ বার আর এক নতুন ভাঁওতা। দেশের বিরাট সংখ্যক সাধারণ মানুষের মনে ধর্মের প্রতি, মহাকাব্যের চরিত্র হিসেবে রামের বীরগাথার প্রতি যে স্বাভাবিক আবেগ রয়েছে তাকেই কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রীর দল রামমন্দিরের জিগির তুলেছিল তিন দশক আগে। ‘রামের মন্দির ভেঙে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল’ এমন অভিযোগ তুলে পাঁচশো বছর আগের একটি বিষয়কে টেনে এনে হিন্দু ভাবাবেগকে খুঁচিয়ে তুলেছেন তাঁরা। অথচ যে সময় বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল তখন রামচরিত মানসের রচয়িতা তুলসীদাস জীবিত। তিনি রামের জন্মস্থানের ওপর কোনও মন্দির আছে অথবা তা ভাঙ হয়েছে এমন কথা কোথাও লেখেননি। সমসাময়িক কোনও ঐতিহাসিক উপাদানেও তা নেই। বিবেকানন্দের মতো হিন্দু ধর্মের প্রবক্তাও বলছেন, কৃষ্ণ বা রাম পৌরাণিক না ঐতিহাসিক চরিত্র তা নিয়ে বিতর্ক না করে রামায়ণের থেকে যা শিক্ষা নেওয়ার তা নিতে হবে। চৈতন্যদেব থেকে শুরু করে হিন্দু ধর্মের কোনও বড় মানুষই রামমন্দির ভেঙে মসজিদ হয়েছিল– তা বলেননি।
তাছাড়া গণতান্ত্রিক একটি শাসন ব্যবস্থায় কখনও পাঁচশো বছরের পুরনো কোনও ঘটনা সম্পর্কে বিতর্ককে টেনে এনে তাকে রাজনীতির বিষয় করে তোলা যায় না। তা যদি হয় তাহলে এর কোনও শেষ থাকে না। গোটা ব্র্রিটিশ শাসন জুড়ে ভারত থেকে যে বিপুল সম্পদ লুঠ করে নিয়ে গেছে ব্র্রিটিশরা, কই বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা তো ব্র্রিটিশ সরকারকে সে সব ফেরত দিতে হবে বলে দাবি করছেন না!
ব্র্রিটিশ শাসনে যে অজস্র ভারতবাসীর উপর ব্র্রিটিশরা অত্যাচার চালিয়েছিল, দেশের মানুষকে অন্যায় ভাবে হত্যা করেছিল, কই তার বিচার তো তাঁরা চাইছেন না বা বলছেন না যে, আজ ভারতের শক্তি বেড়েছে, ফলে আমরা তার প্রতিশোধ নেব।বাস্তবে এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যে পড়ে না।
দেশের মানুষ যদি আজ বিজেপি নেতাদের দিকে আঙুল তুলে বলে, তোমাদের নেতারা আজ নতুন জাতি গঠনের কথা বলছেন, অথচ যে দিন সত্যিই জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশপ্রেমের ভিত্তিতে নতুন জাতি গড়ে উঠছিল, সেই গৌরবময় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিজেপি-আরএসএস এর পূর্বসূরী নেতারা কেউ সেই আন্দোলনে যোগ দেননি তাই শুধু নয়, বরং ব্রিটিশের হয়ে দালালি করেছেন, তাই আপনাদের কোনও অধিকার নেই স্বাধীন ভারতের শাসন ক্ষমতায় বসার, বিজেপি নেতারা কি তা মেনে নেবেন? সরসঙ্ঘ গুরু গোলওয়ালকরের লেখায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর নানা কীর্তিতে, সাভারকরের মুচলেকায় সেই নির্লজ্জ ব্রিটিশ স্তাবকতার ইতিহাস ধরা আছে।বাস্তবে ব্রিটিশের দাসত্ব করার সেই কলঙ্কজনক ইতিহাসকে ঢাকতেই আজ ‘নতুন জাতি’-র তত্ত্ব আওড়াতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে।
প্রধানমন্ত্রী রামমন্দির প্রতিষ্ঠাকে বলেছেন– দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি। বাস্তবে এই দাসত্ব মুক্তির বুলি দিয়ে তিনি আড়াল করতে চাইছেন তাঁদের পুঁজির দাসত্বকে। দেশের কোটি কোটি মানুষের পরিশ্রমের ফসল মুষ্টিমেয় ধনকুবেরের হাতে তুলে দেওয়া এবং বিনিময়ে তাঁদের আশীর্বাদ লাভ করে ক্ষমতার গদিতে বসা এবং তাকে টিকিয়ে রাখাটা কি দাসত্বের মনোভাব নয়? এই মন্দির প্রতিষ্ঠার দ্বারা কি সেই দাসত্ব থেকে বেরোনো যাবে? বাস্তবে, এই রামমন্দির কাণ্ডের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধবংসের মতোই আর একটি কলঙ্কজনক দিন তৈরি হল দেশের ইতিহাসে। শত সহস্র মানুষের সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্যে দিয়ে অনেক ত্রুটি নিয়েও যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি, সংবিধান নির্ধারিত শাসন ব্যবস্থাটি ভারতে কায়েম হয়েছিল, আজ রামরাজত্ব স্থাপনের নাম করে সেই গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হিন্দু মৌলবাদ ভিত্তিক এক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে দেশকে নিয়ে চলেছেন তাঁরা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার যে প্রাথমিক শর্ত– রাষ্ট্র ধর্মের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে, ধর্ম হবে প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত বিষয়, নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্মাচরণের অথবা ধর্ম না মানারও অধিকার প্রতিটি নাগরিকের থাকবে– সেই শর্তটিকেই আজ প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দলবল দু-পায়ে মাড়াচ্ছেন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার কথা তাঁরাই সব চেয়ে উঁচু স্বরে ঘোষণা করেন, রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বিচার ব্যবস্থাকেও তাঁরা গণতন্ত্র হত্যার এই কাজে শামিল করেছেন।ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে প্রশাসনকে একাকার করে দিয়েছেন, মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে খুলে দিয়েছেন।এই সব কিছুই সরকারের গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী।এই ভাবে তাঁরা শ্রমিক-কৃষক সহ সমস্ত স্তরের সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, প্রতিবাদ করার অধিকার, সংগঠন গড়ার অধিকার, আন্দোলন করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন, প্রতিবাদ করলেই চলছে অমানুষিক দমনপীড়ন।এইভাবে দেশে তাঁরা এক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করছেন।এ সব কিছুই আসলে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরির সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া, দেশের মাটিতে গণতান্ত্রিক চেতনার অবশেষটুকুকেও হত্যা করে পুঁজির শাসনকে অবাধ করার চেষ্টা।
ভোটে জেতার তাগিদে প্রধানমন্ত্রী যতই বত্তৃতার ফুলঝুরি ছোটান, শ্রেণিবিভক্ত সমাজে পুঁজিপতি শ্রেণির সেবা আর শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ মানুষের জীবনের উন্নতি– এই দুটো যে একসাথে করা যায় না, এই কথাটা মানুষকে স্পষ্ট করে বুঝতে হবে।এ কথাও মনে রাখা দরকার রামরাজত্ব বা স্বর্গরাজ্য যাই হোক না কেন, তার সাথে যদি সাধারণ মানুষের সুস্থ সুন্দর জীবনের কোনও সম্পর্ক না থাকে, তবে মন্দির-মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে তা আনা সম্ভব নয়।একমাত্র সম্ভব শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদের মাধ্যমে, সমাজতন্ত্র কায়েমের মধ্য দিয়ে। মহান ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস বলেছিলেন, যুগে যুগে মহান মানুষেরা নিপীড়িত অসহায় মানুষের মুক্তির কথা ভেবেছেন, কিন্তু তার যথার্থ পথ দেখাতে না পেরে তাঁরা সবাই মুত্যুর পর স্বর্গে গিয়ে মুক্তির কল্পনা করেছেন। মার্ক্সবাদই প্রথম সমাজতন্ত্রের মধ্য দিয়ে সেই স্বর্গকে এই মাটির পৃথিবীতেই সম্ভব করে তুলেছে। আজ শোষণমুক্ত সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে শ্রমজীবী মানুষকে মার্ক্সবাদ নির্দেশিত পথে সেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষেই সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।